দিনাজপুরে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ দীর্ঘ ২৫ কিমি: নদী পথ অতিক্রম করে শহরের রাজবাড়ী কান্তজিউ মন্দিরে
আপডেটঃ ৫:৫২ অপরাহ্ণ | আগস্ট ২১, ২০২২
নিউজ ডেস্কঃ
দিনাজপুর:- দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির হতে আড়াইশত বছরের পুরানো ঐতিহ্য ও রাজ পরিবারের প্রথা অনুযায়ী শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ নৌপথে নৌকাযোগে দিনাজপুর শহরের রাজবাটীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দিনাজপুর শহরের সাধুরঘাটে এসে পৌঁছেছে।এদিকে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহের যাত্রার নিরাপত্তার জন্য কাহারোলের কান্তজিউ মন্দির হতে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী পর্যন্ত জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ঘাটে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।বুধবার (১৭ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ৭ টায় দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার কান্তনগরে শ্রী শ্রী কান্তজীউ মন্দির হতে পূজা অর্চনা শেষে শ্রীশ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ পূর্ণভবা নদীর কান্তনগর ঘাটে আনা হয়।সেখানে দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল উপস্থিত থেকে শ্রীশ্রী কান্তজীউ যুগল বিগ্রহ’র নৌবহর যাত্রার বিদায় জানান।
সনাতন ধর্মালম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আরেক রুপ কান্তজীউ বিগ্রহ নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে পূর্ণভবা নদীর দুই তীরে ভক্ত-পূণ্যার্থীর ভীড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উৎসবের আমেজে পরিণত হয়।শ্রীশ্রী কান্তজীউ যুগল বিগ্রহ’র নৌবহরকে বিদায় জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস ধার্মিক মানুষের বৈশিষ্ট্য।
অসা¤প্রদায়িক চেতনার কারণেই এদেশে সম্মিলিতভাবে প্রত্যেকটি স¤প্রদায় ও ধর্মের মানুষসহ অবস্থান করছে।যারা ধর্মকে ধারণ করে না, তারাই উগ্রবাদী সা¤প্রদায়িক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়।ধর্মান্ধতা একটি সমাজের ঐতিহ্য কে নষ্ট করে দেয়।তাই আমরা ধর্মীয় অনুভূতিকে ধারণ করব আর সা¤প্রদায়িকতাকে বর্জন করব।
তিনি বলেন, কান্তজীউ মন্দির থেকে কান্তজীউ বিগ্রহের বিদায় মুহূর্তে লক্ষ মানুষের সমাগম ও মিলনমেলায় কেবলমাত্র হিন্দুরাই সমবেত ছিল না, সকল ধর্মের মানুষদের সমন্বিত শ্রদ্ধা ভক্তি বিশ্বাসে কান্তজীউ বিগ্রহ তিন মাসের জন্য দিনাজপুরের রাজবাড়ীতে গেলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজ দোবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রণজিৎ কুমার সিংহ, কাহারোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুল হাসান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি সুনীল চক্রবর্তী, সাধারন সম্পাদক রতন সিংহ, ডা. ডিসি রায় প্রমুখ।
পরে কান্তজীউ বিগ্রহ পূর্ণভবা নদীর কান্তনগর ঘাট হতে নৌবহর যাত্রা করে দিনাজপুর শহরের সাধুর ঘাটে পৌছে। নৌকাযোগে দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিমি: নদীপথে দিনাজপুর আসার সময় চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী বিগত সময়ে হিন্দু ধর্মালম্বী হাজার হাজার ভক্ত নদীর দু’পারে কান্তজীউ বিগ্রহকে দর্শনের জন্য ভীড় জমান।
বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হিন্দু পূর্ণ্যার্থীরা তাদের বাড়ীর বিভিন্ন ফলমূল, দুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী নিয়ে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে আসেন।এ সময় নদীর দু’কূল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।কান্তনগর ঘাট থেকে দিনাজপুর শহরের সাধুরঘাট পর্যন্ত ৩০টি ঘাটে কান্তজীউ বিগ্রহ বহনকারী নৌকাটি ভিড়ানো হয়।
এ কারণে বিভিন্ন ঘাটে ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।প্রতিটি ঘাটেই পূর্ব থেকে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কান্তজীউ বিগ্রহ সাধুরঘাটে এসে পৌছালে দিনাজপুর রাজদেবোত্তর এষ্টেটের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকীসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা কান্তজিউ বিগ্রহ গ্রহন করেন।
পরে বিগ্রহটি শহরের বিভিন্ন মন্দিরে পুজা-অর্চনা শেষে রাজবাড়ী মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।রাজ পরিবারের রীতি অনুযায়ী কান্তজীউ বিগ্রহ ৯ মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং ৩ মাস দিনাজপুরের শহরের রাজবাড়ীতে অবস্থান করেন।উল্লেখ্য, দিনাজপুরের রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫শ’ বছর আগে।
সেই বংশের রাজা প্রাণনাথ ১৭২২ সালে দিনাজপুর শহর থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার কান্তনগর এলাকায় কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন।১৭৫২ সালে এই মন্দিরের কাজ শেষ করেন তার পোষ্যপুত্র রামনাথ।সেই সময় থেকেই কান্তজিউ বিগ্রহ নয় মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং তিন মাস দিনাজপুর শহরের রাজবাড়িতে রাখা হয়।
জন্মাষ্টমীর একদিন আগে কান্তজিউ বিগ্রহ ধর্মীয় উৎসব-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরের রাজবাড়ীতে নিয়ে আসা হয়।সেই প্রথা অনুযায়ী যুগযুগ ধরে এই নিয়ম চলে আসছে।এই তিনমাসে রাজবাড়ীতে প্রতিদিন প্রভাতী নামকীর্ত্তণ ও প্রতি বাংলা মাসের প্রথম শনিবার কমিটির পক্ষ থেকে ভোগের ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন ভক্ত প্রতিদিন ভোগের ব্যবস্থা করে থাকেন।পরে বুধবার দিবাগত রাত ১২টায় শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী কান্তজিউ মন্দিরে স্থাপন করা হবে।
IPCS News : Dhaka : মাহবুবুল হক খান : দিনাজপুর।