৩ বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলে ২৮ ট্রেন দুর্ঘটনা
আপডেটঃ ১:০৩ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:-ট্রেনে সবচেয়ে নিরাপদে ভ্রমণ করা যায়।অনেক আরামদায়কও বটে।ধীরে ধীরে এই স্বস্তির যাত্রাই হয়ে উঠছে অস্বস্তির।বাড়ছে ঝুঁকি, মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।এভাবে শুধু পশ্চিমাঞ্চলেই তিন বছরে ২৮ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে রেল।এতে প্রাণ গেছে ২৫ জনের ও আহত শতাধিক।এসব ঘটেছে অরক্ষিত রেলগেট, দেখভাল করার লোকবল সংকট, রেল লাইনের বিভিন্ন স্থানে পাথর-স্বল্পতা, কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হওয়া, কংক্রিটের স্লিপার ভেঙে যাওয়া, লোহার স্লিপারের ক্লিপ না থাকা, লাইনের নিচের মাটি সরে যাওয়া ছাড়া।তবে এ অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের রেললাইন দেখভালে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণই ট্রেন দূর্ঘটনার অন্যতম কারন।প্রতিযোগিতার মত রেল দুর্ঘটনা বাড়তে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই।এছাড়া মেরামত বা সংস্কারের গাফিলতি ঘনঘন ট্রেন দূর্ঘটনার কারন।এছাড়া রেল লাইনের চলাচলে অনুপোযোগী ইন্জিন,প্রশিক্ষন বিহীন অদক্ষ চালক,মেরামতের প্রশিক্ষনের অভাবও ট্রেন দূর্ঘটনার কারন।
ঢাকার টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর প্রশাসনিক বিভাগের পুরো এলাকা নিয়ে রেলের পশ্চিমাঞ্চল।বৃহত্তম এই রেল অঞ্চলের বিভিন্ন লাইন সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে এবং রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নানা সংকটের বিষয়ে জানা গেছে, দেখা গেছে অনেক জায়গার বেহাল চিত্র।
মাইলের পর মাইল এলাকায় রেলপথে পর্যাপ্ত পাথর নেই, কাঠের স্লিপার গুলো পচে নষ্ট হয়েছে, ফিসপ্লেট কিংবা পিনও নেই, কোথাও কোথাও পিন থাকলেও নড়বড়ে বলা ঢিলা, লাইন থেকে মাটি সরে গেছে, লাইনের মাঝে গজিয়ে উঠা ঘাসও কাটা হয় না দীর্ঘদিন।দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদী স্টেশনের যে রেললাইন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০টি ট্রেন চলাচল করে, সেই লাইনের অবস্থাও নাজুক।
চিলাহাটী থেকে খুলনা, রহনপুর-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট, সিরাজগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইল, লালমনিরহাট ও বেনাপোল অঞ্চল পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলের মধ্যে লোকমানপুর থেকে সাবদারপুর, নওয়াপাড়া থেকে দৌলতপুর, লাহিড়ী মোহনপুর থেকে উল্লাপাড়া, সৈয়দপুর থেকে পার্বতীপুর, মাধনগর থেকে আহসানগঞ্জ, সৈয়দপুর ও পার্বতীপুর স্টেশনের মাঝামাঝি বন্ধ স্টেশন বেলায়চণ্ডীসহ বিভিন্ন এলাকায় চলার সময় ট্রেনে কর্মরত চালক, টিটিই, গার্ডসহ কর্মরতদের পাশাপাশি যাত্রীরাও আতঙ্কে থাকেন।
এসব এলাকার রেললাইন দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় নাগর দোলারমত দুলতে থাকে।অনেক সময় জোরে ঝাকিও লাগে। এতে বগি লাইনচ্যুত কিংবা বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকেন ট্রেনে ভ্রমন কারীরা।এর বাইরে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন থেকে কালুখালী পর্যন্ত রেললাইন আরও ঝুঁকিপূর্ণ।এসব এলাকার রেললাইনে প্রয়োজনের তুলনায় পাথর নেই বললেই চলে।
কাঠের স্লিপার গুলোর বেশির ভাগই ভেঙে-পচে গেছে।কোথাও কোথাও রেললাইনের মাঝখানের মাটি সরে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।এর পরও এসব রেললাইনে চলছে ট্রেন।বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা।ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেললাইনে গত ৩ বছরে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৫ জনের।এ সময়ের মধ্যে ২৮টি ট্রেন দুর্ঘটনার মধ্যে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯টি।
এর মধ্যে রেলের এ বিভাগে অরক্ষিত রেলক্রসিং দিয়ে ট্রেন চলাচলের সময় কোনো বাধা না থাকার কারণে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে ১১ বার।আর মুখোমুখি ট্রেন দুর্ঘটনা ও ইঞ্জিন বিকল হয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়েছে দু’বার।এসব রেলপথের মধ্যে মোট ২২৭টি রেলক্রসিং আছে, এর মধ্যে অরক্ষিত ১৪৫টি।এসব রেলগেটে অধিকাংশ সময় কোনো গেটম্যানও থাকেন না।
আবার পশ্চিমাঞ্চল রেলের বেশ কয়েকটি ট্রেনের বগি ভাঙাচোরা, লক্কড়ঝক্কড় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ বগি, ইন্জিন,নড়বড়ে রেল লাইন,দিয়ে ট্রেন চালু রাখার কারণে প্রায়ই বিভিন্ন স্টেশনে চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়ে পড়ছে ট্রেন।মাঝপথে ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত থামিয়ে রেখে নষ্ট হওয়া ট্রেন মেরামত করে ছাড়া হচ্ছে।
এর ফলে প্রতিদিনই ট্রেন চলছে ২ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে।আবার দুর্ঘটনায় পড়লে সংশ্লিষ্ট ট্রেন উদ্ধার ও রেললাইন সংস্কার করে চলাচল স্বাভাবিক করতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।এতে ট্রেনযাত্রীরা মাঝপথে পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
জানা গেছে, পাকশী বিভাগে ১২শ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে যেসব স্থানে রেললাইন দুর্বল কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ আছে, সেসব এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেন থামিয়ে ইঞ্জিনের স্পিড ১০ কিলোমিটারে নামিয়ে তবেই চালাতে হচ্ছে।এতেও ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হচ্ছে, ঝুঁকি থাকছে বড় দুর্ঘটনার।আবার পশ্চিমাঞ্চল রেলের রেললাইন মেরামত-সংস্কার করতে প্রয়োজন দেড় হাজার লোক।
সেখানে আছেন ১ হাজার।এতে রেললাইন নিয়মিত সংস্কার ও মেরামত হচ্ছে না।এদিকে গাজীপুরের মোহনগঞ্জের দুর্ঘটনা, রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বগি লাইনচ্যুতিসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা নিরাপত্তাহীনতার কারণেই ঘটেছে বলে স্বীকার করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসিম কুমার তালুকদার।
পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিইএন) বীরবল মণ্ডল বলেন, ওয়েম্যান ও গ্যাংম্যানের সংকট আছে।তবে নতুন সার্কুলারে নিয়োগপ্রাপ্তরা কাজে যোগ দিলে রেললাইন সংস্কারে গতি বাড়বে।আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি, রেললাইন গুলো পরিচর্যার মাধ্যমে ঠিক রাখতে।এছাড়া গেট রক্ষার জন্য গেট ম্যানের সংকট রয়েছে।
প্রকল্প গেট কিপারের রাজস্ব করণ প্রক্রিয়া চলছে।আইনি জটিলতা কেটে গেছে।শীঘ্রই রাজস্ব করন হয়ে যাবে।পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ বলেন, দুর্ঘটনা রোধে সার্বক্ষণিক রেললাইনে মোটর ট্রলির মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।অফিসারেরা ট্রলি যোগে সার্বক্ষনিক দেখভাল ও তদারকি করছেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম অসিম কুমার বলেন, রেল দুর্ঘটনায় কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায় কিংবা গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।আমাদের লোকবল সংকট আছে।এ কারণে কিছু রেলক্রসিং অরক্ষিত রয়ে গেছে।গেটম্যান নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।