সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

হাঁসের মাংসের জন্যে বিখ্যাত দিনাজপুর বোচাগঞ্জ রাণীর ঘাট ভাবির মোড়

আপডেটঃ ১:৫৪ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

দিনাজপুর:- দিনাজপুর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে যেতে হয় গহিন গ্রামে ভাবির মোড় নামক এলাকায়, সুস্বাদু হাঁসের মাংসের জন্যে বিখ্যাত দিনাজপুর বোচাগঞ্জ রাণীর ঘাট ভাবির মোড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দল বেঁধে মাইক্রো বাস মটর সাইকেল নিয়ে ছুটে আসছেন খাদ্য প্রেমীরা, সেখানে রানীর ঘাট টাঙ্গন নদীর অপর অবস্থিত ব্রিজ রাবার ড্যাম দর্শনার্থীদের জন্য একটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে, নদীর রাবার ড্যামের পাশেই সারিবদ্ধভাবে চোখে পড়ছে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, পাশেই রয়েছে ভারতের কাটা তারের সীমান্ত বেড়া, নদীর ধার দিয়ে আদিম যুগের ন্যায় সেই পুরাতন তাল গাছ, মজুদ করা খর কারীর স্তূপ নদীর স্রোতের টানে মানুষের মন জুড়িয়ে যাচ্ছে, এ যেন এক অসাধারণ অনুভ‚তি অপরূপ দৃশ্য।নদীটির অর্ধেকাংশ এপারে দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার রাণীর ঘাট, ওইপারে অর্ধেকাংশ ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার বৈইরচুনা রাণীর ঘাট, আর এই ব্রিজটি সংযোগ স্থাপন করেছে বৃহত্তর দিনাজপুরকে।

দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা ভাবির মোড়।ভাবির মোড়ের নাম শুনে হয় তো মনে একটু প্রশ্ন জাগতেই পারে।ওই এলাকার প্রকৃত নাম রানীর ঘাট।পাশেই টাঙ্গন নদী ও রাবার ড্যাম।নদী পার হলেই ঠাঁকুরগাওয়ের পীরগঞ্জ সীমান্ত।তবে রানীর ঘাট এখন লোকমুখে পরিচিতি পেয়েছে ভাবির মোড় নামে।এখানে কয়েকজন নারী হোটেল করে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।

স্থানীয় লোকজন তাদের ভাবি বলেই সম্বোধন করে থাকেন।ভাবিদের হাতে তৈরি মজাদার হাঁসের মাংসের রান্নার খবর বিভিন্ন ভাবে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে।লোকমুখে রানীর ঘাট পরিচিতি পায় ভাবির মোড় নামে।দিনাজপুরের ভাবির মোড় বর্তমানে এতোটাই প্রসিদ্ধ যে, এখানে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক হাঁস রান্না করা হয়।মাসে যা ৬ হাজারের বেশি।

এতে মাসে এসব দোকানের গড় বিক্রি ৭০ লাখ টাকা হয়।রানীর ঘাট তথা ভাবির মোড়ে প্রথম দিকে দুই থেকে তিনটি হোটেল থাকলেও বর্তমানে এখানে সাতজন ভাবি সাতটি হোটেল করেন।কুলসুমা, তাসলিমা, মাসতারা, মেরিনা ছাড়াও এখানে রাজিয়া, বেলি, লিপি নামে সাতজন নারী হোটেল দিয়েছেন।যারা লোকমুখে ভাবি বলেই সমাদৃত।

এই নারীরা যেমন পাল্টে দিয়েছেন জায়গার নাম, তেমনি পরিবর্তন করেছেন নিজেদের ভাগ্যও।অনেকেই তাদেরকে দেখে হচ্ছেন অনুপ্রাণিত।কেন এসব গৃহিণী হোটেল খুলে বসলেন আর ওই এলাকা কীভাবে ভাবির মোড় নামে এতোটা পরিচিত পেলো।সে কথাই জানালেন ভাবির মোড়ের অন্যতম ব্যবসায়ী কুলসুমা, কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্বামী বিদেশে থাকতো দেশে ফিরে এসে কৃষিকাজ করতো।

আমরা হোটেল দেওয়ার পর এখন প্রায় ১৫ জন মানুষ আমাদের এখানে কাজ করে, তাদের সংসার চালায়।তারাও এখন আমাদের মতো সুখী।কিন্তু এই সুখের জন্য প্রথম দিকে আমাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।স্বামী জিয়াউর রহমান বিদেশে থাকাকালীন সময় এখানে চা, বিস্কুট বিক্রি করতাম।তারপর একটু একটু করে ভাত রান্না করতাম।

তখন তরকারি থাকত ডিম, টাঙ্গন নদীর মাছ, দেশী মুরগির মাংস।ক্রেতাদের অনুরোধে দুই-চারটা করে হাঁস রান্না করতে লাগলাম।এখন বর্তমানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ টা হাঁসের মাংস বিক্রি হয়।যা থেকে দৈনিক ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি।

কুলসুমা ভাবির হোটেল মালীক, কুলসুমা আরও জানান, স্বামী জিয়াউর রহমান, শ্বশুর মোসলেম আলী, শাশুড়ি রেজিয়া বেগম, ভাসুর সুরুজ্জামানসহ পরিবারের সদস্য ৯ জন।এখন আল্লাহ দিলে হোটেল করে সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতে পারছি।নিরিবিলি পরিবেশে স্বাস্থ্যসম্মত আধুনিক হোটেল নির্মাণ করেছি।শহরের তুলনায় দামও অনেক কম।

ধরুন দলবেঁধে ১২ জন আসলে আমরা দুইজনকে বিনা মূল্যে খাওয়াই শুধু মাত্র ১০ জনের খাবারের দাম নিয়ে থাকি।চাকচিক্য আধুনিক হোটেল থাকলেও ভাবির মোড়ের অন্যান্য হোটেলে যা মূল্য নেয় আমরাও সেই মূল্য নেই।

আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য প্রেমীদের সুবিধা দিয়ে তাদের মন জয় করা যাতে করে তারা নিজ এলাকায় গিয়ে ভাবির মোড়ের কুলসুমা ভাবির হোটেল নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুস্বাদু খাওয়া দাওয়া ও বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে পারে।

ভাবির মোড়ের কথা জানতে পেরে বন্ধুদেরকে নিয়ে জয়পুরহাট থেকে খেতে এসেছেন জাহাঙ্গির আলম।কথা হলে তিনি জানান, ভাবির মোড়ের কথা শুনে অনেক দিন থেকেই আসার পরিকল্পনা করছিলাম।আজকে এখানে বন্ধুদেরকে নিয়ে আসছি।সকাল থেকে ভাবিদের মাংস কাটা, রান্না করা দেখেছি।রান্না খেয়ে অনেক ভালো লাগল।শহরের তুলনায় দামও অনেক কম।

এখানকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশন একদম ঘরোয়া।পাশেই নদী ও রাবার ড্যাম আছে।সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগল।ভাবিদের দেওয়া তথ্য মতে, সাতটি হোটেলে দৈনিক গড়ে দুই শতাধিক হাঁসের মাংস রান্না করা হয়।প্রতি জোড়া হাঁস তারা ক্রয় করেন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত।প্রতিমাসে তাদের প্রায় ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টি হাঁস রান্না করা হয়।

যার বাজার ম‚ল্য প্রায় ৩৬ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা।তাদের দৈনিক গড় বিক্রি প্রায় দুই লাখ টাকারও বেশি।আর প্রতি মাসে তাদের বিক্রি হয় প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা।প্রতিদিন দিনাজপুর ছাড়াও আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে খাদ্য প্রেমীরা ভাবির হোটেলে আসেন হাঁসের মাংসের স্বাদ উপভোগ করতে।

IPCS News : Dhaka : আব্দুস সালাম : দিনাজপুর।