স্বপ্নের মতই স্বপ্নের শহর রাজশাহী
আপডেটঃ ৮:১৪ অপরাহ্ণ | জুলাই ১৭, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- সবুজ কার না ভালো লাগে।গাছ-গাছালি ভরা খোলামেলা মনোরম পরিবেশ, সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।একটু বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো খোলা আকাশ।যেখানে থাকবে না কোনো কোলাহল।যেখানে হারিয়ে যাবে মন।এমন আবহে হারিয়ে যেতে কে না চায় ? এমন পরিবেশে যে কারও মন উতলা হয়ে কাশফুলের মতো ঢেউ খেলবে দখিনা হাওয়ায়।তাইতো কবি লিখেছেন, ও আমার বাংলা মা তোর আকুল করা, রূপের সুধায় হৃদয় আমার যায় জুড়িয়ে, যায় জুড়িয়ে’।গ্রাম-বাংলার এমন প্রতিচ্ছবি কোনো অমূলক চাওয়া নয়।এটাই বাংলার আসল প্রতিচ্ছবি।তবে তা যদি হয় নগরায়নে ?রাজশাহী বাংলাদেশের একটি প্রাচীন শহর।আধুনিক শিক্ষানগরী বলা হয় এই শহরকে।শুধু শিক্ষানগরীই নয়, রাজশাহীকে ডাকা হয় সবুজনগরী, শান্তির নগরী, রেশম নগরী কিংবা সিল্ক সিটি নামে।যেখানে গড়ে উঠেছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পদচারণা, চঞ্চলতা, কোলাহল, গল্প, আনন্দ, উল্লাস, ব্যস্ততা ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠে রাজশাহী।রাজশাহী জেলায় ৩৬৭টি মাদ্রাসা, ১৯৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৯৮৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১০টি কলেজ রয়েছে।দেশের একমাত্র পুলিশ একাডেমি ও পোস্টাল একাডেমিও এ জেলাতেই অবস্থিত।
রয়েছে দৃষ্টিনন্দন রাজশাহী কলেজ।নতুন করে সাজানো এই কলেজ দেখলে মনে হতে পারে ইউরোপের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এছাড়া রয়েছে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ মতিহারের সবুজ চত্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)।রাবির মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বিমোহিত হন বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা।
এশহরে প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এক নজর দেখতে আসেন বহু দর্শনার্থী।বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বর, ইবলিশ চত্বর, আমতলা, শহীদ মিনার, সাবাস বাংলা, গণকবর, রাকসু ভবন, স্টেডিয়াম ও একাডেমিক ভবনসহ প্রতিটি দৃশ্য নজর কাড়বে যে কারও।এছাড়াও এখানে রয়েছে নয়নাভিরাম প্যারিস রোড।
যেখানে দৃষ্টি দিলেই চোখ ফেরানো কঠিন।শিক্ষা-নগরী হিসেবে রাজশাহীর খ্যাতি আছে তা রাজশাহী সম্পর্কে জানলেই বোঝা যায়।রাজশাহীতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।এখানে সরকারি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।আরেকটির অনুমোদন পাওয়ার পর অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।এর পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে দুটি।
এছাড়া রাজশাহী কলেজ প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন কলেজ।মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, টেকনোলজি কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে এই নগরীতে।পদ্মা বিধৌত হযরত শাহজালাল-শাহ মাখদুমের স্মৃতি বিজড়িত রাজশাহী হাজার বছরের প্রাচীন পুন্ড্র বর্ধন জনপদের অংশ হিসেবে পরিচিত ছিল।
উত্তরবঙ্গের অন্যতম এই বড় শহর অনেক আগে থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী।তাইতো বিশ্ব দরবারে গ্রিন সিটি হিসেবে রাজশাহীকে পরিচিত করেছে অনেক আগেই।এরইমধ্যে ইউনেস্কো ঘোষিত পরিচ্ছন্ন ও সবুজ নগরী হিসেবে স্বীকৃত রাজশাহী।পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সবুজে মোড়ানো এই শহরের সাফল্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে পরিকল্পিত নগরায়ন ও বৃক্ষরোপণ।
এছাড়া নগর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও জিরো সয়েল প্রকল্প গ্রহণ অন্যতম।সিটি করপোরেশনের দক্ষ কর্মী ও চৌকস পরিচালনায় শহরের যেকোনো ময়লা-আবর্জনা নিমিষেই পরিষ্কার করা হয়।শহরের অভ্যন্তরে কোথাও ময়লা আবর্জনার স্তূপ সাধারণত চোখে পড়ে না।কোথাও দেখা গেলেও তা নির্ধারিত সময়ের পূর্বে সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয়।
যার ফলে এই ময়লা-আবর্জনা শহরের বাতাসকে দূষিত করতে পারে না।এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, এই শহরকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রক্রিয়া আমাদেরকে ধরে রাখতে হয়েছে।শহরের এই পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়ন তো একদিনে হয় না।
এ গুলো করতে আমাকে অনেক পদ্ধতি বের করতে হয়েছে।অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।এখন এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে।মানুষজন বলছেন যে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বসবাসযোগ্য নগরী রাজশাহী।এটা শুনলে আমার খুব ভালো লাগে।এছাড়া রাস্তাঘাটের উন্নয়ন রাজশাহী শহরকে করেছে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত।
শহরে নামলেই দেখা মিলবে প্রধান সড়ক বিভাজক দিয়ে লাগানো সারি সারি দৃষ্টিনন্দন গাছ।এর ভেতর লাগানো হয়েছে রঙ্গন, কাঠ করবি, চেরি ও এ্যালামুন্ডা।সব নিচে লাগানো হয়েছে সবুজ হেজ।এরপর কাঠ ও বাঁশের আদলে তৈরি করা হয়েছে কনক্রিটের বেড়া।এছাড়া নগরীর এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রম করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।
শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে অবৈধ পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন।সারাদিনের পর কোলাহলমুক্ত রাস্তা পরিষ্কার করতে নামে পরিষ্কার কর্মীরা।সব মিলিয়ে এক দৃষ্টিনন্দন নগরী হয়ে উঠেছে রাজশাহী।যা যে কারো কাছে স্বপ্নের মতো।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।