সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

২০ মে চালু হচ্ছে চাঁপাই-রাজশাজী-ঢাকা ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’

আপডেটঃ ২:৪৪ অপরাহ্ণ | মে ১৬, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- আগামী ২০ মে ‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন।সোমবার (১৫ মে) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আম পরিবহন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।সভায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে গত বছর পাঁচটি ওয়াগন ছিল।এবার ৮-৯টি ওয়াগন থাকবে।প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হতে পারে।আম পরিবহনের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে দুইটি ট্রেন থাকবে।একটি ট্রেন যাবে, আরেকটি আসবে।গত বছর ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে কোনো আম পচার ঘটনা ঘটেনি।এই ট্রেনে আম ছাড়াও বিভিন্ন ফলমূল ও কৃষিপণ্য পাঠাতে পারবেন কৃষক ও উদ্যোক্তারা।তিনি আরও বলেন, গত বছর ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে কেজি প্রতি আম পাঠাতে খরচ হয়েছে এক টাকা ৩১ পয়সা।

আশা করছি এবারও তাই থাকবে।স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে কোচ সংখ্যা বাড়ানো হবে।এছাড়া জনসাধারণকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহনের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে এ বছর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।ট্রেন চালুর আগে ব্যাপক হারে বাজারে বাজারে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হবে।

এছাড়া বিভিন্ন নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আম বুকিংকারীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে আম বুকিং করা হবে।পশ্চিম রেলের মহব্যবস্থাপক অসিম কুমার তালুকদার জানান,চাপাইন থেকে এই হয়ে ঢাকা অভিমুখী ম্যাংগো স্পেশাল ২০ মে উদ্বোধন করা হবে।তবে কাকে দিয়ে উদ্বোধন হবে তার এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি ছেড়ে পথিমধ্যে আমনুরা জংশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ রোড, আড়ানী, আব্দুলপুর, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম, জয়দেবপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে থামবে।ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম ছাড়াও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফলমূল পরিবহন করা যাবে।

পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপ আরো জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে ঢাকাগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি চালু হয় ২০২০ সালের ৫ জুন।ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত চলা ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২ কেজি।এতে রাজস্ব আয় হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৪৫৮ টাকা।দ্বিতীয়বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়।

সেই বছর আম পরিবহন করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৩ কেজি।রাজস্ব আদায় হয় ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ টাকা।সর্বশেষ গত বছর ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৫ কেজি আম পরিবহন করা হয়।এতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৪ টাকা আয় হয়েছিল।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রাজশাহী জেলায় আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে ৭২০ মেট্রিক টন।আম গুলোর মধ্যে রয়েছে-ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, লক্ষ্মণ ভোগ, তোতাপুরি (স্থানীয় জাত)।রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এ বছর বাঘা উপজেলা থেকে বিদেশে আম রপ্তানি করা হবে।

গত বছরের চেয়ে এ বছর আম রপ্তানি বাড়বে।রাজশাহীতে এ বছর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ রয়েছে।গত বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল।এবার বাগান বেড়েছে ১ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে।এ বছর হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহীর বাঘা থেকে ২১ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করা হয়েছে।এসব আম ফিলল্যান্ড, হংকং, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, সুইডেন ও ইতালিতে পাঠানো হয়েছে।এই দেশ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম রপ্তানি হয়েছে ইংল্যান্ডে।চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন।

জানান, সভায় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রন ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে একই খরচে আম পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে।এ বিষয়ে তিন জেলার জেলা প্রশাসকরা ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।এ নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে।প্রাথমিকভাবে এই তিন জেলা থেকে ১০ টাকা কেজি দরে আম পরিবহনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া আম পরিবহন ও বাজারে সতর্ক অবস্থায় থাকবে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট।আমের বাজারে চাঁদাবাজি কঠোরভাবে দমন করা হবে।সড়কে আম পরিবহনে কোনো ধরনের হয়রানি সহ্য করা হবে না।এমনকি কুরিয়ার সার্ভিস বা অন্যান্য পরিবহনে বেশি ভাড়া নিলে বা সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, কুরিয়ার বা অন্যান্য পরিবহনে আম পাঠানোর সময় জেলা থেকে যাতে কোনো ধরনের অবৈধ কিছু যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে সকল আম ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।এছাড়া আম পরিবহন করা যানবাহনে অব্যশই একটি স্টিকার থাকবে।অপরিপক্ব আম বাজারজাত করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পাপিয়া সুলতানা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাসুদ আহমেদ, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাসুম আলী, ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক, কৃষি উদ্যোক্তা মুনজের আলম মানিক, আমচাষি ইসমাইল খান শামীম, কামরুল ইসলামসহ বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে।এ বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়।গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

২০২১ সালে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।