সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

রাজশাহীতে রেকর্ড পরিমান আম উৎপাদনের আশা, গাছে আসতে গুরু করেছে মুকুল, পরিচর্যায় ব্যাস্ত বাগান মালিকেরা

আপডেটঃ ৮:২৯ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- মাঘ মাস শুরুর পর থেকেই রাজশাহী অঞ্চলে  আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে।আম বাগান মালিকরাও গাছে  মুকুল আসায় জোড়সড়ে শুরু করেছে পরিচর্যা।ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর আম চাষীরা।মুকুল আসার আগ মুহূর্তে গাছের প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের।তাতেই গাছে টিকে থাকে মুকুল।তাই ছোট-বড় আম বাগান পরিচর্যায় চাষিরা বর্তমানে বেশ ব্যস্ত সময়ই পার করছেন।বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে করছেন কীটনাশক স্প্রে।এই পরিচর্যায় দূর হবে পোকা, তেমনি গাছে মিলবে স্বাস্থ্যকর মুকুল।ফলনও আসবে ভাল।এবং ইতিমধ্যেই আগের পরিচর্ষার গাছ গুলোতে এসেছে স্বাস্থ্যকর মুকুল।এবার শীতের কুয়াশা পায়নি রাজশাহীর আমের মুকুল।ফলে মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে এ জেলার আমগাছগুলো।কোথাও কোথাও গুটি বাঁধতে শুরু করেছে।সেই সঙ্গে রঙিন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে আমচাষী ও বাগান মালিকদের মনে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবার আম উৎপাদন হবে ভালো।

গতবারের তুলনায় এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।বর্তমানে কিছু গাছে গুটি আসতে শুরু করেছে।তবে আম পাকবে রোজার পর।ফলে এবার আমের ভালো দাম পাবেন চাষীরা।রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলা নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল।চলতি মৌসুমে এ চার জেলাজুড়ে আমবাগান রয়েছে ৮৪ হাজার ৩৮৮ হেক্টর।

এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টরে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮, নওগাঁর ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টরে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৫ ও নাটোরের ৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টরে জমিতে ৮২ হাজার ৩৯৩ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ মৌসুমে আমবাগান ছিল ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর।সেবার মোট উৎপাদন হয় ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮ টন।প্রায় ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ১২ হাজার টাকার আম বিক্রি হয়েছে ওই মৌসুমে।২০২১- ২২ মৌসুমে আমবাগান ছিল ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর।মোট আমি উৎপাদন হয় ২ লাখ ৫ হাজার ২০ টন।

আর চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে আমের বাগান বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৮ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।ফলে এবার আমি উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ৩ লাখ টিনের বেশি আশা করছে কৃষি অধিদপ্তর।জেলার চারঘাটের আমচাষী মজিদুল হক জানিয়েছেন, এখন সব গাছেই মুকুল।এর মধ্যেই সরিষা দানার মতো হয়ে উঠতে শুরু করেছে মুকুল।

আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে।বাঘা উপজেলার আমোদপুর গ্রামের আমচাষী আব্দুল বারী বলেন, গত বছর উৎপাদন কমে হওয়ায়  লোকসান গুনতে হয়েছে।তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আমের মুকুলে ভরে উঠেছে অধিকাংশ গাছ।এবার আবহাওয়াও ভালো রয়েছে।তাই ভালো বাজার মূল্য পাওয়ার আশা করছি।

আশার পাশাপাশি অনেকের মনে আছে শঙ্কাও।নাটোরের আমচাষী রহিম মিয়া বলেন, আমের মুকুল ভালো হলেই হয় না, প্রকৃতি যদি সহায় না হয়।কারণ শিলাবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিলে একদিনেই সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে আমচাষীদের।তবে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার আমের ফলন নিয়ে আশাবাদী।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মৌসুমে আমের জন্য আবহাওয়া বেশ অনুকূলে রয়েছে।অন্যান্য বার কুয়াশায় মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার সেটি নেই।অনেক কৃষক আমবাগানে সাথি ফসল চাষ করেছেন।এতে গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়েছে।এসব কারণে এবার মুকুলও বেশি দেখা যাচ্ছে, যা থেকে বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছে, ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।গত বছর ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছিল।হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১১ দশমিক ৯৬ টন।

মোট উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ দশমিক ৫৩ টন আম, যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬২ হাজার ১২০ টাকা।এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়ায় প্রায় ১ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৫৫০টি ছোট বড় আম বাগান রয়েছে।

ফজলি, লখনা, গোপালভোগ, আশ্বিনা, হিমসাগর, দুধসরসহ প্রায় ১৫ এর অধিক জাতের আম চাষ করা হয়ে থাকে এ অঞ্চলে।কিন্তু গতবছর গুলোতে চাষীরা আমের দাম কম পাওয়ায় গাছ কেটে পুকুর বা অন্য ফসল করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।ফলে পূর্বের তুলনায় কমেছে বেশ কিছু বাগান।

আগাম বাগান পরিচর্যার বিষয়ে বানেশ্বর এলাকার আম চাষী শফিকুল ইসলাম জানান, মাঘের শুরুতেই আম গাছের পরিচর্যা শুরু করেছি কারণ মাঘের শেষেই গাছে মুকুল আশার সম্ভাবনা রয়েছে।অধিক মুনাফার আশায় মৌসুমের আগেই বাগানের যত্ন নেয়া শুরু করেছি।

তাই বানেশ্বর মসজিদ মার্কেটের মেসার্স হামীম এন্টারপ্রাইজ থেকে কিনে ইতোমধ্যে ২.৫ ইসি ফিডল্যাম, সালফার শাহেন ও ইমিডাক্লোপ্রিড ইমিডর ওষুধ স্প্রে করছি।এতে গাছে অধিক মুকুল আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।এবং আগের পরিচর্যা করা গাছ গুলোতে খুব ভাল মুকুল আসতে গুরু করেছে।আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভাল ফলন হবে।

পুঠিয়ার ধলাট গ্রামের আম চাষী আব্দুল মমিন বলেন, দিনে সূর্যের তেজ আর রাতে পড়ছে শীত।এমন আবহাওয়াতে গাছের পরিচর্যা প্রয়োজন।তাই গাছে মুকুল ভালো আসতে ও টিকিয়ে রাখতে এবং ভাল ফলন পাবার আশায় বাগান পরিচর্যা করছি।

শীতে আমের মুকুলের পরিচর্যার ও অন্যান্য সমস্যা কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী জানান, ‘মুকুল যখন বের হয়েছে কিন্তু ফোটে নাই তখন ইমিডাক্লোপ্রিড অথবা মেনকোজেব গ্রুপের ডাইরেল এম-৪৫ নামের ওষধ প্রতি ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে গাছের মুকুলে স্প্রে করতে হয়।

এতে গাছে হপার পোকা বা এ্যানথ্রাকনোজ নামের রোগ থেকে মুক্তি মেলে।এটি দ্বিতীয়বার দিতে হবে যখন গাছের মুকুল মার্বেল সাইজের সেপ নিবে তখন।তিনি আরও বলেন, ‘কুয়াশা খুব বেশী হলে বা দীর্ঘদিন থাকলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে রোগ হতে পারে।এ রোগের কারণে পুষ্প মঞ্জুরীতে সাদা পাউডারের মত গুঁড়ো দেখা যায়।

এবং পড়ে কালো বর্ণধারণ করে ফুল ও ফল ঝরে পড়ে।এ থেকে রোধ পেতে ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা থেকে রক্ষা মিলবে।এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার হুসনা ইয়াসমিন জানান, এখনও সব গাছে মুকুল আসতে শুরু করেনি কিছু গাছে মুকুল আসছে।এবার আবহাওয়া ভালো আছে।

সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া ভাল থাকলে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে আশা করা যায়।চাষী ভাইয়েরা গাছে পরিচর্যা করছে আমাদের উপসহকারীরাসহ আমিও সবসময় মাঠে তদারকি করছি।এ বিষয়ে চাষিদের বাগান পরিচর্যায় আগে থেকেই ঔষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।আর চাষিরাও অধিক ফলনের আশায় সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।