সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহীতে প্রকাশ্যেই চলছে জামায়াতের নির্বাচনী তৎপরতা

আপডেটঃ ৬:২৯ অপরাহ্ণ | জুলাই ১২, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- দীর্ঘ ১০ বছর ঝিমিয়ে থাকার পর হঠাৎ করেই দেশব্যাপি সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেঠে জামায়াতে ইসলাম।ঢাকার মতিঝিলে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তারা সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করেছিল।এর পর সরকারের নানামুখি চাপ ও নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর তাদের মাঠে নামতে দেখা যায়নি।তবে গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশের অনুমতি পায় তারা।সেখানে তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতা ও আলেমদের মুক্তি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে সমাবেশ।এর পর থেকেই পুলিশ ও সরকারের নমনীয় আচরণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে সংসদীয় আসন গুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা পোস্টার-ফেন্টুন লাগাতে দেখা গেছে।

জামায়াতে ইসলামীর ঘাটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহী।জামায়াতী ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের বাড়ীও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী সাগরপাড়া গ্রামে।তিনি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য দুই উপজেলায় বিভিন্ন বাজার, মোড়েসহ বৈদ্যুতিক পোল ও গাছে গাছে পোস্টার সাটিয়েছেন।

ঈদ পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে।বৃষ্টির মধ্যেও গোদাগাড়ীর গ্রাম্য এলাকায় কাঁদাপানি উপেক্ষা করে নির্বাচনী মাঠ চুষে বেড়িয়েছেন।দীর্ঘ ১০ বছর পর হঠাৎ করেই জামায়াতে ইসলামের তৎপরতা শুরু হওয়ায় আলোচনা শুরু হয়েছে।দলীয় নেতারা বলছেন, মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

তাঁরা জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়েই নির্বাচন করতে পারবেন।এ ছাড়া কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেয়, সেই অনুযায়ী তাঁরা ভোট করবেন।১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।এরপর আর নির্বাচন করেননি।তানোর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় তিনি সভা করেছেন।

এসব সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বক্তব্যও দিয়েছেন।গোদাগাড়ী- তানোর গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে।তানোরের গোল্লাপাড়া বাজারে প্রায় প্রতিটি বিদ্যুতের খুঁটিতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।এই বাজারে আওয়ামী লীগের উপজেলা কার্যালয় রয়েছে।এই কার্যালয়ের সাইনবোর্ডের ঠিক নিচেই জামায়াতের পোস্টার সাঁটানো রয়েছে।

একইভাবে তানোর থানার পাশেও পোস্টার সাঁটানো রয়েছে।প্রত্যন্ত গ্রামেও পোস্টার চোখে পড়েছে।একই চিত্র দেখা গেছে গোদাগাড়ী উপজেলাতেও।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিবুর রহমান প্রায় ২০টি সভা করেছেন।৩ জুলাই বিল্লি বাজারে মঞ্চ করে সভা হয়।সেখানে দলের পাঁচ শতাধিক নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গোদাগাড়ী উপজেলা জামায়াতের আমির নুমায়ুন আলী বলেন, তাঁরা তানোরের মতো সভা করার পরিবেশ এখনো করতে পারেননি।তবে উপজেলায় ৫ হাজার পোস্টার ও ৭০০–৮০০ ফেস্টুন লাগিয়েছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী ড. ওবাইদুল্লাহ বলেন, আগামী নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে হলে আমাদের দল নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছেন।রাজশাহী-১ আসন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান আমাদের দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন।তিনি ইতিমধ্যে তানোরে পাঁচ-ছয়টি ও গোদাগাড়ীতে ১৪টির মতো নির্বাচনী সভা করেছেন।

ড. ওবাইদুল্লাহ আরো বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ ও সভা করায় জনগণ ও নেতাকর্মীদের মাঝে অনেক উচ্ছাস দেখা গেছে।জনগণ মুখিয়ে আছে আমাদের দিকে।অপরদিকে দলীয় নেতাকর্মীরা দলের নির্দেশে সকল ধরনের নির্দেশনা মানতে প্রস্তুত আছে বলে জানান।হঠাৎ করেই মাঠে তৎপরতা এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ আছে কিনা ?

এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের সাথে আমাদের কোন ধরনের আলোচনা হয়নি।বিএনপির সাথে জোট থাকবে কিনা সেটা হাইকমান্ডের বিষয়।পুলিশ সব সময় আমাদের চাপের মধ্যে রাখে এর মধ্যেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয় যাচ্ছি বলে জানান।

এদিকে, রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিমিয় করেছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জামায়াতে ইসলামীর সুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন।পাইলটের সাথে একটি ছবি ভাইরাল হলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।

ঈমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি।তার বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন হত্যা ও রাইফেল কেড়ে নিয়ে পুলিশ পেটানোসহ ৪২টি মামলা ছিল।তিনি রাজশাহী-২ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারেন।এ টার্গেট নিয়ে তিনি ঈদের পর রাজশাহী এসে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে।

★মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড-এর আদর্শ ধারণকারী জামায়াতে ইসলাম★বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিলো জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।বাংলাদেশের একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল।বাংলাদেশে ইসলামী শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন এই দলের উদ্দেশ্য।

দলটি ইকামতে দ্বীন (ধর্ম প্রতিষ্ঠা) নামক মতাদর্শকে মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং একে “রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা” অর্থে দলীয় ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।এটি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর একটি শাখা এবং তা মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড-এর আদর্শ ধারণ করে।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায়ে এই সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং একে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে।

★বাংলাদেশ জামায়াতে সংক্ষেপে:-জামায়াতে ইসলামী চেয়ারম্যান ডা.শফিকুর রহমান [১] মহাসচিব মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রতিষ্ঠা ১৯৭৫; ৪৮ বছর আগে [২] নিষিদ্ধ ১ আগস্ট ২০১৩ পূর্ববর্তী জামায়াতে ইসলামী [৩] জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান [৪] সদর দপ্তর ঢাকা, বাংলাদেশ ছাত্র শাখা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (ছাত্র) বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রী সংস্থা (ছাত্রী) ভাবাদর্শ রক্ষণ শীলতা (বাংলাদেশী) ইসলামবাদ [৫] ইসলামি মৌলবাদ [৬] ইসলামি গণতন্ত্র [৭]

★বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনা ও সংবাদমাধ্যমের পরিমণ্ডলে আলোচ্য সংগঠনটিকে ‘জামায়াত’ বলেও উল্লেখ করা হয়।জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির (পূর্বেকার নাম: ইসলামী ছাত্র সংঘ)-এর একটিকে বোঝাতে ‘জামায়াত-শিবির’ শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়।

জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী, এই দুই সংগঠনের অঙ্গ ও সমমনা সংগঠন সমূহের কর্মী, এদের সব কয়টির সমর্থক গোষ্ঠী-এদের সবাইকে বোঝাতে ‘জামায়াতি’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করেছিল।প্রায়শই জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার পিছনে ভারতীয় আধিপত্যের আশঙ্কা এবং ইসলামী আন্দোলনের স্বার্থকে সামনে আনে।

দলটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল।দলটির অনেক নেতাকর্মী সেসময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল, যারা গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মত যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত।

জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধাসামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নতুন সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।

পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়।এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শরিয়া ভিত্তিক একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যা পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দেশসমূহে লক্ষ করা যায়।

১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য বহুদলীয় জোটে যোগদান করে।এসময় দলটি আওয়ামী লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করে।পরবর্তীতে ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে বিএনপির সাথে মিলিত হয়ে আরো অন্য দুটি দলসহ চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয়লাভ করলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে জামায়াতের দুজন সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন।২০০৮ সাল থেকে দলটির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি আসন লাভ করে।

২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে; ২০১২ সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত জামায়াতের সাবেক সদস্যসহ মোট চার জনকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যু দণ্ড ঘোষণা ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।রায় গুলোর প্রতিবাদে জামায়াত দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস প্রতিবাদ করে যাতে অনেক লোক নিহত হয় ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।