সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহী এলাকায় নুইয়ে পড়া নিচু জমির ধান কাটতে, উঁচু জমিতে সোজা করতে ব্যাস্ত কৃষক

আপডেটঃ ১:২৬ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ২৩, ২০২২

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী : রাজশাহীর ওপর দিয়ে বৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায় গত মঙ্গলবার রাতে।এই ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার প্রায় অর্ধেক বোরো ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে।এলাকায় আরো শিলা বৃষ্টির আশংখ্যায় নীচু জমির আধাঁপাকা বোরো ধান কেটে নিচ্ছেন দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা।অন্যদিকে উঁচু জমিতে নুইয়ে পড়া ধানগাছ ‘লজিং আপ’ পদ্ধতি সোজা করছে এলাকার কিছু কৃষক।কারন ধানগাছগুলো নিজে থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারবেনা।তবে  লজিং আপ পদ্ধতিতে নুইয়েপড়া ধানগাছকে খেতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায় বলছেন কৃষিকর্মকর্তারা।তবে নীচু জমির ধানগাছ সোজা করার চেয়ে ধান কাটাই লাভ জনক।শুক্রবার দুপুরে তানোর বিলকুমারী বিলের ধারের গ্রাম তালন্দ, গোকুল, ধানতৈড়, কামারগাঁসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব গ্রামের নিচু জমির ধান গুলো আধাঁ পাকা অবস্থায় ঝড়ে জমির সাথে শুয়ে পড়েছে।

একদিকে নিচু জমি হওয়ায় বিলের পানি বৃদ্ধি পেলে ডুবে যাওয়ায় শংখ্যা অন্যদিকে শিলা বৃষ্টির আশংখ্যায় কৃষকরা দল বেধেঁ জমির ওই আধাঁপাকা ধান গুলো কেটে নিচ্ছেন।কৃষকরা বলছেন, যেকোন সময় শিলা বৃষ্টি হলে জমির ধানগুলো পুরোটাই নষ্ট হযে যেতে পারে।এছাড়াও বিলের পানি বৃদ্ধি পেলে ধান গুলো ডুবে যেতে পারে তাই যেটুকু পেকেছে তাতেই পুষিয়ে যাবে বলেও জানান কৃষকরা।

কৃষকরা আরো বলছেন, সুইয়ে পড়া ধান এখনি না কাটলে ক্ষতির সম্বাবনা রয়েছে তাই তারা বাধ্য হয়েই আধাঁপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন।কৃষি সম্প্রসারন অফিস সুত্রে জানা গেছে, আধাঁপাকা ধান কেটে নিলে কৃষকদের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না বরং শিলা বৃষ্টি ও বিলের পানি বৃদ্ধি পেলে ধান ডুবে কৃষকরা বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

আধাপাকা ধান কেটে নিলেও ফলনের খুব একটা প্রভাব পড়বেনা বলেও জানান কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা।সব মিলিয়ে বিল কুমারী বিলসহ অনান্য বিলের ও ডোবা জমির ধানগুলো ঘরে তুলতে কৃষকরা ব্যস্থ সময় পার করছেন।গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, লজিং আপ পদ্ধতিটি অত্যন্ত সোজা। 

কৃষকেরা নিজে থেকে ভাবেন না, তাই করেন না।তিনি বলেন, চাকরিজীবনের প্রথমেই তাঁদের লজিং আপের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।চার-পাঁচটা ধানের গোছা একসঙ্গে করে পাতা দিয়ে বেঁধে দিলেই তা দাঁড়িয়ে যায়।আর বাতাসে হেলে পড়ে না।সহজ হলেও কৃষকেরা এই কাজ করতে চান না।তিনি সারা দিনে ২০ জন কৃষকের জমিতে গিয়ে এ পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন।

ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন,যেহেতু ধানগাছগুলো নিজে থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি।এই গাছগুলোর ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।তবে এই বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করতে জানলে সব ধানগাছকেই খেতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায়।শুক্রবার সারা দিন গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকারকে কৃষকদের এ পদ্ধতি শেখাতে দেখা যায়।

সারা দিনে ২০ জন কৃষকের জমিতে গিয়ে পড়ে যাওয়া ধানগাছ সোজা করে দেওয়ার পদ্ধতি তিনি শিখিয়েছেন।এ পদ্ধতি জানার পরে একজন কৃষক মাত্র দুজন শ্রমিক নিয়েই প্রায় এক বিঘা জমির ধানগাছ সোজা করে ফেলছেন।রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর ওপর দিয়ে মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাতে ১৮ দশমিক ৫২ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে।

সেই সঙ্গে ১৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।মৌসুমে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।ঝোড়ো হাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ এলাকায় অর্ধেকের বেশি জমির বোরো ধান নুইয়ে পড়েছে।রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬৫ হাজার ৮৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৬৫ হেক্টর জমির ধান পেকেছে।

১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ধানের শিষে চাল এসেছে।৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধানের শিষের দানা এখনো শক্ত হয়নি।২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান ফুল অবস্থায় আছে।২২ হাজার হেক্টর জমির ধান থোড় এবং থোড়ের আগের অবস্থায় রয়েছে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান।২৫০ হেক্টর জমির ধান কুশি অবস্থায় রয়েছে।

এ অবস্থায় ঝোড়ো হাওয়ায় বেশির ভাগ জমির ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে।গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর ব্লকে ৮৯০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে।অন্যান্য উপজেলার মতো সেখানেও ঝড়বৃষ্টিতে ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে।পড়া ধান গত দুই দিনে আর উঠতে পারেনি।এ অবস্থা দেখে অতনু সরকার মাঠে গিয়ে কৃষকদের ধানগাছ খাড়া করে দেওয়ার প্রযুক্তি বলে দিচ্ছেন।

উপজেলার শেখেরমারি মাঠে গিয়ে পাওয়া যায় কৃষক রফিকুল ইসলামকে।তাঁর এক বিঘা জমিতে বোরো ধান আছে।জমির অর্ধেকের বেশি ধান পড়ে গেছে।গত দুই দিনে এ ধান উঠে দাঁড়াতে পারেনি।অতনু সরকারের পরামর্শে তিনি দুজন শ্রমিক নিয়ে তার পুরো জমির ধানগাছ তুলে দিয়েছেন।তবে কাজটা সহজ, কিন্তু আগে মাথায় আসেনি।

উপজেলার পালপুর গ্রামের কৃষক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, তাঁর তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান আছে।এর মধ্যে এক বিঘা জমির ধান সব পড়ে গেছে।তিনিও এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব ধানগাছ তুলে দিয়েছেন।তিনি বলেন, দুজন শ্রমিকের মজুরি ৭০০ টাকা।তা এক মণ ধানের দামের চেয়েও কম।কিন্তু তুলে না দিলে তার পড়ে যাওয়া ধানের ফলন একেবারে কমে যেত।

ফুলবাড়ী মাঠের কৃষক মনিরুল ইসলাম জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি।এর মধ্যে দুই বিঘা জমির ধান ঝড়ে নুইয়ে পড়েছে।লজিং আপ পদ্ধতি শিখে এক দিনেই চারজন শ্রমিক নিয়ে দুই বিঘা জমির ধানগাছ সোজা করেছেন তিনি।

মনিরুল বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে বাকি ধানগাছ তুলে সোজা করে দেবেন।না হলে ধানের ফলন অনেকটা কমে যাবে।তিনি বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ না পেলে মাঠে ধান এ অবস্থাতেই পড়ে থাকত।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।