রেলওয়ের রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কা
আপডেটঃ ৯:৪৭ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- বাংলাদেশ রেলওয়ের অনলাইন টিকিট ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় টিকিট ইস্যু কার্যক্রম শুরু হয় প্রায় এক দশক আগে।বর্তমানে ৭৭ টি স্টেশনের মাধ্যমে এ সুবিধা দেয়া হয়।এছাড়া সারা দেশের প্রায় পাঁচ শতাধিক স্টেশনে ছাপা টিকিট ও পেপার কার্ড টিকিটের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।কিন্তু দেড় বছর ধরে স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত প্রিন্টেড টিকিট সরবরাহ দিতে পারছে না রেলওয়ে।রেলওয়ের একমাত্র টিকিট প্রিন্টিং প্রেসের ব্যর্থতায় ছাপা টিকিট ছাড়াও রাজস্ব আহরণের বিভিন্ন সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে দেশের বিভিন্ন স্টেশনে।এতে যাত্রী চাহিদা বাড়লেও রেলের রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকেই রেলওয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির টিকিট সরবরাহ নিয়ে সংকট শুরু হয়।
বাধ্য হয়ে বিভিন্ন স্টেশন টিকিট কালেক্টরসহ সহযোগী বাণিজ্যিক বিভাগগুলো ইএফটিসহ বিকল্প মাধ্যমে ভাড়া আদায় করত।কিন্তু সম্প্রতি অপরাপর রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত ছাপা বইও সরবরাহ দিতে না পারায় সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলোয় রাজস্ব আদায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
দ্রুত ছাপা টিকিটের সরবরাহ না হলে বেশকিছু স্টেশনে রাজস্ব আহরণ শূন্যের কোটায় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।মূলত ছাপা টিকিটসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের সংকট শুরু হয় করোনা পরবর্তী সময়ে ট্রেন সার্ভিস চালুর পর থেকে।দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর রেলওয়েতে যাত্রী বৃদ্ধি পেলেও পর্যাপ্ত ছাপা টিকিট সরবরাহ না থাকায় সংকট শুরু হয়।
এর মধ্যে রেলের সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তর থেকে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি দেয়া হলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।তাছাড়া সম্প্রতি জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন গণপরিবহনের ভাড়া বেড়ে গেলেও রেলের ভাড়া বাড়েনি।এ কারণে রেলে যাত্রীচাপ বেড়ে যাওয়ায় টিকিট সংকটে নাজুক অবস্থায় রেলওয়েসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিম রেলওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের মাস্টার বলেন, মেইলসহ বিভিন্ন ট্রেনের ছাপা টিকিট না থাকায় যাত্রীদের দেয়া যাচ্ছে না।বাণিজ্যিক বিভাগকে একাধিকবার চাহিদাপত্র দেয়া হলেও কয়েক মাস পর পর টিকিট দেয়া হয়।এ কারণে বিভিন্ন ট্রেনে টিকিটবিহীন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।
এতে রেলের রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।একই অভিযোগ করেছেন রেলওয়ের টিটিই, টিসিসহ বুকিং ক্লার্করাও।তাদের দাবি, টিসি রিপোর্ট বুক, মানি ভ্যালু বুক ও ইএফটি (এক্সট্রা ফেয়ার টিকিট) বুক না থাকায় বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী যাত্রীদের জরিমানাসহ টিকিট দেয়াসহ, উত্তোলিত রাজস্ব রেলের কোষাগারে জমা দেয়া যাচ্ছে না।
এক্ষেত্রে প্রিন্টিং প্রেসের সঙ্গে জড়িতরা সমভাবে টিকিট সরবরাহ না করে বিশেষ স্টেশনে টিকিট সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ তাদের।এ সংক্রান্ত নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বরাবর পশ্চিমাঞ্চল ওপূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে দ্রুত সময়ে বিভিন্ন স্টেশনের অনুকূলে টিকিট সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়।
ওই চিঠিতে দ্বিতীয় মেইল, দ্বিতীয় সাধারণ, কমিউটার ও আন্তঃনগর ট্রেনের পিসি (পেপার কার্ড টিকিট) টিকিটের চাহিদাপত্র প্রেরণ সত্ত্বেও হাতে গোনা কয়েকটি স্টেশনে আংশিক টিকিট সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।অধিকাংশ স্টেশনে টিকিট সরবরাহ না করায় স্টেশন গুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি ছাড়াও বিনা টিকিটে যাত্রী ভ্রমণের সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি করা হয়।
এভাবে ২০২২ সালে অন্তত তিন দফায় প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বরাবরে তাগাদা পত্র দেয়া হলেও সংকট নিরসন হয়নি।এর মধ্যে ঢাকা, আখাউড়া, ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনে মেইল ট্রেনের কোনো টিকিট মজুদ নেই।অন্যদিকে মেথিকান্দা, বারহাট্টা, হরষপুর, মানিকখালী স্টেশনের আন্তঃনগর ট্রেনের ছাপানো টিকিট শেষ হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আখাউড়া, গেন্ডারিয়া, নারায়ণগঞ্জ স্টেশনেও মেইল ট্রেনের কার্ড পেপার না থাকায় রাজস্ব আহরণ অস্বাভাবিক কমে গেছে বলে দাবি করা হয়।আন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ক্ষেত্রেও একই সংকট রয়েছে।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ সেকশনের গোলা বাড়ী,নিজাম পুর,চব্বিশ নগর, ললিত নগর,সিতলাই,রাজশাহী সেকশনের -আড়ানী,লোকমান পুর,সরদহ রোড,আজিমপুর ,নাটোর সেকশনের-আত্রাই,ফুলবাড়ীসহ বহু স্টেশনেও মেইল ট্রেনের কার্ড পেপার না থাকায় রাজস্ব আহরণ অস্বাভাবিক কমে গেছে বলে দাবি করা হয়।
টিকিট সরবরাহ দিতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে টিকিট প্রিন্টিং প্রেসের কর্মকর্তাদের দাবি, দীর্ঘদিনের পুরনো মেশিনারিজের কারণে বাড়তি টিকিট ছাপাতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।তাছাড়া জনবল ঘাটতি থাকার কারণেও যথাসময়ে টিকিট প্রস্তুত করতে বেগ পেতে হচ্ছে।আগামী তিন মাসের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিএসএস) ফরিদ আহমেদ বলেন, রেলের টিকিটের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।তবে সেই অনুপাতে প্রিন্টিং প্রেসের জনবল বাড়ছে না।তাছাড়া ২০-২৫ বছর আগে দেশের একমাত্র প্রিন্টিং প্রেসের যন্ত্রপাতিগুলো বিএমআরই করা হয়েছিল।
এসব কারণে চাহিদা অনুপাতে টিকিটসহ আনুষঙ্গিক উপকরণ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।সংকট উত্তরণে ওভারটাইমসহ একাধিক উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে।অচিরেই টিকিট সরবরাহ কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।