রাজশাহীর আলোচিত ডা. কাজেম খুনের সন্দেহের তীর স্ত্রীর দিকে
আপডেটঃ ৫:০৪ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ০৫, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী ব্যুরো:- বাবা গোলাম মর্তুজা মন্টু আগে থেকে ছেলে ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদের বড় ধরনের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন।ছেলেকেও জানিয়েছিলেন তিনি।তবে ডা. কাজেমের আত্মবিশ্বাস ছিল- সংসারে অশান্তি হলেও মেরে ফেলতে পারবে না।ছোট ছোট তিনটি সন্তান থাকায় স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন সোমার সঙ্গে বিচ্ছেদের চিন্তাও করেননি।এখন বাবার আশঙ্কার পাশাপাশি পুলিশও ধারণা করছে-দাম্পত্য কলহের কারণেই খুন হয়ে থাকতে পারেন এই তরুণ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ।রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রভাষক ডা. ফারহানাকে প্রাথমিক সন্দেহের তালিকায় চিকিৎসক স্ত্রী।জিজ্ঞাসাবাদে সেই সন্দেহ জোরালো হয়েছে পুলিশের।রাজশাহীতে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদ খুনের এক সপ্তাহ পার হয়েছে।তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত নম্বরপ্লেটহীন মাইক্রোবাসও শনাক্ত করা যায়নি।
তবে এই হত্যাকাণ্ডে ছেলের স্ত্রী ও মামলার বাদী ডা. ফারহানাকে সন্দেহ করছেন ডা. কাজেমের পিতা গোলাম মর্তুজা।৪ অক্টোবর শনিবার একান্ত আলাপেও এই সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।গোলাম মর্তুজা জানান, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ৪২তম ব্যাচে এমবিবিএস পাস করে কাজেম যখন ইন্টার্নশিপ শুরু করেন, তখন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন ফারহানা।
রাজশাহীর ধণাঢ্য পরিবারের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।পরিবারের অমতে ২০০৬ সালে ফারহানাকে বিয়ে করেন কাজেন।পরে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।ডা. ফারহানাকে খুশি রাখতে ডা. কাজেম নারায়ণগঞ্জে একটি ফ্ল্যাট উপহার দেন, ৪১ লাখ টাকায় গাড়ি উপহার দিয়েছেন।দূরত্ব কমাতে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরেছেন মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশ।
একসঙ্গে ওমরাহও করেছিলেন।গোলাম মর্তুজা আরো বলেন, “চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী উপশহরে কাজেমের বাসায় গেলে ফারহানা আমাদের সঙ্গে কথা বলত না।স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ লেগে থাকত।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, আমার সন্দেহ হয়েছিল কাজেমকে যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে।এ জন্য প্রাইভেটকার ছাড়া একা চলাচল করতে নিষেধ করেছিলাম।
কিন্তু তার বিশ্বাস ছিল-সংসারে অশান্তি চললেও তিনটি বাচ্চা আছে তাদের।গোলাম মর্তুজা আরও বলেন, কাজেম নিহত হওয়ার পর রাত ৩টার দিকে ফারহানা আমাকে ফোন করে বলেছিল-আপনার ছেলে মারা গেছে।লাশটা নিয়ে গিয়ে মাদ্রাসায় বা গোরস্তানে মাটি দিয়ে দেন।এর এক ঘন্টা পর ফারহানার ভাই ডা. দোলনও ফোন দিয়ে বলেন-লাশটা নিয়ে গিয়ে মাটি দিয়ে দেন।
কাজেনের শাশুড়িও একই কথা বলেন।সরকারি চাকরি থেকে ২০০৭ সালে অবসর নিয়েছেন ৭৫ বছরের গোলাম মর্তুজা।তার আরেক ছেলেও রাজশাহীতে থাকেন।গোলাম মর্তুজা বলেন, এক ছেলেকে হারিয়েছি।তাকেও হারাতে চাই না।সে কারণে আমরা মামলার বাদী হইনি।হত্যাকাণ্ডসম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবারসকালে ফারহানাকে পুলিশ নিয়ে গেছেবলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে ফারহানাকে হেফাজতে নিয়েজিজ্ঞাসাবাদের কথা অস্বীকার করেছেনরাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের(আরএমপি)মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম।তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও আশঙ্কা করছেন ডা. কাজেম হত্যাকাণ্ডে তার স্ত্রীর হাত থাকতে পারে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর ডা. ফারহানাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ।
তার অসংলগ্ন কথাবার্তা পুলিশের সন্দেহের কারণ।ওই কর্মকর্তা আরও জানান, খুনিরা ডা. কাজেনের গতিবিধি অনুসরণ করত।খুব ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে গেছে।ব্যবহৃত গাড়িটিও ছিল নম্বরপ্লেটবিহীন।কারণে সিসি ক্যামেরায় গাড়িটি দেখা গেলেও শনাক্ত করা যাচ্ছে না।তবে শ্বশুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. ফারহানা ইয়াসমিন সোমা।তিনি বলেন, “আমরা ছিলাম বেস্ট কাপল।
সে (কাজেম আলী) আমাকে খুব ভালোবাসত।আমিও ভালোবাসতাম।সে আমার চাকরির ক্ষেত্রেও ভালো সাপোর্ট করেছে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।এগুলো সত্য না।যারা এগুলো কথা বলছে, তাদের ওপর অভিশাপ পড়ুক।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাজিবুল করিম বলেন, ফারহানার মোবাইল ফোনের সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড) যাচাই করে দেখা হচ্ছে।তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী মহানগরীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে রোগী দেখা শেষে মোটরসাইকেলে বাসায় ফেরার পথে খুন হন ডা. গোলাম কাজেম আলী।বর্ণালি এলাকায় তাকে ছুরিকাঘাত করে মাইক্রোবাসে পালিয়ে যায় খুনিরা।এ ঘটনার পর দিন বিকালে তার স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।