ফসলি জমি ও মুকুলসহ আমের বাগান কেটে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানব-বন্ধন
আপডেটঃ ১০:৩৪ অপরাহ্ণ | মার্চ ০৮, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
দিনাজপুর:- দিনাজপুর সদর উপজেলার কর্ণাই কাটাপাড়ায় তিন ফসলি জমিতে আবাদ করা কলাবাগান, ভুট্টা ও মুকুলসহ আমের বাগান কেটে উজার করে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।বুধবার (৮ মার্চ-২০২৩) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই কাটাপাড়ায় কেটে ফেলা আম বাগানের সামনে শতাধিক নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করেন।মানব-বন্ধনে তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে তিন ফসলি জমির ফসল নষ্ট করার প্রতিবাদ করেন।এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।মানব-বন্ধনের অংশ গ্রহণকারীরা বলেন, পৈত্রিক সূত্রে জমি জায়গা প্রাপ্ত হয়ে কর্ণাই মৌজার কর্ণাই কাটাপাড়া গ্রামে আমরা বসবাস করে আসছি।এই গ্রাম সংলগ্ন তিন ফসলি জমি আমরা চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকা পরিচালনা করে আসছি।স্বাধীনতার পর থেকে এই জমির দলিলমূলে আমরাই জমির মালিক হয়ে ভোগ দখল করছি।
আমাদের দলিল ও দখল সূত্রে জমি হওয়ায় সর্ব শেষ মাঠ জরিপে ২৯ ধারা ও ৩০ ধারায় আমাদের নামে জমির পড়চাও কেটে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু ৩১ ধারায় গিয়ে আমাদের গ্রামসহ প্রায় ২০ একর ৫১ শতক তিন ফসলি জমি সরকার খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে।এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছি।যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
সম্প্রতি সময়ে দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি আমাদের কোন প্রকার লিখিত নোটিশ না দিয়ে আমাদের বসতবাড়ি সংলগ্ন জমিতে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য আমাদের তিন ফসলি জমির মুকুলসহ আমের বাগান, কলার বাগান, ভুট্টার ক্ষেত নষ্ট করে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করছেন।
আমাদের জমির কোন কাগজপত্র পর্যালোচনা না করেই তিন ফসলি জমির ফসল নষ্ট করে দিচ্ছেন।প্রতিবাদ করলে মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন বলে হুমকি প্রদান করছেন।আমাদের গ্রামের একজন প্রতিবাদ করেছিল তাকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নিতে চেয়েছিল।ক্ষতি-গ্রস্ত আব্দুল করিম বলেন, পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত আমার এক একর জমিতে আমের বাগান করেছি।
বর্তমানে প্রতিটি আমের গাছ মুকুলে ছেয়ে গেছে।কত আশা কত স্বপ্ন দেখছি।আজ মুকুলসহ সেই আমের বাগান কেটে ফেলা হচ্ছে।কিছু করতে পারছি না।কত আকুতি মিনতি করে বলেছি, ৩টি মাস সময় চেয়েছিলাম।কোন ভাবে তারা আমার কথা শুনছেন না।কার কাছে যাব, কার কাছে বিচার চাইবো ওই গ্রামের হুমায়ুন কবীর একই কথা বললেন।
তিনি বলেন, আমার ২ একর জমির আমের বাগান ও ভুট্টার ক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে।আমার ভুট্টা নষ্ট করে ফেলায় আমি পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাব, কি খাব, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ চালাবো কিভাবে?অপর ক্ষতিগ্রস্ত হযরত আলী বলেন, আমাদের গ্রামের ২০ একর ৫১ শতক জমি সরকার খাস খতিয়ানে ফেলেছে।
সরকার যদি এক পার্শ্বে এই আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ে তুলেন তাহলে আমাদের এই গোত্রের মানুষের সাথে আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসকারী মানুষের মতবিরোধ থাকবে।তা না করে জোরপূর্বক আমাদের এই গোত্রের মানুষের বসতবাড়ীর পার্শ্ববর্তী স্থানে আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরী করে অন্য স্থানের মানুষের বসবাস করলে আমাদের গোত্রের মানুষের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হবে।
হাসান আলী নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই কর্ণাই কাটাপাড়ায় প্রায় ৪ শত ঘর পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছি।এই গ্রামের ২০ একর ৫১ শতক জমি ২৯ ধারা ৩০ ধারা রেকর্ড পেয়েছি।ভিপিও পেয়েছে।সরকার প্রয়োজনে জমি নিতেই পারেন।কিন্তু আলাপ আলোচনা করে নিতে পারতেন।
এখানে এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে আমার তিন ফসলি জমির ফসল নষ্ট করে এই আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরি করতে হবে।সখিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিন ফসলি জমি নষ্ট করে কোন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে না।আমাদের মত অসহায় হত দরিদ্র পরিবারগুলির মুখের খাবার নষ্ট করে কোন ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আমরা জানি না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রমিজ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।এই প্রকল্পে ৮০টি ঘর নির্মাণের জন্য ৩ একর জমির প্রয়োজন।এখানে ২০ একর ৫১ শতক জায়গা খাস খতিয়ানে আছে।তাই এই জায়গাটি নির্বাচন করা হয়েছে।
তিন ফসলি জমির ফসল নষ্ট করে এই আশ্রয়ন প্রকল্প কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রমিজ আলম বলেন, কিছু আমের বাগান নষ্ট হচ্ছে সত্যি, তবে জেলা প্রশাসক সব কিছু জানেন।আমরা সরকারি খাস জায়গায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করছি। তবে এই জমি ভোগ দখলকারীদেরকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।কিন্তু তাদেরকে লিখিত নোটিশ দেওয়া হয়নি।
IPCS News : Dhaka : আব্দুস সালাম : দিনাজপুর।