দিনাজপুর শিক্ষা-বোর্ডে প্রশ্ন-পত্র ফাঁসের পর এবার কর্ম-কর্তাদের দুর্নীতি প্রকাশ্যে !
আপডেটঃ ১:৪৪ অপরাহ্ণ | সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
নিউজ ডেস্কঃ
দিনাজপুর:- দিনাজপুর শিক্ষা-বোর্ডের অধীনে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর এবার বোর্ডের ২ উর্দ্ধতন কর্ম-কর্তার বিরূদ্ধে গুরুত্বর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে চতুর ওই কর্ম-কর্তাগণ দূর্নীতি করার ক্ষেত্র হিসেবে দিনাজপুর জেলা সদর থেকে অনেক দূর নীলফামারী জেলার নিভৃত পল্লীকে বেছে নিয়েছেন।সেখানে টাকার বিনিময়ে একই পরিবারের বিভিন্ন জনকে একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করে এলাকাবাসীকে রীতিমত হতবাগ করে দিয়েছে।বোর্ড কর্ম-কর্তাদের এই দূর্নীতি এখন প্রকাশ্যে আসায় এটি এখন সবার মুখে মুখে।আর অনিয়ম-দূর্নীতির বিস্তারিত তুলে ধরে এলাকাবাসীর পক্ষে বোর্ড চেয়ারম্যান, প্রেস-ক্লাব সভা-পতিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম এলাকার সচেতন যুবক মোঃ সুমন আলী।গত ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি ওই অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার ০৮ নং গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত গনেশ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের গত ৩০ মে ২০২২ তারিখে দাখিলকৃত ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দিনাজপুর শিক্ষা-বোর্ডের বরাবরে প্রয়োজনীয় ফি, কাগজপত্রসহ দাখিল করা হয়।
উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট ২০২২ তারিখে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ মাহামুদুর রহমান ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ফয়জুল ইসলাম আনিস নীলফামারী জেলার গনেশ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান।পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জোনাব আলীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অভিভাবকগণের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য গ্রহন করেন।
উক্ত বক্তব্যে চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী বলেন, বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে কেউ কোন ভাবে অবগত নয়।প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল করিম গোপনে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে অবৈধভাবে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন এই বক্তব্য তদন্তকালে কর্মকর্তাগণ লিপিবদ্ধ করেন।
ওই কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ভার-প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চাচা আবু বক্কর সিদ্দিক, অপর চাচা আলতাফ হোসেন, মজু মিয়া, চাচাতো ভাই সাজু মিয়া, চাচি নিলুফা বেগম, মামা ওহেদুল হক, ভগ্নিপতি জিল্লুর রহমান, ভাবি শেফালি বেগম এবং নিকট বন্ধু শহিদুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলাম।এ সব বিষয় তদন্ত কমিটি অবগত হোন।
এছাড়াও বিদ্যালয়ের অভিযোগ তদন্তের দিন ২ শতাধিক লোকের সমূখে সবাই স্বাক্ষী দেন কোন নির্বাচন হয়নি।এছাড়াও কোন নোটিশ করেননি।ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মৌখিক ও লিখিতভাবে বলেন, এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রাখতে অবৈধ কমিটি অনুমোদন না দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন।
কিন্তু সেখানে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা অত্র স্কুলের অনিয়ম তদন্ত করে পেলেও পরবর্তীতে অফিসে এসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সেই অবৈধ কমিটিকে বৈধ ঘোষনা করেন।স্কুলটির সহকারী শিক্ষক পরিতোষ চন্দ্র সরকার, আনোয়ার হোসেন, শাহীনুর ইসলামসহ অনেকে সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে পূর্বে থেকে আমাদের কোনো কিছু জানানো হয়নি।
আমরা কিছুই জানি না।আত্মীয়-স্বজন দিয়ে এভাবে কমিটি গঠন করা যায়, সেটিও আমরা প্রথম দেখলাম।এ নিয়ে এলাকায় দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা।তাই এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে গণেশ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল করিম বলেন, কমিটিতে আত্মীয়-স্বজন থাকতেই পারে।অত্র এলাকার সবাই তো আমার আত্মীয়।তাছাড়া এটা তো আমি একা করিনি।বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমোদনক্রমে কমিটি হয়েছে।এ নিয়ে কথা বলার কিছু নেই।
বিষয়টি নিয়ে বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা পরস্পরকে দোষারোপ করে পার পেতে চান।মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুর-এর উপ বিদ্যালয় পরিদর্শক মাহমুদুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমি কথা বলতে পারবো না।আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ আবু হেনা স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন।
পরে বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা তো আর তদন্তে যাই না।নিয়মানুসারে উপ-বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ মাহামুদুর রহমান ও সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ফয়জুল ইসলাম আনিস পরিদর্শন শেষে সুপারিশ করলে আমি অনুমোদন দেই।এখানেও সেই কাজটিই হয়েছে।বিষয়টিতে আমাকে দায়ী করা ঠিক হবে না।
সর্বশেষ যোগাযোগ করা হয় দিনাজপুর বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ কামরুল ইসলামের সঙ্গে।তিনি বলেন, ওই স্কুলের কমিটি গঠন নিয়ে অভিযোগের যে ঘটনা, তা আমি শুনেছি।শীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
IPCS News : Dhaka : আব্দুস সালাম : দিনাজপুর।