সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহী কারাগারে মহিউদ্দিন-জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের সময় যা ঘটেছিল

আপডেটঃ ২:৪৫ অপরাহ্ণ | আগস্ট ০৬, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- ফাঁসি কার্যকরের সময় সেখানে যারা থাকেন তাদেরকে অনেক শক্ত মনের অধিকারী হতে হয়, তা না হলে এমন দৃশ্য দেখার পর যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।যেমনটি ঘটেছি গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে।ওই রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।দুই আসামিকে ঠিক ১০টা বাজার ৫ মিনিট আগে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসা হয়।কনডম সেলে তাদের আগেই পড়ানো হয় মোটা কাপড়ের জম টুপি।হুইল চেয়ারে বসিয়ে শক্তকরে বেঁধে আনা হয় তাদের।ফাঁসির এই কার্যক্রম শেষ করতে মোট সময় লাগে ৬ মিনিট।এর আগে জোড়া ফাঁসির অভিজ্ঞতা ছিল না সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিলের।

তিনি বিভিন্ন সময় তিনজন আসামির ফাঁসি কার্যকরে দায়িত্ব পালন করেছেন।কিন্তু একই মঞ্চে একসঙ্গে দুই আসামির ফাঁসির ঘটনা গত বৃহস্পতিবার রাতেই প্রথম।জানা যায়, সন্ধ্যার পর থেকেই কারাবিধি অনুযায়ী ওই দিন সব প্রস্তুতি শেষ হয়।আসামীদের মঞ্জে তোলার পর প্রধান জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চে হাতল ধরিয়ে নির্দেশের অপেক্ষায় তাকিয়ে সিনিয়র জেলা সুপারের দিকে।

ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১০টা বেজে ১ মিনিট ছুঁতেই সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল হাতে থাকা কালো রুমালটি নিচে ফেলে দেন।সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ আলমগীর টান দেন হাতলে।খুলে যায় পাটাতন।দুই আসামি নিমিষেই মঞ্চ থেকে ঝুলে যান নিচে।দুজনেরই শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে বারবার।শোনা যায় কেবল গোঙানির শব্দ।

ওই সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল।হৃদরোগের সমস্যা থাকায় তিনি এ দৃশ্য দেখতে পারছিলেন না।পরে উপস্থিত কর্মকর্তা দলের চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত অন্য স্থানে নিয়ে চিকিৎসা দেন।গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামি মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ফাঁসি কার্যকরের সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ১৬ সদস্যের একটি টিম।ফাঁসি কার্যকর করা হবে রাত ১০টা ১ মিনিটে। ফাঁসি কার্যকরের ৬ মিনিট আগে অর্থাৎ রাত ৯টা বেজে ৫৫ মিনিট। অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ১৫ বছর ধরে কারাগারে থাকা ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কনডেমড সেলের ১০ নম্বরে ছিলেন মহিউদ্দিন এবং ১৪ নম্বর কনডেম সেলে ছিলেন জাহাঙ্গীর।কারারক্ষীর সহায়তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জল্লাদরা তাদের সেল থেকে নিয়ে আসেন।এ সময় মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরকে দুটি আলাদা হুইল চেয়ারে বসিয়ে ধীরে ধীরে ফাঁসির মঞ্চের দিকে আনা হয়।সেল থেকে বের করার আগেই তাদের মাথায় কালো মোটা কাপড়ের জম টুপি পরানো হয়েছিল, যাতে আশপাশ তারা দেখতে না পারেন।

হুইল চেয়ারে বসানোর সঙ্গে সঙ্গেই নরম কিন্তু শক্ত এমন রশি দিয়ে বাঁধা হয় হাত ও পা।ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত তাদের হাত বাঁধা থাকে সামনের দিকে।স্বল্প দূরত্বের এই পথে আসার সময় তাদের আস্তে আস্তে করে দোয়া পড়তে শোনা যায়।রাত তখন ৯টা বেজে ৫৭ মিনিট।জল্লাদরা হুইলচেয়ার ছেড়ে তাদের দুজনকে ফাঁসির মঞ্চে তোলেন।

এরপর হুক রয়েছে এমন দুটি পাটাতনের ওপর দাঁড় করায় সোজাভাবে।হাত দুটি সামনে থেকে পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাপ লাগানো হয়।এ সময় মহিউদ্দিনের বামে দাঁড় করানো হয় জাহাঙ্গীরকে।মাথায় জম টুপির ওপর দিয়ে দুজনের গলায় পরানো হয় রাশিয়া থেকে নিয়ে আসা বিশেষ ধরনের ফাঁসির দড়ি।সময় তখন ৯টা ৫৯ মিনিট।

দেড় মিনিটেরও কিছু বেশি সময় একেবারে পিনপতন নীরবতা।চারপাশে যেন কেউ নেই। অবশ্য চারপাশ তখন উঁচু করে কালো পর্দায় ঢাকা।হুইল চেয়ারে বসিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসার কারণ যদি আসামি ছোটাছুটি করে কিংবা ছটফট করে, সে সুযোগ দেওয়া হয় না।সেলের বাইরে সে কিছুই দেখতেও পাবে না, হাত-পাও বাঁধা থাকবে।

রাত ১০টা বেজে ৩০ সেকেন্ড।কর্মকর্তারা মঞ্চের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল হাতে কালো রুমাল নিয়ে তা ফেলতে উদ্যত।ফাঁসির মঞ্চের নিচে এক পাশে তখন সাতজন জল্লাদ অবস্থান নিয়েছে।আর মূল হাতল ধরে নির্দেশের অপেক্ষা করছে একজন, যার নাম আলমগীর।

ফাঁসির মঞ্চে তখন মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না।যেন সময় থেমে গেছে।দুজনের একজন অর্থাৎ জাহাঙ্গীর তখনও দোয়া পড়ছেন।ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় তখন রাত ১০টা বেজে ১ মিনিট।সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল হাতে থাকা কালো রুমালটি নিচে ফেলে দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ আলমগীর টান দিল হাতলে।

খুলে গেল পাটাতন।দুই আসামি নিমিষেই মঞ্চ থেকে ঝুলে গেল নিচে। দজনেরই শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠছে বারবার।রয়েছে কিছুটা গোঙানির শব্দও।তখনই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল।হৃদরোগের সমস্যা থাকায় তিনি এ দৃশ্য দেখতে পারছিলেন না।পরে উপস্থিত কর্মকর্তা দলের চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত অন্য স্থানে নিয়ে চিকিৎসা দেন।

সিনিয়র জেল সুপারের অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি ওই রাতে নিশ্চিত করেন ডিআইজি প্রিজন্স কামাল হোসেন।তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সিনিয়র জেল সুপার সাহেব মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।ওনার প্রেশার উঠে গেছে।সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল জানান, আমার আগে থেকেই প্রেশারের সমস্যা, তাই আমি এডিএমকে বলেছিলাম, কালো রুমাল হাত থেকে ফেলার পর আমি আর সেখানে থাকব না।

তিনি অনুমতি দিয়েছেন।আমি রুমাল ফেলেই দূরে সরে এসেছিলাম।আর আমার চাকরি জীবনে এবারই প্রথম জোড়া ফাঁসি কার্যকর দেখলাম।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।