নেত্রকোণার সবকটি আসনেই সতন্ত্র প্রার্থী, চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার মাঝি
আপডেটঃ ২:৪৫ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ২৯, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
নেত্রকোণা:- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোণার পাঁচটি সংসদীয় আসনের সব গুলোতেই নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্রভাবে লড়তে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।নৌকার মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার মাঝিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটার ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আর শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে বাধা দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত আসার পর জেলায় জেলায় নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।এদের মধ্যে মনোনয়ন না পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য যেমন আছেন, তেমনি আছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।এর ব্যতিক্রম নয় নেত্রকোণা জেলায়ও।
নেত্রকোণা-১(দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) ও নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসনে এবার প্রার্থী পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ।বাকি তিন আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে গত রোববার ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা।এ ছাড়া জাকের পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও জাতীয় পার্টির নেতারাও মনোনয়নপত্র কিনছেন।
নেত্রকোণা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, এখন পর্যন্ত ১৫টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে।আরও প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে আসছেন।এতে করে প্রত্যেক আসনেই দুইয়ের অধিক প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা হওয়ার বিষয়টিই সামনে আসছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে বিক্রি হওয়া মনোনয়নপত্রের তালিকায় দেখা গেছে, নেত্রকোণা-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদার ও আতাউর রহমান খান স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
তাদের মধ্যে জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদার সাবেক সংসদ সদস্য জালাল উদ্দিন তালুকদারের মেয়ে ও সাবেক দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।আর আতাউর রহমান খান ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে পাননি।
নেত্রকোণা-১ আসনে এ বছর দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহী।বাদ পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বাবু মানু মজুমদার।নেত্রকোণা-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আশরাফ আলী খান খসরুকে এবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তবে আসনটিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব এডভোকেট শামছুর রহমান (ভিপি লিটন) ও জাকের পার্টির মানিক চন্দ্র সরকারও স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
নেত্রকোণা-৩ (আটপাড়া-কেন্দুয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলকে আবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।এ আসনে মনোনয়ন কিনেছেন সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরাইশী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক আব্দুল মতিন।
নেত্রকোণা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুড়ি) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল হাসানকে।এ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন চলতি বছরের (১১ জুলাই) মৃত্যু বরন করায় পদটি শুণ্য হয়ে যায়, পরে উপ-নির্বাচনে সাজ্জাদুল হাসানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হলে, তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শফি আহমেদ।জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি নব্বইয়ের গণঅভ্যূত্থানে শীর্ষ নেতা ছিলেন।নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীর প্রতীক) অসুস্থ থাকায়, এবার মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন।
এ আসনে মনোনয়ন না পাওয়া অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, তুহিন আহমেদ খান, মো. মিছবাহুজ্জামান চন্দন স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।তাদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন কর্নেল আবু তাহের ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীর প্রতীক) এর সহোদর ছোট ভাই।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
তুহিন আহমেদ আওয়ামী লীগের লন্ডন শাখার নেতা এবং নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।আর মো. মিছবাহুজ্জামান চন্দন স্থানীয় আওয়ামীলীগ রাজনীতির একজন নেতা।আসনটিতে জাতীয় পার্টির ওয়াহিদুজ্জামান আজাদও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনি ফরম নিয়েছিলাম।কিন্তু সেখানে মনোনয়ন আমি পাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা মনোনয়ন পায়নি তারাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন।এরপরেই নেত্রকোণা-৫ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছি।এ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না আসায় একটা সংকট সামনে চলে এসেছে।এসব কাটাতে অতীতের মত এবারও সামনে এসেছি।একজন স্বচ্ছ মানুষ হিসেবে প্রার্থী হয়েছি।নির্বাচনে আশাবাদী আমি, জনগনের ভালোবাসা ও সহযোগীতা পেলে জয় আমার নিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ”।
IPCS News : Dhaka : গোলাম কিবরিয়া সোহেল : নেত্রকোণা।