দেশবরেণ্য ৬ জন কৃতীময় গুণীজনকে সংবর্ধনা
আপডেটঃ ২:১৩ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ২৬, ২০২২
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে দেশবরেণ্য ৬জন কর্মকৃতীময় গুণীজনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।গতকাল শুক্রবার(২৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় নগর ভবনে গ্রিনপ্লাজায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত গুণীজনদের ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন, উত্তরীয় পরিয়ে তাঁদের হাতে ক্রেস্ট ও সংবর্ধনা স্মারক তুলে দেন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন।এছাড়াও অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা স্মারকপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।সংবর্ধিত গুণীজনেরা হলেন, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ.বি.এম খায়রুল হক, আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এ.টি.এম ফজলে কবীর, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, লেখক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ খান এবং শিক্ষাবিদ, নাট্যকার ও লেখক অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ অনুপস্থিত থাকায় তাঁর নিকট প্রেরণের জন্য তাঁর প্রতিনিধিকে উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও সংবর্ধনা স্মারক প্রদান করা হয়।সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত সম্ভাষণে রাসিক মেয়র লিটন বলেন, একসঙ্গে এতো গুণীজনদের সংবর্ধনা দেওয়ার সৌভাগ্য আমরা বেশি পাই না।
দেশবরেণ্য গুণীজনেরা দেশের জন্য, জাতির জন্য, স্বাধীনতার মূল স্রোতকে ধরে রাখবার জন্য, সংবিধানকে সমুন্নত রাখবার জন্যে যা যা করেছেন, সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়।তাঁরা তাঁদের কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৭টি নৌরুট নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধীর সাথে সমঝোতা চুক্তি হয়।ওই ৭টি নৌরুটের মধ্যে ভারতের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী হয়ে রূপপুর ও পাকশী দিয়ে আরিচা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত একটি নৌরুট রয়েছে।
এই রুট চালু করে সারা বছর যদি পদ্মায় নাব্যতা রাখা যায় তবে উভয় দেশ লাভবান হবে।নানা রকম পণ্য আনা নেয়া করা যাবে।পণ্য মুখর হয়ে উঠবে রাজশাহী বন্দর।বিশেষ করে ভারত থেকে আমরা প্রতি বছর কোটি কোটি টন পাথন আমদানি করে থাকি।এই পাথর দিয়ে আমরা রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করি।ভারতের পাকুর ব্যান্ডের পাথর আমরা আমদানি করি।
এই পাথর আমাদের রাজশাহীর বর্ডার থেকে খুব বেশি দূরে নয়।ভারতের ধুলিয়ান থেকে বিহারের পাকুর খুব বেশি দূরে নয়।এই পাথর যদি আমরা বার্জে করে নদী পথে আনতে পারি রাজশাহীতে খুব সহজে তা ঢাকা পর্যন্ত বার্জে করে পৌছে দেয়া যাবে।এতে করে আমাদের আমদানি ব্যয় ও উৎপাদন খরচ কমবে।এই কাজটি করা খুবই সহজ।সামান্য কিছু স্থানে পদ্মা নদীর ড্রেজিং প্রয়োজন।
আপাতত শুধুমাত্র একটি কাস্টমস হাইজ এবং একটি জেটি করলেই এই বন্দরটি চালু করা সম্ভব।রাসিক মেয়র আরো বলেন, রাজশাহী কৃষি প্রধান অঞ্চল।এখানে কৃষিপণ্য নির্ভর শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।এখানে একটি পুর্নাঙ্গ কৃষি বিশ্ব-বিদ্যালয় হওয়া খুবই দরকার।কৃষি বিশ্ব-বিদ্যালয় হলে কৃষি নির্ভর রজশাহীতে এ বিষয়ে রিসার্চ হবে।
যা কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবনে ভূমিকা রাখবে।কৃষির মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও নারীনেত্রী শাহীন আকতার রেণী।অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘোষণা করেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন।
অনুষ্ঠান মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন, সাংবাদিক রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ।অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ.বি. এম খায়রুল হক বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের অক্ষরে লেখা আমাদের সংবিধান।
সংবিধান নিয়ে যেভাবে কাটাছেড়া করা হয়েছে, তা কষ্টের।আপনারা খেয়াল রাখবেন, এই সংবিধানটা যেন আমরা আমাদের বক্ষে ধারণ করি, এটাকে প্রটেক্ট করি।রাজশাহীতে ২০১৫ সালে এক বার এসেছিলাম।এবার এসে দেখছি আমূল পরিবর্তন।রাজশাহীর দৃশ্যমান এই উন্নয়ন প্রমাণ করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, রাজশাহী সবুজে বিবর্তিত।
নিজ চোখে দেখে যেতে পারলাম কী করে একটি নগর জীবন্ত ও সজীব হয়ে ওঠেছে।পুরো দেশ ঘুরে দেখুন এমন পরিচ্ছন্ন ও সুবজ নগরী গড়ে তুলতে পারছি না।রাজশাহী সবুজ ও গণমুখী নগর হিসেবে গড়ে উঠছে।জীবন আর শিক্ষা কখনো আলাদা হতে পারে না।বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আর কোনদিন হবে না।কারণ মানুষের এখনো পণ্য ক্রয়ের সক্ষমতা রয়েছে।
গ্রামের কৃষি শ্রমিকরা এখন প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন।দুর্ভিক্ষ শুধুমাত্র উৎপাদনহীনতার জন্য হয় না, মানসিকতার জন্যই দুর্ভিক্ষ হয়।সবার আগে মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন।প্রখ্যাত সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, রাজশাহীর প্রতি পদে পদে ইতিহাস কথা বলে।রাজশাহীর গম্ভীরা দেশের সংস্কৃতির অঙ্গনে আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে।
যতবার এই রাজশাহীতে এসেছি এই শহরের প্রতি ভালোবাসা ততোই বেড়েছে।রাজশাহী প্রতিটি গুণিমানুষের জন্য নগর উদ্যান।রাজশাহী সবুজ চিরতরুণ নগরী।মেয়র কর্তৃক সংবর্ধনার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, ১৮৯২ এর নভেম্বরে রাজশাহী শহরে এসেছিলেন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর।এরপর ১৯২৮ সালে আরেকবার আসেন।
তিনি যতবার রাজশাহী এসেছেন ততোবার তিনি রাজশাহী দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, তার মন ভালো হয়েছে।রাজশাহীর ঐতিহ্য শিক্ষা নগরীর ঐতিহ্য।অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রাজশাহীর সন্তান।ইতিহাস ঐতিহ্যের নগরী রাজশাহী।এই ভূমিতে জন্মেছেন রাজশাহীর কৃতি সন্তান শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান হেনা।রাজশাহীকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে এই মানুষটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, বিচারকবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, চিকিৎবৃন্দ, আইনজীবীবৃন্দ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরবৃন্দ ও বিভাগীয় প্রধানগণ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন ও শিক্ষকবৃন্দ, স্কুল ও কলেজের প্রধানগণ, গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে নগর ভবনের প্রধান ফটকে পৌছালে সংবর্ধিত গুণীজনদের বর্ণিল আয়োজনে বরণ করে নেওয়া হয়।নৃত্য ও গানে গানে তাঁদেরকে সংবর্ধনা মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে স্বাগত নৃত্য পরিবেশন করেন ধ্রুপদালোকে।
এর আগে শুক্রবার সকালে নগরী সিএন্ডবি মোড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবর রহমানের ম্যুরালে এবং কাদিরগঞ্জে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংবর্ধিত গুণীজনরা।এ সময় রাসিক এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও মেয়রপত্নী বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে শুক্রবার সকাল ১০টায় সংবর্ধিত গুণীজনেরা বিমানযোগে রাজশাহীতে পৌছান।হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরে গুণীজনদের ফুলেল শুভেচ্ছায় স্বাগত জানান রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মেয়রপত্নী বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী।
শুক্রবার বিকেলে নগরীর টিঁ-বাধ পরিদর্শন ও পদ্মায় নৌভ্রমনে যোগ করেন সংবর্ধিত গুণীজনেরা।সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।এরপর রাত সাড়ে ৮টায় নগর পরিভ্রমণ করেন তাঁরা।
আগামীকাল শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বরেন্দ্র জাদুঘর পরিদর্শন, বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে রাজশাহী কলেজ পরিদর্শন, ১২টা ১৫ মিনিটে সরকারি রেশম কারখানা পরিদর্শন এবং দুপুর ১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন সংবর্ধিত গুণীজনেরা।বিকেলে বিমানযোগে তাঁরা রাজশাহী ত্যাগ করবেন।
IPCS News : Dhaka : বাবুল : রাজশাহী।