রবিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

দিনাজপুরবাসীর প্রত্যাশা: নতুন দিগন্তের সূচনা

আপডেটঃ ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | জানুয়ারি ০৯, ২০২৫

নিউজ ডেস্কঃ

দিনাজপুর:- দিনাজপুরবাসী গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২ জানুয়ারির মধ্যে দেখেছে এক অনন্য দৃশ্যপট। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা—শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, পল্লী উন্নয়ন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন—দিনাজপুর সফর করেছেন। তাদের এই সফর স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল ও আশার সঞ্চার করেছে।

২৮ অক্টোবর ২০২৪ হিলিতে এক আলোচনা সভায় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আলেমদের ভূমিকার উপর জোর দিয়ে বলেন, “যারা দেশের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেন তারা দেশপ্রেমিক হতে পারেন না।” পাশাপাশি, তিনি আসন্ন হজের খরচ কমানোর ঘোষণা দেন।১৬ নভেম্বর ২০২৪ সেতাবগঞ্জ চিনিকল পরিদর্শন শেষে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালু করতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তিনি আখচাষিদের জন্য ১০০ কোটি টাকার নতুন বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে ভূমি দস্যুদের দমন করে চিনিকলের জমি উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দেন।২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ কাহারোলে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সরকার সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে এই কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।২ জানুয়ারি ২০২৫ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে টিসিবি ডিলারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানির কথা জানান। তিনি বলেন, “কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় চালের দামের ভারসাম্য রক্ষায় সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে।”

দিনাজপুরবাসীর জন্য আরও চমক ছিল দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের আগমন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দুবার এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একবার দিনাজপুর সফর করেছেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে এমন ঘটনা দিনাজপুরের ইতিহাসে বিরল।স্থানীয়রা বলছেন, এতদিন দিনাজপুর কেন্দ্রীয়ভাবে উপেক্ষিত ছিল। উন্নয়ন প্রকল্প বা সুযোগ-সুবিধা বরাবরই সীমিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক তৎপরতা তাদের মধ্যে নতুন আশার জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা শিল্পায়ন, বাণিজ্য, এবং পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে দিনাজপুরের দীর্ঘদিনের অবহেলা দূর হবে।

স্থানীয়রা আরও বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে দিনাজপুর অবহেলিত ছিল। শহরের প্রধান রাস্তাগুলি বেহাল দশায় পড়ে ছিল। সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবে তা ছিল না। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর রাস্তাঘাটের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে, যা আগে দেখা যায়নি।”রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে যে দিনাজপুর এখন কেন্দ্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কেউ মনে করছেন এটি আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সরল। তারা চান পাকা রাস্তা, কর্মসংস্থান, ভালো স্কুল-কলেজ এবং উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা।

স্থানীয় বাসিন্দা মহাম্মদ আলী বলেন, “দিনাজপুরে এত বড় বড় মানুষ আসছেন, এটা ভালো দিক। যদি তারা কিছু উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করেন, তাহলে আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।”দিনাজপুরবাসী এখন উন্নয়নের প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছে। সময়ই বলে দেবে, এই তৎপরতা শুধু আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি সত্যিকার পরিবর্তন আনবে। তবুও, তারা আশায় বুক বেঁধে আছে।

IPCS News : Dhaka : আব্দুস সালাম : দিনাজপুর।