রাজশাহীর বাগমারায় পুলিশ বেষ্ঠনিতে পাশাপাশি আ.লীগের দুই গ্রুপের সমাবেশ
আপডেটঃ ৫:৪৫ অপরাহ্ণ | জুলাই ০৩, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে রাস্তার একপাশে শহীদ মিনার, অন্যপাশে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো।শহীদ মিনারে সমাবেশ করছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।আর জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশ করছেন এই আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী চার নেতা।এক সমাবেশের মাইক অন্য সমাবেশের দিকে ঘোরানো।একপক্ষ বক্তব্য দিচ্ছে অন্যপক্ষের বিপক্ষে।অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মাঝে অবস্থান নেন অর্ধশত পুলিশ সদস্য।১লা জুলাই শনিবার বাগমারার ভবানীগঞ্জে এভাবেই সমাবেশ করেন আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা।অবশ্য ঈদ পুনর্মিলনীর নামে দুই অংশেরই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল ‘উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড’ এর ব্যানারে।
এমপি এনামুলের অনুসারীদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন একই সংগঠনের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফখরুদ্দীন মুহম্মদ আগা খাঁন।আর মপি বিরোধী’ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন একই সংগঠনের উপজেলা সভাপতি জিয়াউদ্দিন টিপু।তবে এমপি বিরোধী’ সমাবেশে জেলা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
এছাড়া এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম এবং স্বে”ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি পিএম সফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
এছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সামাদ ও আলফোর রহমান, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পিনু মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য দেন।পরিচালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এসএম মাহাবুবুর রহমান।
অন্যদিকে এমপির অনুসারীদের সমাবেশে বক্তব্য দেন ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মালেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও এমপি এনামুলের ব্যক্তিগত সহকারী আসাদুজ্জামান আসাদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আরা বেবী প্রমুখ।
এটি পরিচালনা করেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আজিজ লিটন।এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ব্যানারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি এনামুল হকের নাম লেখা ছিল।তবে তিনি আসেননি।সম্মানিত অতিথি হিসেবে ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকারের নাম লেখা থাকলেও তিনিও আসেননি।
এমপির পক্ষের এই সমাবেশে প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন।অন্যদিকে পাশেই তাঁর বিপক্ষের সমাবেশে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ অংশ নেন।এমপির বিপক্ষের সমাবেশে মনোনয়ন প্রত্যাশী চার নেতা ঘোষণা দেন, তারা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।চারজনের মধ্যে যিনি মনোনয়ন পাবেন, তার পক্ষে সবাই কাজ করবেন।তবে এবার তারা এমপি এনামুল হককে প্রতিহত করবেন।
সমাবেশে মনোনয়নপ্রত্যাশী পিএম সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি এনামুল হক বগুড়া পলিটেকনিকে ছাত্রশিবির করতেন।আপনি এমপি হবার পরে পিএস করেছিলেন বাগমারার দুর্ধর্ষ জেএমবি সাবেক শিবির নেতা আলতাফ মোল্লাকে।জাকিরুল ইসলাম সান্টু আপনার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করায় তাকে বহিষ্কার করেছিলেন।এবার আবুল কালাম আজাদ প্রার্থী হবার পরে তাকেও বহিষ্কার করেছিলেন।
বাগমারা আওয়ামী লীগ কি আপনার বাপের সম্পত্তি ? আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।আপনি সাবধান হয়ে যান।আপনি যেখানে যেখানে সমাবেশ ডাকবেন, সেখানে সেখানে আমরাও সমাবেশ ডাকব।মনোনয়ন প্রত্যাশী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আজকে সর্বহারা-বাংলা ভাই ছাড়া এমপি এনামুল হকের সঙ্গে কেউ নাই।আজকে শহীদ মিনারে বক্তব্য দেন-তাহেরপুরের মেয়র নাকি সন্ত্রাসী।
তাহেরপুরের মেয়র তিন তিনবার ভোটে নির্বাচিত মেয়র।আর ভবানীগঞ্জের মেয়র এখানে এক হাজার ভোটের মালিক ছিলেন না।আমরা মেয়র বানিয়েছি।অতএব, যা তা মন্তব্য করবেন না।দাঁতভাঙা জবাব দেব এবং জিহ্বা কেটে নেব ইনশাল্লাহ।আজকে বাগমারার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। হটাও এনামুল, বাঁচাও বাগমারা।আজকে প্রতিরোধ শুরু হলো।
আজ খেলা শুরু হলো।এই খেলা বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর খেলা।’সম্প্রতি এমপি এনামুল হকের এক তরুণীর সঙ্গে ভিডিওকলের অশ্লীল আলাপন ফাঁস হয় নেট দুনিয়ায়।এ নিয়ে এমপির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে কঠোর সমালোচনা করেন পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ।এছাড়া সমাবেশের অন্য বক্তারাও এমপির সমালোচনা করে তাকে প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
তারা অভিযোগ করেন, ১৫ বছর ধরে এমপি থেকে এনামুল হক নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন।এই সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের সংগঠন এই পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছেন।এটি কোন রাজনৈতিক সমাবেশ হলে আমি আসতাম না।এখানে পক্ষপাতমূলক ঘটনা ঘটবে জানলে হয়তো আমি আসতাম না।
আয়োজন হলে, আয়োজকরা দুঃখ-কষ্টের কথা বলে, সে জন্যই হয়তো এখানে সবাই কথা বললেন।তবে আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবার সঠিক সিদ্ধান্তটাই দেবেন।প্রধানমন্ত্রী অলরেডি কাজ শুরু করেছেন সঠিক মানুষকে খুঁজে পেতে।তিনি জানান, এই সমাবেশে আসার আগে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে তিনি ফোন করেছিলেন।
অনিল কুমার সরকার অসতে’ বলে আসতে চাননি।দারা বলেন, ‘উনি এই উপজেলার চেয়ারম্যান তিনি এই সমাবেশে না আসতেই পারেন।তিনি আমাকে বললেন সাবধানে যান, ওখানে নাকি মারামারি হবে।আমি বললাম, দেখি কে মারে!
অন্যদিকে এমপি এনামুল হকের অনুসারীদের সমাবেশে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আরা বেবী বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের হাত ধরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বাগমারার মানুষ ভুলে যাননি। আপনারা যতই ষড়যন্ত্র করেন, সেটি কখনোই সফল হবে না।উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মতিউর রহমান টুকু বলেন, বাগমারায় অন্য একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে।
তা না হলে দেখতে পারতেন এই অনুষ্ঠানে প্রচুর মহিলারা আসত।অনুষ্ঠানকে স্বার্থক করতো।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবুল বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বাগমারার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে এখানে এসেছেন।তাই তিনি বিক্ষোভ মিছিল বের করার ঘোষণা দেন।
এরপর তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহীদ মিনার থেকে চলে যান।মিছিল থেকে জেলার সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া হয়।তারা চলে যাবার পরও অন্য সমাবেশটি চলছিল।এই সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার মানুষ সেখানেই দুপুরের খাবার খান।আর এমপির পক্ষের সমাবেশের স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কথা ব্যানারে লেখা থাকলেও তা হয়নি।
পাল্টাপাল্টি এই সমাবেশের বিষয়ে কথা বলতে এমপি এনামুল হককে ফোন করা হয়।তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে কথা বলতে চাননি।বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখলাম দুইপক্ষই একই স্থানে সমাবেশের ডাক দিয়েছে।
সে জন্য আমরা সতর্ক ছিলাম।৪০ জন পুলিশ সদস্য এবং জেলা ডিবি পুলিশের ১০ জন সদস্য মিলে মোট ৫০ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছে।কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পাশা পাশি দুটি সমাবেশ শেষ হয়েছে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।