“জিম্মি ক্রেতা বিক্রেতা” রাজশাহীর আম বাজারে খাজনার নামে চলছে নিরব চাঁদাবাজি
আপডেটঃ ১২:২৯ অপরাহ্ণ | মে ৩১, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- চলছে আমের মৌসুম।আম বেচা-কেনায় স্থায়ী হাটের পাশাপাশি বসেছে ছোটখাটো আম হাট।আর এ-ই হাট গুলোতে খাজনার নামে চলছে নিরব চাঁদাবাজি।এমনটাই অভিযোগ ক্রেতা বিক্রেতাদের।রাজশাহীর স্থায়ী সর্ববৃহৎ আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজার।এই আম বাজার ঘিরে ইজারদারের লোকজন খাজনার নামে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।ভুক্তভোগীরা বলছে, হাট ইজারা দেওয়ার পর থেকে, উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় ইজারদারের লোকজন আম ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে জোরপূর্বক মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।এমনকি বাজার এলাকা দিয়ে কেউ নিজ বাগানের আম আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি অথবা কুরিয়ার সার্ভিস নিয়ে গেলেও প্রতি কেজিতে নেয়া হচ্ছে খাজনা।শুধু তাই নয় এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে ইজারদারের লোকজন তাদের বিভিন্নভাবে মানষিক এমনকি শাররিক হয়রানি করছে।
ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করলেও কোনো প্রতিকার হয়নি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বানেশ্বর হাটের এক খাজনা আদায়কারীরা জানান, হাটের আসল ইজারাদার প্রায় ৫৫ লাখ টাকায় শুধু আমের বাজার সাব লিজ দিয়েছে।ওই টাকা তুলতে আম নিয়ে যেই আসুক তারা প্রতি কেজিতে এক টাকা হারে খাজনা নিচ্ছেন।
এ ছাড়া খাজনা আদায়ের জন্য বানেশ্বর বাজারের চারদিকে কমিশন চুক্তিতে তারমত লোকজন রাখা হয়েছে।৩১ মনে বুধবার দুপুরে সরেজমিনে বানেশ্বর আম বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বানেশ্বর-শিবপুর বাজারের মাঝামাঝি কলাহাটের কাছে একদল যুবক আম বহনকারী বিভিন্ন যানবাহনের গতিরোধ করছে।
ওই যুবকদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে বানেশ্বর হাটের ৫০ ও ১০০ টাকার খাজনা আদায়ের রসিদ রয়েছে।তবে খাজনার নামে আম বহনকারী ভ্যানে থাকা প্রতি ক্যারেটের জন্য তারা আদায় করছেন ২০ থেকে ৫০ টাকা।এর বিপরীতে কেউ খাজনার রসিদ চাইলে আদায়কারীরা ৫০ টাকার একটি রসিদ ধরিয়ে দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী আম ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বলেন, জেলার এই বৃহৎ আমের মোকামে এবার খাজনা আদায়ের নামে চলছে জুলুম।হাট কমিটির লোকজন এবার ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে জোর করে আগের বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণের বেশি টাকা আদায় করছে।এখানে ইজারদার শুধুমাত্র নামে আছে।পুরো বাজার চালাচ্ছে সিন্ডিকেট।
আকবর আলী নামের একজন ভ্যানচালক বলেন, বাজারে এক ভ্যান (২০ ক্যারেট) আম বিক্রি করতে আসছি।সঙ্গে আমের মালিক নাই।অথচ বাজারে যাওয়ার আগেই এরা আমার কাছে প্রতি ক্যারেটে ৫০ টাকা করে খাজনা চাচ্ছে।আমি মোট ১০০ টাকা দিতে চায়েছি, কিন্তু তারা সেটা নিবে না।অনেক অনুরোধ করে ২৫০ টাকায় সমাধান হয়েছে।
অনলাইন মাধ্যমে আম বিক্রি করে আবু তাহের নামের এক ব্যক্তি।তিনি বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন বাগান ঘুরে আম কিনি।পরে ক্রেতার চাহিদা অনুসারে তা কার্টনে ভরে নিয়ে বানেশ্বরেই যেতে হয়।কারণ কুরিয়ার সার্ভিসের অফিস গুলো সবই বানেশ্বর বাজারে।বাজারে ঢুকলেই বাজার সিন্ডিকেটরা ঘিরে ধরে জোরকরে টাকা আদায় করে।
আজ বুধবার ছয় কার্টন আম পাঠাতে আমাকে ২৫০ টাকা খাজনা দিতে হয়েছে।অথচ তারা রসিদ দিয়েছে মাত্র ৫০ টাকার।তিনি আরও বলেন,বাজারে বসে কেনা বেচারা জন্য খাজনা দেয়ার নিয়োম।তবে এই বাজার দিয়ে আমসহ যেকোন পান্য বাজার দিয়ে গেলেই খাজনার নামে আদায় করে টাকা।আমরা এখানে আম কেনাবেচা করি না।
অথচ এভাবেই প্রতিনিয়ত আমাদের কাছ থেকে তারা জোরপূর্বক টাকা আদায় করছে।বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।তবে এ বিষয়ে বানেশ্বর হাট ইজারদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমের মোকাম সাব লিজ দিলেও সেটা একটা নিয়মের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।
খাজনা আদায়কারীদের বলা হয়েছে, প্রতি ক্যারেটে ১০ টাকা নিতে।আর দু-এক ক্যারেট নিজস্ব আম কুরিয়ার করতে এলে, কোনো খাজনা দিতে হবে না।তিনি আরও বলেন, কেউ অতিরিক্ত খাজনা নিচ্ছেন কি না সেটা আমার জানানাই, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ বলেন, মহাসড়কে যাতায়াতকারী অথবা অনলাইনের মাধ্যমে যারা শুধু আম কুরিয়ার করতে আসেন তাদের কাছ থেকে ইজারাদার কোনো প্রকার খাজনা নিতে পারবে না।যারা বাজারে আম কেনা-বেচা করবে, শুধু তারাই খাজনা দেবে।
ইউএনও আরও বলেন, আম বাজারের খাজনা আদায়ের বিষয়টি নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে হাট ইজারাদারের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধান করা হবে।শুধু থানেশ্বর বাজার নয়,একই চিত্র রাজশাহীর সকল স্থায়ী-অস্থায়ী আমবাজারের।
জেলার মোহনপুর, পবা, পুঠিয়া, গোদাগাড়ী ও নগরীর নওহাটা, শাল বাগান,কোট বাজার,শিরোইলসহ সকল বাজারের একই চিত্র।সবাই খানেই বাজার সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি ক্রেতা বিক্রেতারা।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।