রাজশাহীত আঃলীগের কোন্দল তুঙ্গে
আপডেটঃ ১২:৩৬ অপরাহ্ণ | আগস্ট ০৬, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজশাহীতে ততই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে মত পার্থক্য ও প্রকাশ্যে কোন্দল দীর্ঘতর রুপ পাচ্ছে।জেলার সর্বত্রই, তানোর-গোদাগাড়ী, পবা-মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া ও বাঘা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্যে রুপ ধারণ করেছে।চলছে পাল্টা-পাল্টি সভা-সমাবেশ, ঘটছে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা।এছাড়া উত্তেজনাও রয়েছে কয়েকটি উপজেলায়।সর্বশেষ ৩১ জুলাই সোমবার দিবাগত রাতে জেলার পুঠিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদের গাড়ী বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে ওই উপজেলায়।একই দিন মোহনপুরের আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতারা স্থানীয় সাংসদ আয়েনের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছেন।
অপরদিকে ৩০ জুালাই রবিবার সন্ধ্যার সন্ধ্যায় গোদাগাড়ীর আফাজি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এমপি ফারুকের ওপর চড়াও হন নেতাকার্মীরা।পরিস্থিতি খারাপ দেখে সেখান থেকে কৌশলে সটকে পড়েন তিনি।সূত্র মতে, গত ১৭ জুলাই রাজশাহীর বাগমারার গোয়ালকান্দিতে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গোয়ালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ থেকে রাজশাহী-০৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে বাগমারা থেকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।পাশাপাশি বাগমারাকে এমপি এনামুল মুক্ত করারও ঘোষণা দেয়া হয়।
গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।এসময় এমপি এনামুলের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কথাও তুলে ধরা হয়।
এ প্রসঙ্গে তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আবুল কালাম আজাদ আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদককে বলেন, এমপি’র নানা অপকর্মে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ।তিনি বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে বাগমারায় এনামুল লীগ গড়ে তুলেছেন।তাঁর কারণে বাগমারায় এখন অশান্তি বিরাজ করছে।
একই কারনে গত ঈদউল ফিতরের আগেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমপিকে এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিলেন।তবে রাজশাহী-৪ আসনের এমপি ও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইন্জি: এনামুল হক বলছেন অন্যকথা।তিনি বলেন, দলের মধ্যে যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নাই, তারাই আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এসব করে কোনো লাভ হবে না।আওয়ামী লীগের তৃণমূলে নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গেই আছেন।দলীয় সূত্র মতে, রাজশাহী-১ আসনে এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফারুক চৌধূরীর মাঠে নেমেছেন অন্তত ডজন খানেক নেতা।
এর মধ্যে রয়েছেন পররাষ্ট প্রতিমন্ত্র্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী আয়েশা আখতার ডালিয়া, মন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও দেওপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরুজ্জামান রবু, কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়র একেএম আতাউর রহমান খান, মন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান, তানোর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা ইমরুল হকসহ আরও অনেকেই ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন।
এমনকি এঁদের মধ্যে অন্তত সাতজন এবার এমপি মনোনয়নপ্রত্যাশী।তাঁরা এলাকায় গণসংযোগও শুরু করেছেন।গণ-সংযোগ করতে গিয়েও তাঁরা এমপি ফারুক চৈৗধূরীর বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করছেন।সর্বশেষ গত রবিবার সন্ধ্যায় এমপি ফারুক চৌধূরী উপজেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করতে গেলে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয় পদ বঞ্চিত নেতাকর্মীদের মাঝে।
এসময় এমপি ফারুকের ওপর চড়াও হয়ে চেয়ার ভাংচুর শুরু করেন।পরিস্থিতি খারাপ দিকে যাচ্ছে বুঝতে পেরে এমপি ফারুক চৌধুরী সেখান থেকে কৌশলে সটকে পড়েন।রাজশাহী জেলা কৃষকলীগের সভাপতি তাজবুল ইসলাম বলেন, এমপি এর আগে তানোর-গোদাগাড়ীতে কৃষকলীগের কয়েকটি কমিটি ঘোষণা করেছেন।কিন্তু আমরা সেটি জানি না।
এভাবে একের পর এক কমিটি ঘোষণা করছেন।তাতে তাঁর পছন্দের লোকজনকে তিনি নেতা বানাচ্ছেন।অখচ জেলার নেতাদের জানানো হচ্ছে না।এসব নিয়ে এমপি’র বিরুদ্ধে স্থানীয় তানোর ও গোদাগাড়ীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এসব কারণেই গোদাগাড়ীতে তিনি নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন।এ নিয়ে এখনো দুটি উপজেলায় চরম ক্ষোভ আছে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে।তবে এমপি ফারুক চৌধুরী বলেন, কমিটি হচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে।এখানে আমার তো কোনো হাত নাই।তার পরেও এসব নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা চলছে।
রাজশাহী-৩ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আয়েনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ তুলে গত সোমবার মানববন্ধন করেন মোহনপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুরঞ্জিত সরকার।তিনি এমপি আয়েন এবং তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও হয়রানির অভিযোগ তুলে এর প্রতিকার চান।
এর আগেও আয়েনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন মোহনপুর মহিলা যুবলীগের সহসভাপতি উম্মে হাবিবা।তবে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, সামনে নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রি মহল মাঠে নেমেছে মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে। এলাকায় এদের কোনো জায়গা নাই। নেতাকর্মীরা এদের কাউকে মানেনও না।
কিন্তু তারা কারো দ্বারা পরিাচলিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে।দলীয় সূত্র আরও জানায়, রাজশাহীর পুঠিয়ায় সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলার ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত ২৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম বিল্লাল।
এরই মধ্যে গত সোমবার রাতে মামলার আসামি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদের গাড়ী বহরে হামলার ঘটনা ঘটে।এ ঘটনার সঙ্গেও সাবেক এমপি দারার লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন মাসুদ।তাঁর অভিযোগ, শতাধিক মোটরসাইকেল ও মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে তাঁর সমর্থকরা পুঠিয়ায় সোডাউন করেন।
পরে ঝলমলিয়া বাজার এলাকায় দারার লোকজন ওই গাড়ী বহরে হামলা করে।তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘শুনেছি একটা ছোট ঘটনা ঘটেছে।কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো লোকজন জড়িত নাই।মাসুদ ঝলমলিয়া হাটের ইজাদার নাজমুল ইসলাম সুমনের ওপর হামলার আসামি।
সে নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে।এদিকে, রাজশাহীর বাঘায় সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।এ ঘটনার পরেও আরও কয়েকটি মারপিটের ঘটনা ঘটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে।এসব নিয়ে পাল্টাপাল্টি ৭-৮টি মামলা দায়ের করা হয়।
কারাবরণ করতে হয় পাকুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিনসহ অন্তত ২০-২৫ নেতাকর্মীকে।পরবর্তিতে তারা জামিনে মুক্ত হন।তবে ওই মামলাগুলো এখনো বিচারাধীন।এসব নিয়ে এখনো এলাকায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা।
এসব নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল।এখানে কোন্দল থাকবেই।আর ক্ষমতায় থাকলে কোন্দলের মাত্রা একটু বেশিই হয়, তার পরেও আমাদের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।সামনে নির্বাচন উপলক্ষে এই কোন্দল এখন হয়তো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।তবে মনোনয়ন পেয়ে গেলে আবার ঠিক হয়ে যাবে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।