দিনাজপুরের আস্করপুর ইউনিয়নে খাদ্য-বান্ধব কর্মসূচীর ভূয়া কার্ড পরিবর্তন করায় ইউপি চেয়ারম্যানকে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগ
আপডেটঃ ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | আগস্ট ২১, ২০২২
নিউজ ডেস্কঃ
দিনাজপুর:- দিনাজপুর সদর উপজেলার আস্করপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যের নামে বরাদ্দ দেয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ভূয়া কার্ড পরিবর্তন করায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে হেয় প্রতিপন্ন, তাকে লাঞ্চিত ও তার বিরুদ্ধে ষড়যেন্ত্রের অভিযোগ পাওয়া গেছে।দিনাজপুর সদরের আস্করপুর ইউনিয়ন পরিষদে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির আওতায় ১ হাজার ৭ শত ৫৪ জন হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে এই ১০ টাকা কেজি দরের চাল বছরের ৫ মাস ৩০ কেজি করে প্রদানের কর্মসুচি চালু আছে।এই কর্মসূচিতে আস্করপুর ইউনিয়নের তালিকায় অত্র ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য জাকিয়া সুলতানা চন্দন ১০ টাকা কেজি চালের সুবিধাভোগির নাম ও সাবেক আরোও কয়েকজন ইউপি সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যে সকল পরিবারের সদস্যরা ভিজিডি, বয়স্কভাতা, বিধুবাভাতা, স্বামী পরিত্যক্তভাতা, ভিজিএফসহ সরকারি অন্য কোনো একটি সুবিধা অর্থাৎ যে কোন একটি ভাতা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রহণ করে থাকেন তারা এই কর্মসূচির আওতায় আসবেন না।
এ বিষয়গুলি পর্যালোচনা করে আস্করপুর ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদ খাদ্যবন্ধব কর্মসূচির কিছু নাম পরিবর্তন করে প্রকৃত হতদরিদ্র মানুষের নাম অন্তর্ভূক্ত করেছে।আস্করপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডে কয়েকটি কার্ডের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
যারা এক সময় এই কার্ডের মাধ্যমে দশ টাকা কেজি চাল পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।বর্তমানে তারা পাকা ছাদবিশিষ্ট বাড়ী তৈরি করেছেন এবং সরকারের অন্যান্য সুবিধা ভোগী।এ ধরনের কিছু লোকের কার্ডের নাম পরিবর্তন করে যারা প্রকৃত হতদরিদ্র মানুষ তাদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ জানান, তার ওয়ার্ডের বেশ কিছু কার্ডের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।যারা একসময় হতদরিদ্র ছিলেন এখন তারা স্বাবলম্বী বা তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল হয়েছে, যারা এক সময় গ্রামে থাকতেন এখন চাকরির জন্য রাজধানীসহ দেশের অন্যন্য জায়গায় বসবাস করছেন কেবল তাদের নাম পরিবর্তন করে প্রকৃত হতদরিদ্র-অসহায় ব্যক্তির নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম বা স্বজনপ্রীতির কোন সুযোগ নেই।আরেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ মহসিন জানান, আমার ওয়ার্ডে এর আগের যিনি ইউপি সদস্য ছিলেন তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বেশ কয়েকটি কার্ড নিয়েছিলেন।
যেহেতু বর্তমানে তারা স্বচ্ছল এ কারণে তাদের কয়েকটি কার্ডের নাম পরিবর্তন করে তার পার্শ্ববর্তী গ্রামের যারা প্রকৃত হতদরিদ্র বা যারা এই কার্ড পেলে সত্যই উপকৃত হবেন তাদেরকে এই কার্ড দেয়া হয়েছে।সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য মোছাঃ রোমানা পারভীন জানান, আমার নির্বাচনী ওয়ার্ডে যারা স্বাবলম্বী বা স্বচ্ছল হয়েছেন এমন কিছু ব্যক্তির কার্ড পরিবর্তন করা হয়েছে।
আস্করপুর ইউনিয়নের আওয়ামী যুব মহিলা লীগের নেত্রী এবং বর্তমান সংরক্ষিত আসনের সদস্য জাকিয়া সুলতানা চন্দন তিনিও এই কার্ড নিয়েছেন এবং তার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কিছু কার্ড নিয়েছেন।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংরক্ষিত আসনের সদস্য জাকিয়া সুলতানা চন্দন বলেন, আমি কার্ড নিয়েছি।আমি তো এই চাল কিনে নেই।তাই আমি এই কার্ড নিতেই পারি।
তিনি আরো বলেন, আমি রাজনীতি করি তাই কার্ডের চাল উত্তোলন করে আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিলি করে দেই।মনসুর আলী নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর নতুন কার্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলেন, আমার স্ত্রীসহ এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে।আমি অটোরিক্সা ভাড়া খাটিয়ে জীবন যাপন করি।বাড়ী ভিটা ছাড়া আমার কিছুই নেই।আমি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজি চালের একটি কার্ড পেয়েছি।
এই কার্ড পাওয়ায় আমি অনেক উপকৃত হয়েছি।এ ব্যাপারে আস্করপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যেন্ত্র লিপ্ত হয়েছে।আমি চতুর্থ বারের মতো এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছি।১৯৯৭ সালে সাবেক রাষ্ট্রতি মরহুম জিল্লুুর রহমানের হাত থেকে আমি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত একজন চেয়ারম্যান।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তার কিছু লোককে দিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও দূর্নীতি করে গেছেন।সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যারা প্রকৃত হতদরিদ্র মানুষ বা সরকারের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না তাদেরকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়েছে।বর্তমান পরিষদের সাথে আলোচনা করে যারা একের অধিক সুবিধা গ্রহণ করে তারা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় আসবে না।
এ ধরনের কিছু ব্যক্তির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।আগের জনপ্রতিনিধিরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এমন ব্যক্তির নামে ভূয়া তালিকা তৈরি করে নিজেরা ওই কার্ডের সুবিধা ভোগ করেছেন।যারা প্রকৃত হতদরিদ্র মানুষ তাদেরকে আমরা এই কার্ডগুলো প্রদানের ব্যবস্থা করেছি।আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন, আমার মর্যাদা ও সুনাম ক্ষুন্ন করতে কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।
তিনি বলেন, ইউপি সদস্যরা যেহেতু সরাসরি হতদরিদ্র মানুষের সাথে চলাফেরা করেন তাই আমিও শতভাগ নিশ্চিত আমার ইউপি সদস্যরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড পরিবর্তনের কাজটি সম্পন্ন ভিত্তিতে করেছেন।
উল্লেখ্য, আলহাজ্ব মোঃ আবু বকর সিদ্দিক ১৯৯২-১৯৯৮, ১৯৯৮-২০০৩, ২০১১-২০১৬ ও সর্বশেষ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে চতুর্থবারের মত আস্করপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
IPCS News : Dhaka : মাহবুবুল হক খান, দিনাজপুর।