দিনাজপুরে তাবলীগ জামাতের ৩ দিনব্যাপী জেলা ইজতেমা শুরু, শনিবার আখেরী মুনাজাত:
আপডেটঃ ৭:৫৪ অপরাহ্ণ | মার্চ ৩১, ২০২২
নিউজ ডেস্কঃ
দিনাজপুর প্রতিনিধি :- দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী তাবলীগ জামাতের জেলা ইজতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।দিনাজপুর শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত পূণর্ভবা নদীর জেগে উঠাচরে কাঞ্চন সেতুর দক্ষিণে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।শনিবার বেলা ১২টার মধ্যে আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে ৩ দিনব্যাপী ইজতেমা শেষ হবে।ইতোমধ্যে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলাসহ আশপাশের অন্যান্য জেলা-উপজেলা হতে আগত তাবলীগ জামাতের সাথীরা ইজতেমা মাঠে সমবেত হয়েছেন।সকালে ঢাকার কাকরাইলের জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) মাওলানা ইদ্রিস, শীলংকার মেহমান মাওলানা মোঃ নাজিম, বাদ জোহর মাওলানা মোঃ সাইদুর রহমান ও বাদ আসর বিশ্ব তাবলীগ জামাত নিজাম উদ্দিন ভারতের মেহমান মুফতি আমজাদ বাইক বয়ান (আলোচনা) করেন।
বাদ মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত ভারতের বিশ্ব তাবলীগ জামাত নিজাম উদ্দিনের মেহমান মাওলানা ওমর সাহেব উর্দ্দু ভাষায় বয়ান করেন ও বাংলায় অনুবাদ করেন কাকরাইলের জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) মাওলানা মোঃ ইদ্রিস।ইজতেমার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার আলোচকগন তাদের আলোচনায় কিভাবে মানুষ আল্লাহর তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ব, রিসালাত ও আখেরাতের প্রতি ইমান আনতে পারে, কোন পথে চললে মানষ দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবি (সফলতা) অর্জন করতে পারবে সেসব বিষয়ে বয়ান করা হয়।
ভারতের মাওলানা মোঃ আমজাদ বাইক বাদ আসর তাঁর বয়ানে বলেন, আল্লাহ পাক মানুষকে দুনিয়ার কামিয়াবি বা সফলতার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন দিয়েছেন, যারা এসব নিয়ম-কানুন মেনে চলবে তারা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হবেন।তিনি বলেন, প্রতিটা মানুষকে আল্লাহর হুকুম ও নবীর তারিকা বা পথে চলতে হবে। তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব হবে।শুধু ইমান আনলে হবে না।
ইমান আনার সাথে সাথে আমল করতে হবে, ইমানের মধ্যে এখলাস আনতে হবে, তবে মানুষ কামিয়াব হবে।তিনি বলেন, মানুষকে আল্লাহর গোলামী বা আল্লাহর আদেশ পালন করতে হবে, আর যখন মানুষ আল্লাহর গোলামী করবে, তখন পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণি মানুষের গোলামী করবে।তাই দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াব হতে হলে মানুষকে আল্লাহ হুকুম ও নবীর তরিকা বা পথে চলতে হবে।
এদিকে শুক্রবার সকালে বয়ন করবেন ভারতে মুফতি ফারুক আহমদ আর তরজমা (অনুবাদ) করবেন কাকরাইলের জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) মাওলানা মোঃ বোরহান।শুক্রবার ইজতেমা প্যান্ডেলে জুমার নামাজ আদায় করা হবে।এটি জেলার সর্ববৃহৎ জুমার নামাজের জামাত হবে বলে জানিয়েছেন তাবলীগ জামাতের কয়েকজন মুরব্বি।
দিনাজপুর তাবলীগ জামাতের আমীরে ফায়সাল ও তিন দিনব্যাপী ইজতেমার জিম্মাদার (দায়িত্বশীল), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল হাকিম জানান, ইজমেতায় ঢাকার কাকরাইলের জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) মাওলানা মোঃ ইদ্রিস, মুফতি মোঃ বোরহান, আব্দুল বাতেন, মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোক্তার হোসেনসহ আরো কয়েকজন জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) দিনাজপুরের ইজমেতায় এসেছেন।
ভারতের বিশ্ব তাবলীগ জামাত নিজাম উদ্দিনের মাওলানা মোঃ ওমর, মুফতি আমজাদ বাইক ও মুফতি ফারুক আহমদ এই ৩জন মেহমান বৃহস্পতিবার দিনাজপুরে এসে পৌঁছেছেন। এছাড়া শ্রীলংকার একটি জামাতও এরই মধ্যে ইজতেমায় এসে পৌঁছেছেন।তিনি জানান, এই মেহমানগন ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সামনে বয়ান পেশ করবেন।
শনিবার বেলা আনুমানিক ১২টায় আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে ৩ দিনব্যাপী এই ইজতেমা শেষ হবে।এদিকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য এরই মধ্যে অজু-গোসলের পানি সরবরাহের জন্য ২০টি টিউবওয়েল, একটি সাবমারসেবল পাম্প, ৩টি মটর স্থাপন করা হয়েছে।লাইটিংয়ের জন্য বৈদ্যতিক জেনারেটর বসানো হয়েছে।
এছাড়া নিরাপদ স্যানিটেশনের জন্য দুই শতাধিক টয়লেট তৈরা করা হয়েছে।বিদেশী মেহনান ও তাবলীগ জামাতের বৃদ্ধ সাথীদের জন্য মাঠের উত্তর পাশে খাস কামরা (বিশেষ কক্ষ) তৈরী করা হয়েছে।এই খাস কামরায় আগত বিদেশী মেহমান ও তাবলীগ জামাতের বৃদ্ধ সাথীরা থাকবেন বলে তাবলীগ জামাতের জিম্মাদাররা (দায়িত্বশীলগন) জানিয়েছেন।
ইজতেমায় প্যান্ডেল তৈরী, টয়লেট নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য টিউবওয়েল স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা জিম্মাদার (দায়িত্বশীল) নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।আর এসব স্থাপনের সব ধরনের খরচ তাবলীগ জামাতের সার্থীরা নিজ উদ্যোগে করেছেন।কারো নিকট থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা নেয়া হয়নি।
একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি ও সওয়াবের আশায় সবাই স্বেচ্ছায় এসব কাজ করেছেন তাবলীগ জামাতের সাথীরা।অপরদিকে ইজতেমা উপলক্ষে দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠে আগত মুসল্লিদের জন্য বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে ইজতেমা মাঠের উত্তর পাশে দোকানীরা তাদের দোকান সাজিয়েছেন।
টুপি, তসবিহ, জায়নামাজ, মেছওয়াক, চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির জন্য দোকানীরা তাদের দোকান তৈরী করেছেন।উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালের ৩১ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথমবারের মত দিনাজপুরে ৩দিনব্যাপী তাবলীগ জামাতের জেলা ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
IPCS News : Dhaka : মাহবুবুল হক খান : দিনাজপুর