৬ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ৪৩,৮৫৬ হাজার, বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা
আপডেটঃ ২:১৯ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ২৪, ২০২১
নিউজ ডেস্কঃ
সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনার আতুরঘর।আর যানবাহনগুলো ঘাতক-দৈত্য।জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হয়ে সুস্থ দেহে ঘরে ফিরে আসা দায়।সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন কেউ না কেউ আহত হচ্ছে, কেউ বরণ করছে পঙ্গুত্ব, আবার কেউ হারাচ্ছে মূল্যবান জীবন।গত ৬ বছরের পরিসংখ্যান রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো।শুধু এই সময়ে প্রাণ ঝরেছে প্রায় ৪৪ হাজার মানুষের।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে যান হিসেবে মোটরসাইকেল জনপ্রিয় হয়েছে বাংলাদেশে।ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কের বেহাল দশা, অপেশাদার সড়ক, দ্রুতগতি ও কম গতির যান একই সঙ্গে চলাচল করাসহ একাধিক কারণে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বেড়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।যেহেতু মোটরসাইকেল তরুণ প্রজন্মের বাহন, দুর্ঘটনায় তরুণদের মৃত্যুও হচ্ছে বেশি।
এদিকে পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৩ হাজার ২৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।এতে মোট ৩ হাজার ৯৫ জন নিহত হয়েছেন।এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশেরও বেশি।গত ৬ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
সংগঠনটি গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সড়ক দুর্ঘটনায় এই হতাহতের তথ্য তুলে ধরে বলেছেন, তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সড়ক নিরাপদ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা বাস্তবায়নে গাফিলতি রয়েছে।নিরাপদ সড়কের জন্য সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবি জানান হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবের বরাত দিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন।দৈনিক আহত হচ্ছেন দেড় শতাধিক মানুষ।সড়ক দুর্ঘটনার ৬ বছরের চিত্র:-বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেবে দেখা গেছে, গত ২০১৫ সালে ৬ হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৬৪২ জন নিহত এবং ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হয়েছেন।
২০১৬ সালে ৪ হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৫ জন নিহত এবং ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছেন।২০১৭ সালে ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জন নিহত এবং ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছেন।২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন নিহত এবং ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত হয়েছে।
২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছে।২০২০ সালে করোনা সংক্রমণে বছর ব্যাপী লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও ৮ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছেন।
সব মিলিয়ে গত ৬ বছরে ৩১ হাজার ৭৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জন নিহত এবং ৯১ হাজার ৩৫৮ জন আহত হয়েছেন।যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি,’জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সালকে সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করে সদস্য দেশগুলোর সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছিল।
অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সে অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি।সড়কে নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে বাজেট বৃদ্ধি, গবেষণা, সভা-সেমিনার, প্রচারের মাধ্যমে গণসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান হয়।
এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করাসহ দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স চালকদের হাতে দ্রুত তুলে দেওয়ার দাবি জানান হয় সংগঠনটি পক্ষ থেকে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।