সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানি সংকটে পাট নিয়ে বিপাকে চাষিরা

আপডেটঃ ১২:২৫ অপরাহ্ণ | জুলাই ২৫, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষা মৌসুম।এর মধ্যে আষাঢ় শেষে শ্রাবণের সপ্তাহ শেষ হলেও এ বছর তেমন বৃষ্টি নাই রাজশাহী অঞ্চলে।যার কারণে পুকুর-খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট পচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের পাট চাষিরা।সূত্রে জানা গেছে, একদিকে পাট কেটে রোপা আমন চাষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা।অপরদিকে পাট চাষ করে এতদিনের ফসল শেষ সময়ে পানির অভাবে নষ্ট হতে বসেছে।অনেকে জমির পাট কেটে সেখানে ধান রোপন করলেও পানি না থাকায় পাট সড়কের পাশে স্তুপ করে রেখে দেয়া হয়েছে।এতে করে পাট পচাতে না পেরে ক্ষতির আশঙ্কা করছে চাষিরা।ফলে রাজশাহী অঞ্চলে কৃষকরা পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা।পাশাপাশি গত বছর দাম কম পাওয়ায় এবার পাট চাষ কমেছে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে।ফলে পাট চাষের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।এরই মধ্যে জমি থেকে পাট সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে কৃষকরা।

কিন্তু পানি সংকটে পাট জাগ দিতে পারছে না অনেকেই।এতে করে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছে তারা।কোথাও কোথাও জায়গা সংকটের কারণে পাট কেটে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।সরেজমিন রাজশাহীর দুর্গাপুরের পালি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের অন্তত শতাধিক কৃষক জমি থেকে পাট কেটে রাস্তার পাশে স্তূপ করে রেখেছে।

ভরা বর্ষায় বিলে পানি নাই।পানি জমলে সেই পাট জাগ দেওয়ার আশা করছে তারা।আবার কেউ কেউ পুকুরে পাট জাগ দিয়ে রেখেছে।পুকুর ফাঁকা হলে পাট জাগ দেবেন এমন আশায়ও বসে আছেন অনেকেই।কিন্তু পানি সংকটের কারণে এবং রোদে কাঁচা পাট এরই মধ্যে নষ্ট হতেও শুরু করেছে বলে জানায় কৃষকরা। 

ওই গ্রামের কৃষক আরমান আলী জানান, এবার তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন।এরই মধ্যে তিন বিঘা জমির পাট কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু পানির ওভাবে এখনো প্রায় আড়াই বিঘা জমির পাট জাগ দিতে পারেননি।ওই পাট গুলো রাস্তার পাশে এবং জমির ধারে আইলে স্তূপ করে রেখেছেন তিনি।তাঁর একটি পুকুরে কিছু পাট জাগ দেওয়া হয়েছে।

সেগুলোর জাগ দেওয়া শেষ হলে আরো কিছু পাট নিয়ে জাগ  দেবেন তিনি।তবে অনেকেই এখনো তাকিয়ে আছেন বৃষ্টির দিকে।বৃষ্টিতে খাল-বিল ডুবে গেলে সেই পানিতে পাট জাগ দেবে কৃষকরা।কৃষক সোলেমান বলেন, ‘সময়মতো পাট পানিতে জাগ দিতে না পারলে নষ্ট হয়ে যাবে।তখন আমরা আরো ক্ষতির মুখে পড়ব।আবার অনেকেই পানির অভাবে পাট কাটতেই পারছেন না।

পাট কেটে সেই জমিতে সাধারণত কৃষকরা ধান চাষ করে।কিন্তু পাট কাটতে না পেরে অনেকেই ধান চাষ করতেও পারছে না।আরেক কৃষক আজিবুর রহমান বলেন, পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না।কোথায় জাগ দেব বুঝতে পারছি না।তাই পাট রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছি।নষ্ট হচ্ছে।কিন্তু কী করব? উপায় তো নাই।তিনি জানান, বিঘাপ্রতি অন্তত ১০ মণ হারে পাটের উৎপাদন হতে পারে।

কিন্তু গতবারের মতো পাটের বাজার থাকলে কৃষকরা এবারও লোকসানের মুখে পড়বে।গতবার শুরুতেই প্রতি মণ ৮০০ টাকা সর্বোচ্চ দরে পাট বিক্রি করেছে কৃষকরা।এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে রাজশাহীতে পাট চাষ হয়েছিল ১৩ হাজার ৬২২ হেক্টর জমিতে।২০২১সালে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে।

এবার ২০২৩ সালে পাট চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় ৮৭৫ হেক্টর কম।রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ জমির পাট কাটা হয়েছে।তাতে ফলন হয়েছে ২ দশমিক ৩৮ টন।এবার পাট চাষ কম হলেও উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।