শহীদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ
আপডেটঃ ১২:২৪ অপরাহ্ণ | মে ২৫, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গায় জেলা পরিষদের মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধারা।২৪মে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ বিক্ষোভ সমাবেশের যৌথভাবে আয়োজন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমান্ড, বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও বাংলাদেশ বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমাণ্ডের সাবেক মহানগর কমাণ্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান।বক্তব্য রাখেন, মহানগর ইউনিট কমান্ডের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মতিউর রহমান, সেক্টরস কমার্ন্ডাস ফোরামের বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খন্দকার।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. সাইদুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কামরুল ইসলাম মিঠু, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযোদ্ধা একাত্তর রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক শাবান আলী দিলীপ প্রমূখ।সঞ্চালনা করেন সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মতিউর রহমান বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় শহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নেই।কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে যে জায়গাটি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে সেখানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এটি মুক্তিযোদ্ধারা কোনদিনও হতে দেবে না।তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে এই জায়গাটি নির্ধারণের জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল নিজেই নেতৃত্বে ছিলেন।অথচ তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়ে সব ভুলে গেছেন লোভের কারণে।এখন তিনি সেই জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্য বলেন, আপনার ক্ষমতা নেই শহিদ মিনারের স্থানে মার্কেট নির্মাণ করার।আমরা সেখানে শহিদ মিনার করেই দেখাবো।
রাজশাহী মহানগর ইউনিট কমান্ডের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদার বলেন, যেখানে কেন্দ্রীয় ভাবে শহিদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেখানে জেনে বুঝে কিভাবে মার্কেট বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের বুঝে আসে না।
১৯৪৮ থেকে ৫২ ভাষা শহীদ, ১৯৭১ সালের ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা বড় কষ্ট পাচ্ছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বর্তমান কর্মকান্ডের জন্য।আমরা সেখানে কন্দ্রেীয় শহীদ মিনার করবো করবো করবো ইনশাল্লাহ।সেক্টরস কমার্ন্ডাস ফোরামের বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খন্দকার বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক মার্কেট নির্মাণ এই সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক।
মীর ইকবাল মুক্তিযোদ্ধা হয়ে কিভাবে শহীদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণের কথা চিন্তা করলেন।অথচ আগের চেয়ারম্যানের সময় তিনিও আন্দোলন করেছিলেন ওই জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য।
তার আশেপাশের লোকেরা মীর ইকবালকে বিপথগামী করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, দু:খের বিষয় এতোদিনেও রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মিত হয়নি।এটা আমাদের ব্যর্থতা।
আমাদের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বে এই স্থানটি নির্ধারণ করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য।সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন খায়রুজ্জামান লিটন।অথচ সেখানে এই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যার মার্কেট নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এটি কোনদিন হতে দেয়া হবে না বলেও উল্লেখ করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।ডা. আব্দুল মান্নান জানান, রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ-এদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস ও স্মৃতিতে সমৃদ্ধ শিক্ষানগরী রাজশাহী।অথচ ঐতিহ্য বহনকারী এমন একটি শহরে শহীদদের স্মরণে কোন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নাই।
২০২০ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল শ্রেণীপেশার মানুষ ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে সোনাদিঘি সংলগ্ন পুরাতন সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সঙ্গে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি ভাষাসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু।ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে ছিলেন তৎকালীন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ রাজশাহীর সর্বস্তরের জনসাধারণ।
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ ও জায়গা নির্ধারণের সেই আন্দোলন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল নিজেও ছিলেন।অথচ রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে মীর ইকবাল লোভের কারণে সব ভুলে গেছেন।
আমরা হুঁশিয়ার দিয়ে বলতে চাই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করতে দেয়া হবে না।সেখানে মার্কেট নির্মাণের অপচেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।