সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ছাত্রীকে ধর্ষণ : শ্রীঘরে শিক্ষক

আপডেটঃ ৮:৪২ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ২১, ২০২২

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাটুপাড়া কারিগরি ও বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউটের ‘ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং’ ট্রেডের এক শিক্ষক একই গ্রুপের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ধারণ করা ভিডিও ফাঁস করে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে তিন বছর ধরে ধর্ষণ ও নানা ভাবে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত সেই শিক্ষককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।গতকাল সোমবার (২১ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষক জামিন আবেদন করলে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুহা. হাসানুজ্জামান তা নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট সৈয়দা শামসুন্নাহার মুক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মো. মাসুদ সরকার (৫০)।তিনি উপজেলার মৌগাছী বাটুপাড়া এলাকার মৃত সিদ্দিক সরকারের ছেলে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক ভুক্তভোগী ছাত্রীর দূর সম্পর্কের চাচা।অভিযুক্তের বাড়ির পাশেই ভুক্তভোগীর বাড়ি।এজন্য ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যতা পুরনো।ওই শিক্ষকের পরামর্শে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ওই ছাত্রীকে তার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বলেন। তার কথামত ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ‘ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং’ বিষয়ে ভর্তি হন ভুক্তভোগী।

ভর্তির পর ওই শিক্ষক ভুক্তভোগীর বাড়িতে প্রায়ই আসতো।২০১৯ সালের ১০ মে বেলা অনুমানিক আড়াইটায় ভুক্তভোগীকে নোট দেয়ার কথা বলে ফোনে তার (অভিযুক্ত) বাসায় ডেকে নেয়।এসময় মাসুদ ভুক্তভোগীকে বাড়ির দোতলায় শয়নকক্ষে নোটগুলো রাখা আছে বলে জানায়।সেখানে ভুক্তভোগী নোট নেওয়ার জন্য গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক তার পিছুপিছু শয়নকক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রীকে জাপটে ধরে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘এসময় আমাকে তার বিছানায় জোরপূর্বক ফেলে দেয়।আমি চিৎকার করলে মুখের ভেতর কাপড় গুজে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে।তার শয়নকক্ষে আগে থেকে সেট করে রাখা ফোনে সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারন করে।এমন লোমহর্ষক ঘটনা বাবা-মাকে জানাতে চাইলে মাসুদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধর্ষণের ভিডিও ভাইরালের হুমকি দেয়।

মান-সম্মানের ভয়ে ধর্ষণের ঘটনা চেপে যাই।এরপর থেকে সে প্রতিনিয়ত ব্ল্যাকমেইলিং করতে থাকে।ভুক্তভোগী ছাত্রী আরও বলেন, ‘ধর্ষণ-অত্যাচার থেকে বাঁচতে ২০২০ সালের ১৩ আগস্ট পড়ালেখা ছেড়ে গাজীপুরের একটি গার্মেন্ট্সে চাকরি নিই।কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি।

যে কোনো ভাবে আমার ঠিকানা সংগ্রহ করে ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এসে ফোন দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জন্ম তারিখ ও নাম-ঠিকানা সংশোধন করতে হবে মর্মে দেখা করতে বলে।ধর্ষণের ভিডিও ডিলিট করার প্রতিশ্রুতিও দেয়।সরল বিশ্বাসে তখন তার সঙ্গে দেখা করি।সে শিক্ষা অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে কক্স-বাজারে নিয়ে যায়।যা বুঝতে পারিনি।

পূর্বের ভিডিও ডিলিট করার আশ্বাস দিয়ে কক্স-বাজারের একটি হোটেলে জোর পূর্বক আটকিয়ে তিনদিন ধরে ধর্ষণ করে।তার কথা মত সে পূর্বের ভিডিও ডিলিট করে এবং কোনো দিন ডিস্টার্ব করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।তখন আবারো বাড়িতে এসে পড়ালেখা শুরু করি।আনুমানিক ১৫ দিন পর তিনি আবারো উত্যক্ত শুরু করে।

ধর্ষণের কুপ্রস্তাব দিয়ে পূর্বের ধর্ষণের ভিডিও অন্য কোথায় সংরক্ষিত রেখে সেটি দেখিয়ে পুনরায় ফেসবুকে ছড়ানো এবং এস এস সি তে আমাকে ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।এরপর ২০২১ সালে এসএসপি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।কিন্তু একটি বিষয়ে (ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং) বিষয়ে আমাকে ফেল করিয়ে দেয়।

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি আমাকে ধর্ষণের ভিডিওসহ যত রকমের ডকুমেন্ট আছে সব মুছে ফেলার কথা বলে কৌশলে রাজশাহীর একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে এসে আবারো ধর্ষণ করে।কিন্তু ওইদিনও সেই ভিডিও ডিলিট করেনি।এভাবে দিনের পর দিন ধর্ষণের ভিডিও ফাঁসের ভয় দেখিয়ে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে।

সর্বশেষ গত ৮ জুন সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে আম বাগানের দিকে যাচ্ছিলাম।তখন মাসুদ তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ির দরজায় ওঁৎ পেতে থেকে আমার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যায়।আমি ফোন নেয়ার জন্য ঘরের দরজায় গেলে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাসুদসহ পরিবারের সদস্যরা আমাকে ও বাবা-মার ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত-জখম করে।পরে থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি।পরে গত ৩ জুলাই রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২ এ মামলা করি।দীর্ঘদিন পর হলেও ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ প্রশস্থ হলো।আসামির জামিন নামঞ্জুর করে সোমবার তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে।

আশা- আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট সৈয়দা শামসুন্নাহার মুক্তি বলেন, ‘আসামি জামিন আবেদন করেছিলেন।কিন্তু তার আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।এসময় আসামি আদালতের কাঠগরার উপস্থিত ছিলেন।জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলে তাকে জেলহাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।

IPCS News : Dhaka : আমজাদ হোসেন শিমুল : রাজশাহী।