সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

প্রকাশ্যেই চলে রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক বিভাগে অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্য

আপডেটঃ ১১:০০ অপরাহ্ণ | মার্চ ১৬, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক বিভাগের টিআইদের নিদৃস্ট কিছু সার্জেন্ট ব্যাস্ত থাকেন ক্যাশিয়ারের ভূমিকায়, মামলা নয়, ব্যতিব্যস্ত নিজেদের পকেট ভরায়।ট্রাফিকে যতই আধুনিক নিয়ম আসে, অনিয়মের নতুন পথও আসে ততই।রাজশাহী মহানগর ট্রাফিকের বিরুদ্ধে এমন-ই সব ডিজিটাল অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।জানা যায়, যখন যিনি টিআই ওয়ানের দ্বায়িত্ব পান, তখন-ই তাঁর পোয়াবারো।সূত্র বলছে, টিআই ওয়ানের (এডমিন) মাসিক নিজস্ব আয় ১০ লক্ষ টাকা, এর সঙ্গে আছে উদ্ধর্তন কর্তার কমিশন।তাই লোভনীয় ঐ পদে যেতে চলে বড় রকমের দেনদরবার।প্রত্যেক এডমিন নিজস্ব পছন্দের মানুষ দিয়ে চালান তাদের অনিয়ম দুর্নীতি আর ঘুষ বানিজ্য।শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত না হলেও, পকেটের অবস্থা উন্নত করতে মরিয়া ট্রাফিকের একটি সিন্ডিকেট।

গাড়ির মালিক ও শ্রমিক সমিতিসহ শহরে চলাচলকৃত সকল প্রকার যানবাহন থেকে আসে মাসোহারা।মালিকরা হয়রানি ও জরিমানার ভয়ে নিজে থেকে যোগাযোগ করেন ট্রাফিক অফিসের দূর্নীতিবাজদের সঙ্গে।মাসোহারা’র এই স্লিপ বানিজ্য এখন রমরমা।আছে ভুয়া কেস স্লিপও।বর্তমান টিআই ওয়ানের দ্বায়িত্বে আছেন প্রবীণ কুমার পাল।

মুলহোতা অঘোষিত ক্যাশিয়ারের দ্বায়িত্ব পালন করছেন পরিদর্শক আলিম সরকার।যোগদানের ১০ দিনের মাথায় বালু মহলের ট্রাক মালিক, বাস সমিতি, সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রান্সপোর্টসহ নগরীতে চলাচলকৃত সকল যানবাহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি।সচেতন নগরবাসী বলছেন, মাসোহারার কারণে সরকার বিপুল পরিমানে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ফিটনেসবিহীন গাড়ী চলাচলে সড়কে বাড়ছে দূর্ঘটনা, প্রতিনিয়ত হচ্ছে প্রাণহানি।অনুমোদনহীন গাড়িতে ছড়াছড়ি এখন নগর জুড়ে কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ পড়ে আছে মোটর সাইকেল ও অটোরিকশার পিছনে।নামকা ওয়াস্তে মামলা প্রদান ও রাজস্ব আয় দেখিয়ে তারা ব্যস্ত আছেন মাসোহারা নিয়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাফিক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অঘোষিত ক্যাশিয়ারের অন্যান্য দ্বায়িত্বে আছেন, কনস্টেবল সাদ্দাম, মাহাবুব হাসান, আজাহার প্রমুখ।এদের মুলহোতা পরিদর্শক আলিম সরকার।অপরদিকে টিআই-১ এর অঘোষিত ক্যাশিয়ার আরো একজন পাবলিক বিভিন্ন স্থান থেকে মাসোহারা তোলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

অনুসদ্ধানে জানা যায়, সিএনজি, ট্রাক, বাস, মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলো থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেন তারা।মাসে ১০-১৫ লক্ষ টাকা মাসিক চাঁদা আসে বিভিন্ন স্থান থেকে।এদিকে দূরপাল্লার বাস কাউন্টার থেকেও নেওয়া হয় মাসিক চাঁদা।দিনের বেলায় নগরীতে চলাচল করা ইট-বালু বহনকারী ট্রাক মালিকদের নিকট থেকেও নেওয়া হয় মাসিক চাঁদা।

শুধুমাত্র ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও অটোরিকশায় মাসিক আসে ৩ লক্ষ টাকা।যা অফিসের প্রসিকিউশন সেকশনসহ অন্যান্যরা ভাগ করে নেন।প্রতিটি অটোরিকশা থেকে মাসিক নেওয়া হয় ৩ শত টাকা।নগরী চলাচলকারী অবৈধ ভুটভুটি, নছিমন করিমন আটক করে আদায় করা টাকা অফিসের কর্মরত কনস্টেবল সাদ্দাম ও আজাহারসহ অন্যান্যরা ভাগ করে নেন।

এছাড়াও অফিসে বেলাল, মাহমুদ হাসান, নামে এক কনস্টেবল প্রতিনিয়ত আটক ট্রাক, বাস, সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোট বড় যানবাহনে দেনদরবার করে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেন।আর এদের দেনদরবারে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউশন শাখার সার্জেন্ট নুরে আলম সিদ্দিক।তবে ট্রাফিক বিভাগে নতুন নিয়মে সরাসরি টাকা জমা দেওয়া হয় ব্যাংকে।

এতে কিছুটা অনিয়ম বন্ধ হলেও নকল কেস স্লিপে চলে বানিজ্য।এখনো ডিজিটাল মেশিনে মামলা না নিয়ে মেন্যুয়ালি নকল বা জব্দ তালিকা মুলে গাড়ি ধরা হয়। অনেক সময় নকল ( বৈধ নয় এমন) কেস স্লিপ ব্যবহার করা হচ্ছে।গাড়ি জব্দের কেস স্লিপের অপব্যবহার বেশি করা হচ্ছে।উক্ত ট্রাফিক বিভাগে দীর্ঘদিন যাবৎ উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন অনির্বাণ চাকমা।

ট্রাফিসের ডিসি, মাসোহারার একটা বড় অংশ পায় বলেও জানিয়েছে ওই বিভাগের কয়েকজন।৫ বছর ধরে তিনি এই বিভাগের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।তাঁর নির্দেশ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগে কারো কিছু করার থাকে না।তাঁর ফোন রিসিভ না করার অভিযোগ পুরোনো।সচেতন সমাজের ব্যক্তিরা বলছেন, নগরীতে থেমে নেই ফিটনেস বিহীন ভারী গাড়ির মাসিক চাঁদা।

বহু ফিটনেস বিহীন গাড়ী এখন চলাচল করে শুধুমাত্র মাসিক চাঁদায়।অনুসদ্ধানে জানা যায়, রাজশাহীর বাহিরে থেকে আসা ট্রাক আটক করে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।অন্যথায় চলে হয়রানি।চাঁপাই নবাবগঞ্জের রাইস মিলের ট্রাক মালিকদের নিকট থেকে নেওয়া হয় মাসিক মাসোহারা।এই মাসিক মাসোহারা উত্তোলনের দ্বায়িত্বে আছেন একজন ।

এছাড়াও ড্রাম ট্রাকের দ্বায়িত্বে আছেন সার্জেন্ট সাদ্দাম।টান্সপোর্ট থেকে মাসোহারা নেওয়ার দ্বায়িত্বে আছেন নওশাদ।এভাবেই ভিন্ন ভিন্ন পরিবহন থেকে মাসিক মাসোহারা উত্তোলন করেন সার্জেন্ট সাবিহা, সাধন, ইমরান, মনিরসহ অনেকেই।রাজশাহীতে অবস্থিত প্রতিটি মাইক্রোবাস থেকে নেওয়া হয় মাসোহারা।

ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকার, হাইস, মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে নেওয়া হয় মাসোহারা।এ বিষয়ে কথা বলতে টি আই (ওয়ান) প্রবীণ কুমার পাল বলেন, একমাসের জন্য দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে।এ সময়ের মধ্যে শহর চিনতেই লেগে যাবে।ভালো কাজ করতে চাই আমি।এখন ট্রাফিক বিভাগ চলে আমাদের ডিসি স্যারের তত্ত্বাবধানে।

তিনি সকল বিষয় দেখেন।আমি এখনো কারো সঙ্গে যোগাযোগ করিনি।কেউ যদি যোগাযোগ করেন, তা আমি জানি না।আমার এক মাসে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নাই।এখন প্রতি মাসে একজন করে এডমিনের দ্বায়িত্ব পাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আরএমপির মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম মুঠোফোন কল দিয়ে নগরীর ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ বানিজ্য বিষয়টি শোনার পরে তিনি বলেন,আমি এখন মিটিং এ আছি এ বিষয়ে পরে কথা হবে বলে লাইনটি কেটে দেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমা বলেন, ভুয়া কেস স্লিপের ব্যবহারের বিষয়টি সঠিক নয়।এরকম প্রমাণ থাকলে অফিসে নিয়ে আসবেন, আমি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিবো।মাসোহারা বন্ধে প্রতিমাসে একজন করে দ্বায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।

যাতে কেউ বেশি সময় দ্বায়িত্ব পালন করে সুবিধা নিতে না পারে।আমার অফিস ১০০ ভাগ পরিষ্কার আছে।বাহিরে কেউ কোন অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।