সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

দেশে সড়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মৃত্যু বাহন মোটর সাইকেল

আপডেটঃ ২:২৮ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ২২, ২০২৩

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- সড়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাহন এখন মোটর সাইকেল শুধুমাত্র দেশে গত সেপ্টেম্বর মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৪ শত জনের অধিক।এর মধ্যে শুধু মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩০ জনের মত।একই মাসে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৫৪টি, যার ১৫০টিই হয়েছে মোটর সাইকেলে।শুধু সেপ্টেম্বর নয়, কয়েক বছর ধরেই সড়কে দুর্ঘটনা ও হতাহত—দুটিতেই শীর্ষে অবস্থান করছে এ দ্বিচক্রযান (দুই চাকার বাহন)।বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনায় উদ্বেগের মধ্যেই দেশজুড়ে পালিত হলো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।দেশে চলাচলের জন্য মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন ক্ষমতা ১৬৫ থেকে ৩৫০ সিসিতে উন্নীত করেছে সরকার।পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন সক্ষমতা ১০০ সিসি বাড়লে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে ২৫০ শতাংশ।

আবার দেশে এত উচ্চ সিসির মোটর সাইকেল চলাচল উপযোগী যোগাযোগ অবকাঠামো নেই।পরিবহন ব্যবস্থাপনাও দুর্বল।ফলে উচ্চ ক্ষমতার এসব মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ও হতাহত আরো বাড়িয়ে দেবে।এমন প্রেক্ষাপটে সিসি সীমা ও মোটর সাইকেলের সংখ্যা—দুটিই নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী দেশে নিবন্ধিত মোটর যানের সংখ্যা প্রায় ৫৯ লাখ।

এর মধ্যে শুধু মোটর সাইকেলই রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪২ লাখ।অর্থাৎ বাংলাদেশে যত যানবাহন আছে, তার ৭২ শতাংশের বেশি মোটর সাইকেল।সারা দেশে গত সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যান বাহনের শীর্ষে ছিল এ মোটর সাইকেল (২২ দশমিক ১২ শতাংশ)।চলতি বছরের আগের আট মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রায় একই চিত্র পাওয়া গেছে।

বিআরটিএ, বুয়েটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের পর থেকেই সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ততা ও হতাহতে বাহনটির অবস্থান শীর্ষে।মোটর সাইকেলের সংখ্যা যত বাড়ছে, বাহনটির দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ততাও তত বাড়ছে।তথ্যানুযায়ী চার চাকার মোটরযানের তুলনায় মোটর সাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ২৯ গুণ বেশি।

কয়েক বছর ধরে দুর্ঘটনার তথ্যে জানাগেছে সড়কে এখন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি।তথ্য বলছে, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার ৪০-৫০ শতাংশ হচ্ছে তরুণ-কিশোরদের মাধ্যমে।হতাহতও তারাই বেশি হচ্ছে।এমন পরিপ্রেক্ষিতে দেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটর সাইকেল নিবন্ধনের অনুমতি দেয়া অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো।

কিশোর বা তরুণদের মধ্যে উচ্চ সিসির মোটর সাইকেল চালানোর প্রবণতা বেশি।৩৫০ সিসির মোটর সাইকেল এ কিশোর-তরুণদেরই বেশি আকৃষ্ট করছে।কিন্তু এ ধরনের মোটর সাইকেল চলাচলের জন্য দেশে উপযোগী সড়ক অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে।পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভীষণ রকমের দুর্বল।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ সিসির মোটর সাইকেল দেশে দুর্ঘটনা ও হতাহত বাড়িয়ে দিতে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখবে।দেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটর সাইকেল নিবন্ধনের অনুমতি দেয়ার পক্ষে সরকারের কর্মকর্তারা যুক্তি হিসেবে বলছেন, মোটর সাইকেলের সিসির সঙ্গে গতিসীমার কোনো সম্পর্ক নেই।সিসি বেশি হলেও যে মোটর সাইকেলে বেশি গতি তোলা যাবে, বিষয়টি এমন নয়।

উল্টো এ ধরনের মোটর সাইকেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশি থাকে।তবে এ যুক্তিকে অত্যন্ত দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করছেন বিশেষজ্ঞরা।তারা বলছেন, ৩৫০ সিসির একটি মোটর সাইকেলে মাত্র ৩ সেকেন্ডে গতি শূন্য থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারে ওঠানো সম্ভব।এটা ঠিক, সেফটি ফিচার বেশি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থাপনা বিশৃঙ্খল।সড়ক অবকাঠামো অনুপযোগী।

এমন অবস্থায় যতই সেফটি ফিচার থাকুক, বাংলাদেশে এগুলো ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।এমন অবস্থায় উচ্চ সিসির মোটর সাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বাহনটির সংখ্যাও সীমিত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা।ক্রমবর্ধমান মোটরসাইকেল ও বাহনটির দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও আজ দেশজুড়ে পালিত হয়ে গেলো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।

দিবসটির কর্মসূচি অবহিত করতে ১৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন সড়কে নিহত হচ্ছেন।এমনকি আমরাও নিরাপদ নই।আমাদের সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তা করতে হলে আমাদের সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।

পরিবহন মালিক থেকে শ্রমিক ও সড়ক ব্যবহারকারী—সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে হবে।তা না হলে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।শুধু ঢাকা শহরে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হলে ১০০ ম্যাজিস্ট্রেটের প্রয়োজন।তবে আমাদের মাত্র পাঁচ-ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট আছেন।

তাই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিষয়ে বিআরটিএ কতৃপক্ষরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা দেখছি, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে।

এমন অবস্থায় আমরা মোটর সাইকেল চালানোর লাইসেন্স প্রদান এবং রাস্তায় মোটর সাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।তবে আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে এসব কাজ করা কঠিন।এজন্য আমরা বলছি, সড়ক নিরাপদ করতে হলে আমাদের সম্মিলিত ভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

 IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।