সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বৈদেশিক ঋণে জোর, কমছে ব্যাংক ঋণের চাপ

আপডেটঃ ১২:০২ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪

নিউজ ডেস্কঃ

অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নীতিগত পরিবর্তন এনেছে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ঋণ ৩৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় আনা হয়েছে এবং বৈদেশিক ঋণ ১৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট নিরসনে নেওয়া হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈদেশিক ঋণ বাড়ানোর ফলে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা বর্তমান ডলার সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতি ১১.৩৮ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩.৮০ শতাংশে পৌঁছায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যয় সাশ্রয় ও ব্যাংক ঋণ কমানোর কৌশল গ্রহণ করেছে।

অর্থ বিভাগের বাজেট নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য মোট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বের পরিকল্পনায় বৈদেশিক ঋণ ছিল ৯৫ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জানিয়েছেন, বৈদেশিক ঋণের সুদহার তুলনামূলক কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের উচ্চ সুদের পরিবর্তে এটি একটি কার্যকর সমাধান। ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে, যা বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

রাজস্ব ঘাটতি এবং তারল্য সংকট মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সরকার ব্যাংকসহ সঞ্চয়পত্র ও বন্ড মিলে ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ১৫ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছিল মাত্র ৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ বছর রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বন্দর কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে সরকার আরও জোর দিচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইতোমধ্যে ৬০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদন করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে ৩৭২ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা পূর্বের পরিকল্পনার চেয়ে ৭২ কোটি ডলার বেশি। বিশ্বব্যাংক গ্যাস খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী জানিয়েছেন, বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি এবং সাশ্রয়ী ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

IPCS News : Dhaka :