মদনে গত তিন বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৫৫ জন শিক্ষার্থী কমছে।
আপডেটঃ ১:৪০ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ১৬, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
নেত্রকোনা:- হাওর উপজেলা মদনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে ৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।তবে গত ৩ বছরে এ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১ হাজার ৬শ ৫৫ জন শিক্ষার্থী ঝরে গেছে।উপজেলা শিক্ষা অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) তারিক সালাউদ্দিন জানান, ৯৪ টি সরকারি বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে ১৫ হাজার ৬শ ৫৩ জন শিক্ষার্থী ছিল।বর্তমানে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৩ হাজার ৯শ ৯৮ জন।সেই হিসাবে সরকারি প্রাথমিকে ১ হাজার ৬শ ৫৫ জন শিক্ষার্থী কমে গেছে।সরেজমিনে বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে বেদখল করে রেখেছেন।তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বেদখল হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর সুনিধিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেননি।উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়,মদনে ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ প্রধান শিক্ষক ও ৭জন সহকারী শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
তাছাড়া ৪০টি বিদ্যালয়ের সংকট রয়েছে,সেখানে চেয়ার ২শ ব্যান্স ৪শ ও টেবিলের সংখ্যা ১শ ৬০টি।জয়পাশা শহীদ মফিজ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান,তার বিদ্যালয় থেকে ৫৬ জন শিক্ষার্থী কমে গেছে।
একই ভাবে মদন পৌরসভার মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ অলিউর রহমান জানান,তার বিদ্যালয় থেকে ২০ শিক্ষার্থী কমে গেছে,হাসানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৯০ জন চলে গেছে বলে প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান।
গঙ্গানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী চলে গেছে বলে প্রধান শিক্ষক মোমেনা আক্তার জানান পৌর সদরে বাড়িবাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ এমদাদুল হক জানান আর বিদ্যালয় থেকে ৪ চলে গেছে।
মদন উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন,সব কটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মিড ডে মিল চালু করা এবং মূল্যে জুতা সহ ইস্কুল ড্রেস দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করলে শিক্ষার্থী রোধ করা যেতে পারে।
মদন মাঘান ইউনিয়ন ৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।সেখানকার আশে পাশের ভবনের ফাঁকে ৪ রুমের একটি করে টিনশেড ঘর।তারই মধ্যে একটি সাইনবোর্ডে লেখা এ ইউ খন্দকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিতঃ ১৯৮৪ ত্রিপন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত ১৯৮৯ ও রামদাসখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিতঃ ২০০৬।
৮ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা যায় প্রতিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ রুমে একটি টিনশেডের ঘর।তাও গত ৩ বছর ধরে পাঠদান চলছে।প্রতি ক্লাসে একটি চেয়ার ও একটি টেবিল পেতে শিক্ষকের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।বাকি জায়গায় ৮ থেকে ১০ টি বেন্স শিক্ষার্থীদের। সেখানেই চলছে পাঠদান।তীব্র গরমে টিনশেডের তাপের মধ্যেই চলছে পাঠদান।
ত্রিপন ও এ ইউ খন্দকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বললে জানা যায় অনেক পূর্বে সরকারি অর্থায়নে এই দুটি ইস্কুলের ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল,সেই ভবন নাকি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ ইউ খন্দকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি অর্থায়নের যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল সেটি নাকি স্কুলের জায়গা নয় মালিক কর্তৃপক্ষের।
তাই এই পুরাতন বিদ্যালয়টি অন্য স্থানে ১০ শতাংশ জায়গায় একটি টিনশেড গড় নির্মাণ করে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চলছে।মদনে ৯৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়।তার মধ্যে একটি এ ইউ খন্দকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ত্রিপন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামদাস খিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।উপজেলায় শিক্ষা খাতে উন্নয়ন ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে।
কিন্তু এই ৩ বিদ্যালয়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।এ ইউ খন্দকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০৩ শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন।ত্রিপন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১২২, শিক্ষক রয়েছেন ৩ জন।রামদাস খিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১৫৫,শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন।এ তিনটি বিদ্যালয়ে নিন্মও মধ্যবিত্ত আই এর পরিবারের শিশুরা লেখাপড়া করে।
শিক্ষকরা জানান,শিশুদের জন্য এ তিনটি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই।নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।শহীদ মিনার নেই।ওই ৩ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষকরা জানান করুনার সময় ২০২০ সাল থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট ভোগ করে আসতেছে।আমাদের স্কুলের ভুবন নির্মাণের জন্য মাটি সল্টেজ করা হয়েছিল খোকন ভবন হবে উদ্বোধন কর্তৃপক্ষই বলতে পারেন।
তবে আমাদের দাবী হলো অতি তারা তারি স্কুল ভুবন নির্মাণ করার জন্য উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছি।৭১টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠ ক্রীড়া খেলাধুলা ও শরীরচর্চা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে জাতীয় শিক্ষানীতি এ ২০১০ উল্লেখ করা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়,উপজেলায় ৯৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাঠ আছে মাত্র ২৩ টি বিদ্যালয়,অর্থাৎ ৭১টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই।মদন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এটিএম কামরুজ্জামান বলেন,আমাদের এমপি সাজ্জাদুল হাসান সাহেব কে বিভিন্ন সমস্যার সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
সমস্যার সমাধানের কাজ শুরু করেছেন তিনি।উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ( ভারপ্রাপ্ত) তারিক সালাউদ্দিন বলেন,প্রাথমিকে শিক্ষার্থী করোনা কালে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায়।আমরাও অভিভাবকদের নিয়ে উঠান বৈঠক মাঠ সমাবেশ করে ওসব শিক্ষার্থীকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখল প্রসঙ্গে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন,যেসব বিদ্যালয়ের জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।দ্রুতই সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
IPCS News : Dhaka : শহীদুল ইসলাম : নেত্রকোনা।