রবিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহী অঞ্চলে তীব্র তাপাদহে ঝরছে আমের গুটি

আপডেটঃ ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ | এপ্রিল ১০, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:-রাজশাহীতে টানা কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে।দিনের বেলা রোদের তাপে ঘর থেকে যেন বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে।ঘর থেকে বের হলেই সূর্যের তীব্র তাপ গায়ে আগুনের হলকার মত শরীরে বিঁধছে।তীব্র তাপপ্রবাহে বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর মাঠঘাট-জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে।বিলগুলো খাঁ খাঁ করছে পানির অভাবে।পানি সঙ্কটে চরম প্রভাব পড়েছে আমের গাছেও।এরই মধ্যে টানা তাপপ্রবাহে অধিকাংশ গাছ থেকে আমের কুড়ি ঝরে পড়ছে অন্তত ৩০ ভাগ।

কৃষি বিভাগ বলছে, গরমে রাজশাহীর আমগাছগুলোতে গড়ে ২০ ভাগ কুড়ি ঝরে পড়েছে।এই অবস্থা আর ১০ দিন টানা চলতে থাকলে রাজশাহীর আমের মুকুল অনুযায়ী এবার ফলন অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসবে।এমনিতেই এবার গতবারের চেয়ে গাছে আমের মুকুল অনেক কম ছিল।ফলে আমের কুড়িও এসেছে কম।আবার মুকুল আসার পর থেকে তেমন বৃষ্টি হয়নি। মাঝে তিন দিন মিলে মাত্র কয়েক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।আবার কোথাও হয়নি।পাশাপাশি বাতাসের আর্দ্রতা হ্রাস পেয়েছে।মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে।ফলে আমের গুটি শুকিয়ে যাচ্ছে।পানি সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও আমের গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না।চাষিরা জানান, রোদের কারণে আমের গুটি ঝরে পড়ে।কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ও তাপপ্রবাহে অনেক বাগানে ২০ থেকে ৩০ ভাগ গুটি ঝরে গেছে।রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ৬ মার্চ রাতে রাজশাহীতে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে।এর আগে ১৯ মার্চ রাত ২টা থেকে পরের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে মাত্র ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।এর আগে ৪ মার্চ ১ মিলিমিটার এবং পরের দিন ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।এরপর আর কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।এর মধ্যে রোদের তীব্রতা বেড়েছে ব্যাপক হারে।ফলে আমের গুটি পুড়ে বা ডগা সরে আম ঝরে যাচ্ছে।

জেলার পুঠিয়ার নামাজ গ্রামের আমচাষি আকবর হোসেন বলেন, আমার ৬টি বাগানে ৯০টি আমের বড় গাছ রয়েছে।প্রতিটি গাছে এবার গড়ে অর্ধেক মুকুল এসেছিল।ফলে গতবারের চেয়ে আমের গুটিও আসে প্রায় অর্ধেক।কিন্তু রোদ আর গরমে সেই গুটিও ব্যাপক হারে ঝরে পড়ছে।গাছের গড়ায় পানি সেচ দিয়েও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না।সব মিলে এ বছর আমের উৎপাদন অনেক কম হবে।পবার আরেক আমচাষি মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমের জন্য এ সময়ে বৃষ্টি খুব প্রয়োজন।বৃষ্টি হলে গুটি ঝরা বন্ধ হয়ে যাবে।কিন্তু সেই বৃষ্টির দেখা নাই।এতে করে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গুটি ঝরছে।আমের ফলনও গতবারের চেয়ে এবার অর্ধেক হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার আম কম হবে।বিগত বছরের তুলনায় এবার আমের মুকুলও কম এসেছে।বর্তমানে তীব্র দাবদাহ চলছে।বৃষ্টিও নেই।এ কারণে গুটি ঝরে যাচ্ছে।তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় আম গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে।তাহলে গুটি ঝরা কিছুটা হলেও রোধ হবে।রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়ছে।এ কারণে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এটি গত বছরের চেয়ে ২৪ হেক্টর বেশি। চলতি বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন ধরা হয়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনক হারে আমের গুটি ঝরে পড়ায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা আমচাষিদের।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।