ট্রেন নিরাপত্তার চোখ অন্ধ নিবিঘ্নে ঘটছে নাশকতা, চলছে টিকিট বানিজ্য
আপডেটঃ ২:৩৯ অপরাহ্ণ | এপ্রিল ২৪, ২০২৪
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:-নতুন নতুন রেলপথ, আনকোরা কোচ, অনলাইন টিকিট ও আইকনিক স্টেশনের মতো অবকাঠামো উন্নয়নে সাড়া ফেললেও নিরাপত্তা প্রশ্নে প্রযুক্তির ধারেকাছেও যেতে পারছেনা বাংলাদেশ রেলওয়ে।যার ফলে রেলের নিরাপত্তায় এখনও চলছে ‘মান্ধাতা আমলের।এখনও রেলস্টেশন ও ট্রেনের কোচের মধ্যেকার নিরাপত্তাও জনবল নির্ভর।যার কারনেই মাঝেমধ্যেই রেল খাতে বড় ধরনের নাশকতাকাণ্ড ঘটিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনৈতিক সহিংসতার রোষানলে পড়েছিল পুরো রেলপথ।চলন্ত ট্রেনে আগুন,কোচের ভেতরে আগুন, রেলপথ উপড়ে ফেলা, স্লিপার ও স্লিপারের নাট বল্টু খুলে ফেলার মতো কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছিল দুর্বৃত্তরা।নাশকতার আশংকায় সর্বদা আশংকিত ছিলো ট্রেন যাত্রীরা।সেই সময় নাশকতা ঠেকাতে তড়িঘড়ি করে কিছু স্টেশন ও কোচের ভেতর ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসিয়েছিল রেল কতৃপক্ষ।
এছাড়া রেলওয়ে কিছু স্পর্শকাতর জায়গায়ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে।তবে কিছুদিন না যেতেই এসব ক্যামেরা অকার্যকর বা অন্ধ হয়ে যায়।যদিও অনেক আগে থেকেই চীন ও কোরিয়া থেকে আনা বেশ কিছু কোচের ভেতর সিসি ক্যামেরা যুক্ত আছে।তবে অজানা কারণে তা সচলের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই রেলওয়ে কতৃপক্ষের।
এতে রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।ট্রেনের কোচের ভেতরের টিকিট বাণিজ্য প্রকাশ্যে আসার ভয়ে ক্যামেরার চোখ ‘অন্ধ’ রাখা হয়েছে বলে যাত্রীদের আদি অভিযোগ বিংশ শতাব্দীতে এসেও।এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ রেলস্টেশনেও নেই সিসি ক্যামেরা।এতে স্টেশন ঘিরে নানামুখী অপরাধ প্রাথমিক পর্যায়েও শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকদের ভাষ্য, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা কোচে যেসব ক্যামেরা যুক্ত আছে, সে গুলো কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় চালু হবে–এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য রেলের কাছে নেই।এখন সচলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কোচ বিক্রেতা কোম্পানির সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোন সাড়া মিলছেনা,যার কারনে সিসি ক্যামেটা গুলো চালু করতে পারছেনা রেল।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ রেলের নিরাপত্তায় অনেক দেশে উন্নত নানা প্রযুক্তির ব্যবহার থাকলেও বাংলাদেশ রেলওয়েতে আধুনিক প্রযুক্তির কোনো কিছুই নেই।রেলের ভেতর চালক (লোকোমাস্টার), পরিচালক (গার্ড) ও অন্য সহযোগীদের মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল ফোন, তাও আবার তাদের ব্যাক্তিগত খরচে চলে।কোনো অঘটন ঘটলে জনবল নির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর ভর করতে হচ্ছে।
বেশি নাশকতার সৃস্টি,ছিনতাই, চরমে আসলে মাঝেমধ্যে মোতায়েন করা হয় আনসার সদস্য।দুর্ঘটনা কমে গেলে তুলে নেওয়া হয় তাদের।রেল কর্তৃপক্ষ, রেলওয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাশকতার পর রেলের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক বৈঠকে ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে নানা সিদ্ধান্ত হয়।
সে সবাই সিদ্ধান্তঃ টেবিল থেকে ফাইলেই সীমাবদ্ধ থাকে।নাশকতা রোধে জরুরি ভিত্তিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ও ট্রেনের বগিতে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল।তড়িঘড়ি করে রেলের ভেতরে বসানো এসব ক্যামেরা তেমন কাজে আসেনি।এছাড়া রেলের নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
সেখানেও উঠে আসে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কেনা বগির ভেতরে সিসি ক্যামেরা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিল্টইন ক্যামেরা, ডিভিআর ও লাইন বুঝে নেওয়া হয়নি।ক্যামেরা বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।রাজশাহী রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা পথের বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা, ধূমকেতু, এক্সপ্রেসের বগিতে আধুনিক সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।তবে কোনো ক্যামেরাই সচল নয়।
রাজশাহীর মত ঢাকা-চট্টগ্রাম পথের সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ঢাকা-কক্সবাজার পথের কক্সবাজার ও পর্যটন এক্সপ্রেস, খুলনার চিত্রা, সুন্দরবনের একই অবস্থা।সিসি ক্যামেরা গুলো জন্ম থেকেই অন্ধ।রাজশাহী ও কমলাপুর স্টেশনের পাশেই বড় দেয়ালঘেরা স্থানে শতকোটি টাকা ব্যায়ে রেলের ‘ওয়াশপিট’ স্থাপন করা হলেও চালুর পরথেকেই সেগুলো অকেজো হয়ে আছে।
রাজশাহী ইয়ার্ডে প্রতিটি রেল একবার গন্তব্যে আসা-যাওয়ার পর ধোয়ামোছা ও মেশিন সরঞ্জাম ঠিকঠাক আছে কিনা, তা দেখভালের জন্য ওয়াশপিটে তোলা হয়।২২ এপ্রিল সোমবার ইয়ার্ডের ওয়াশপিটে গিয়ে দেখা যায়, ধুমকেতু এক্সপ্রেসের বগি ধোয়ামোছার কাজ চলছে।১৪ বগির কোনটাই সিসি ক্যামেরা চোখে পড়েনি।এছাড়া ওয়াশপিটের ক্যামরা অন্ধ।
অথচ সম্প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে এসব ক্যামেরা লাগানো হলেও এখন অচল বলে জানান সেখানকার কর্মীরা।ওয়াশপিটে রেলের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিনা টিকিটে রেলে ভ্রমণ করায় কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয়কে টিকিট কালেক্টর ধরেছিলেন।ভয় দেখিয়ে প্রথমে টিকিটের কয়েক গুণ জরিমানা আদায়ের চেষ্টা করেন।
পরে অল্প ঘুষের বিনিময়ে রক্ষা পান তিনি।এটা ফোনে ওই আত্মীয় আমাকে জানান।এর পর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে উল্টো আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা হয়।রেলের ওই কর্মী বলেন, ভেতরে ক্যামেরা চালু হলে অনেকের উপরি রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে।এ জন্য দিনের পর দিন তা অচল।
২১ তারিখ রাতে ঢাকাগামী ধুমকেতু ট্রেনের মসজিদ ঘরে ঠাসাঠাসি করে বসে ছিলো ২২ জন্য টিকিট বিহীন যাত্রী।তাদের টিকিট আছে কিনা জানতে চাইলে, করিম নামের একজন যাত্রী বলেন,আমরা কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে উঠেছি।প্রতিজন ৫০০ টাকার চুক্তিতে ঢাকা যাচ্ছেন তারা।ঘটনাটি তৎক্ষনাৎ ছবিসহ টিকিট বিহীন যাত্রীভর্তী মসজিদ ঘরের ছবি পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপকে হোয়েটএ্যাপে দেয়া হয়ে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে ৩৬টি স্টেশনে সিসি ক্যামেরা আছে।অর্থ পাওয়া সাপেক্ষে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে বসানো হবে।ঈশ্বরদীসহ দুটি স্টেশনে ৭৩টি সিসি ক্যামেরা বসাতে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।এছাড়া চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা কোচে সিসি ক্যামেরা যুক্ত অবস্থায় আছে।
তবে কোড এবং ভাষাগত সমস্যার কারণে এ গুলো সচল করা যাচ্ছে না।দ্রুত যাতে ক্যামেরা চালু হয়, সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।বগির ভেতরে টিকিট নিয়ে কারসাজি ও চোরাচালান নির্বিঘ্ন করতে ক্যামেরা সচল হচ্ছে না–এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ অভিযোগ সঠিক নয়।সিসি ক্যামেরার চোখ দ্রুত খুলে দেওয়া হবে।
যেসব কোচ ও স্টেশনে সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানে পর্যায়ক্রমে লাগাব।সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধীরা ভয় পায়।অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে গেলেও দ্রুত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়।কোনো জায়গা আমরা ক্যামেরার আওতাহীন রাখতে চাই না।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।