সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

লক্ষ কোটির অধিক বিনিয়োগ করেও রেল সেবা তলানিতে

আপডেটঃ ২:১৪ অপরাহ্ণ | জুন ০২, ২০২৪

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ, ট্র্যাক সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।কিন্তু সেবা বৃদ্ধির পরিবর্তে এখন সংকোচনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।সর্বশেষ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি চলমান সেবা বন্ধের পাশাপাশি আরো বেশকিছু ট্রেন বন্ধের চিন্তাভাবনা করছে রেলওয়ে।অথচ রেলের উন্নয়নে এক দশকে বিনিয়োগ হয়েছে এক কোটি টাকার অধিক।নতুন রেললাইন নির্মাণ, সংস্কার ও সেবা বাড়ানোর বহুবিধ পরিকল্পনার পরও রেলের পিছিয়ে পড়ার চিত্র উঠে আসে বেশকিছু পদক্ষেপে।২০১১ সালে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও এক দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথের অন্যতম প্রতিবন্ধক ‘কালুরঘাট’ রেল সেতু পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ যথাসময়ে নেয়নি রেলওয়ে।পূর্বাঞ্চলের সাতটি রেল সেতু জরাজীর্ণ রেল চলাচলের অনুপোযোগী হলেও ঝুঁকি নিয়ে সেতু গুলে দিয়ে ভারী ইঞ্জিন চলাচলের সুযোগ না থাকলেও চলছে ভারি ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন।

সেতু সংস্কার বা নির্মাণ না করে আমদানি করা হয়েছে অধিকনওজনের ইঞ্জিন।ফলে ইঞ্জিন গুলোর ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়েছে।প্রধানমন্ত্রীর ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প বিবেচনায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতুনতড়িঘড়ি করে ৫০ কোটি টাকায় সংস্কার করা হয়।তবে ভৈরব পুরাতন, কুশিয়ারা, ঘোড়াশাল (আপ), শম্ভুগঞ্জ, ঘুমঘাট ও ছাতক-সিলেট রুটের ২৮ নম্বর সেতু দিয়ে ভারী ইঞ্জিন চলাচল করতে পারে না।

মেরামত সম্পন্ন করতে না পারায় গতি কমিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার গতি দিয়ে এসব ভারী ইঞ্জিন চালানো হয়।বছর বছর নতুন রেলপথ নির্মাণের উদ্বোধন,একাধিক রুটে নতুন  নতুন নামে ট্রেন উদ্বোধন করে ও রেল সেবা শুরু করলেও চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মতন ইঞ্জিন আমদানি করেনি রেল কতৃপক্ষ।

সংকটের মধ্যেও যথাসময়ে জনবল নিয়োগ না দেয়া, সাধারণ ও অত্যাবশ্যকীয় কর্মীদের পদোন্নতি টানা কয়েক বছর ধরে বন্ধ রাখায় দফায় দফায় ট্রেন  বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে রেলওয়ে।উদ্বোধনের পর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন ২০-২২ জোড়া ট্রেনের পরিকল্পনা থাকলেও মাত্র দুটি ট্রেন চলছে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার।

২৯ মে পর্যন্ত চলাচল করা কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনকে শিডিউল বর্ধিত করে স্থায়ীকরণের প্রস্তাব দেয়া হলেও সম্প্রতি সেটি বাতিল করা হয়েছে।এছাড়া চট্টলা ও হাওর এক্সপ্রেসের অবমুক্ত রেক দিয়ে (পিএইচটি টাইপ কোচ) ১৭/৩৪ কম্পোজিশনে ৮১০টি আসন সংবলিত একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হলেও সেটি এখনও বাস্তবায়ন করেনি রেলওয়ে।

রেওয়ে থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী রেলের পরিবহন বিভাগ ও ওয়ার্কিং টাইম টেবিলের ২০১৯ সালে কভিড-১৯ কালীন বন্ধের পর অন্তত ১০৫টি মেইল, এক্সপ্রেস, কমিউটার জাতীয় দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেন বন্ধ (উভয় অঞ্চল) করে দেয় রেলওয়ে।শুধু পূর্বাঞ্চলে ৫৬টি ট্রেন আজও চালু করেনি।

এরপর সাময়িকভাবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩০টি ইঞ্জিন আমদানি হলেও কয়েক বছরের মধ্যে এসব ইঞ্জিনের অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে বসে আছে। এছাড়া আটটি নতুন আমদানি করা ৩০০০ সিরিজের আটটি ইঞ্জিন দীর্ঘদিন ধরে চারটির পরিবর্তে দুটি মোটরে চলাচল করছে।যার কারণে এসব ইঞ্জিনের গতি কমে নেমে এসেছে প্রতি ঘণ্টায় ২০-৩০ কিলোমিটারের মধ্যে।

ফলে নতুন আমদানি ইঞ্জিন গুলো ব্যবহার না হওয়ায় যাত্রীবাহী ট্রেনের খর্বিত শিডিউল চালু রাখতে হিমশিম খাচ্ছে রেলের পরিবহন বিভাগ।বিপুল বিনিয়োগের পরও রেল সেবা সংকোচনের বিষয়ে রেলওয়ে কতৃপক্ষ বলছে, ‘রেলের ইঞ্জি নগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদাতীর্ন।৩০-৪০টি ছাড়া প্রায় সব ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ।সময়মতো ও যথাসময়ে নতুন করে ইঞ্জিন আমদানি হয়নি।

সর্বশেষ আমদানি হওয়া ২০-৩০টি ইঞ্জিনসহ অধিকাংশ পুরনো ইঞ্জিনের ওপর নির্ভর করে রেলের যাত্রীনসেবা পরিচালনা করতে হচ্ছে।এছাড়া, ‘কভিড-১৯ সময়ে কিছু অপ্রচলিত ও অজনপ্রিয় ট্রেনের সেবা কমানো হলেও এখন কোনো ট্রেনের সেবা কমানোর পরিকল্পনা নেই। কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি রেলের রেগুলার শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত নয়।

ঈদের আগে যাত্রীচাপের সময় বাড়তি সুবিধা ও সেবা দিতে হলে পুরনো ইঞ্জিন ও কোচ গুলো ওভারহোলিং, মেরামতসহ নানা কাজ সম্পন্ন করতে হয়।এজন্য কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।আগামী ঈদুল ফিতরের সময়ে স্পেশাল ট্রেন হিসেবে এটি আবার যাত্রী পরিবহন করবে।
রেলের তথ্যমতে, পূর্বাঞ্চল রেলে প্রতিদিন ইঞ্জিনের চাহিদা ১১৬টি।

প্রকৌশল বিভাগ প্রতিদিন শতাধিক (কম বেশি) ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে বা করতে পারবে বলে জানালেও প্রকৃতপক্ষে ইঞ্জিন পাওয়া যায় ৮৫টি।সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রেলপথে বুড়িমারী এক্সপ্রেস, ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন সেবা চালুর পর অন্তত পাঁচটি ইঞ্জিন প্রতিদিন এ তিন ট্রেনের জন্য বরাদ্দ দিতে হয়।

তাছাড়া কয়েক মাস আগের দুর্ঘটনায় চারটি ইঞ্জিন কার্যত অকেজো হয়ে গেছে।দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ইঞ্জিনের মধ্যে ৩০০০ সিরিজের দুটি ইঞ্জিন আগামী এক বছরের মধ্যে মেরামতের আশা থাকলেও বাকি দুটি ইঞ্জিন (২৯০০ ও ২৬০০ সিরিজের ইঞ্জিন) মেরামতের অযোগ্য বলে জানিয়েছে যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ।

সব মিলিয়ে নতুন ট্রেনের জন্য পাঁচটি ইঞ্জিন ও দুর্ঘটনায় চারটি ইঞ্জিনের এ ঘাটতি রেলওয়ের স্বাভাবিক ট্রেন অপারেশন কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।এজন্য আরো কয়েকটি ট্রেন বন্ধ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসবে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মো. আহাসান আলী ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা চরম ইঞ্জিন সংকটে ভুগছি।প্রায় এক দশক আগে ৭০টি ইঞ্জিন ক্রয়ের একটি প্রকল্প দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর বাতিল হয়ে যাওয়ায় রেলওয়ের স্বাভাবিক শিডিউল চালু রাখতে সমস্যা হচ্ছে।

পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, নতুন ট্রেন চালানোর মতো কোনো অবস্থা রেলের নেই।এর পরও নতুন রেলপথ উদ্বোধনের পর প্রকল্প ব্যয়কে জাস্টিফাই করার জন্য অন্তত একটি বা দুটি ট্রেন সেবা চালানো হচ্ছে।

মূলত পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য বরাদ্দ ইঞ্জিন সরিয়ে (চাহিদা ১৬টি হলেও পণ্যবাহী ট্রেনে দেয়া হয় ১০-১২টি) নতুন ট্রেন চালানো হচ্ছে।যার কারণে বর্তমানে পণ্য পরিবহনে ইঞ্জিনের সংখ্যা নেমে এসেছে ছয়-সাতটিতে।আন্তঃনগর ট্রেনের মতো সেবাও মারাত্মক শিডিউল বিপর্যয়ের কবলে পড়ছে প্রতিদিন।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।