চলতি মৌসুমে রাজশাহী থেকে ৩ কোটি টাকার আম রপ্তানির সম্ভাবনা ,চুক্তিবদ্ধ রাজশাহীর ২২০ চাষি
আপডেটঃ ২:৫৬ অপরাহ্ণ | মে ৩১, ২০২২
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- রাজশাহী থেকে চলতি মৌসুমে প্রায় তিন কোটি টাকার আম রপ্তানির আশা করছে কৃষি বিভাগ।জেলার বাঘা উপজেলার ২২০ জন চাষি প্রায় ৩০০ মেট্রিক টন আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির উপযোগী করে চাষ করেছেন।এই চাষিরা রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তিও করেছেন।কয়েকদিনের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ চাষিরা আম নামাতে শুরু করবেন।তবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে রপ্তানিকারকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হননি এমন একজন চাষি ইতোমধ্যে ৫০০ কেজি গোপালভোগ আম সুইডেনে পাঠানোর জন্য গাছ থেকে নামিয়ে রপ্তানিকারকের কাছে পাঠিয়েছেন।রাজশাহী নগরীর জিন্নানগর এলাকায় আনোয়ারুল ইসলাম নামের এই ব্যক্তির আমবাগান।তিনি রাজশাহী এগ্রো ফুড সোসাইটির সভাপতি।প্রতিবছরই তিনি তাঁর বাগানের ফ্রুট ব্যাগিং করা আম বিদেশে পাঠিয়ে থাকেন।
বাঘা ছাড়া অন্য কোন স্থানের চাষিদের চুক্তিবদ্ধ না করানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগ শুধু বাঘা উপজেলার চাষিদের কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আনে।কিন্তু আম তো রাজশাহীর সবখানেই হয়।পবা থেকেও আম যায়।বাঘার চাষিদের পুরনো একটা তালিকা কৃষি বিভাগের কাছে আছে এবং শুধু তাঁরাই কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আসে।
আমাদের যেহেতু কিছু বলা হয় না, তাই নিজেদের মত করে আম পাঠাই।আনোয়ারুল জানান, এনজেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এন হোসেন সজলের মাধ্যমে তিনি সুইডেনে আম পাঠাচ্ছেন।শুক্রবার আম নামানোর পরই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এনজেল গ্রুপ শনিবার উড়োজাহাজে করে আম নিয়ে যাবে।তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাগিং করা আম খুবই ফ্রেশ।
আমের কাছে কীটনাশক তো দূরের কথা, একটা পিঁপড়াও যেতে পারে না।তাই হট কেকের মত আমার আম শেষ হয়ে যাচ্ছে।আনোয়ারুল ইসলাম শুক্রবার থেকেই রপ্তানির উদ্দেশ্যে আম পেড়ে ঢাকায় পাঠানো শুরু করলেও সে খবর নেই কৃষি বিভাগের কাছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাঘা উপজেলার প্রায় ২২০ জন চাষি ৩০০ মেট্রিক টন আম দেবেন বলে হটেক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।এদের হিসাবটাই শুধু আছে।তবে চাষি ও রপ্তানিকারকদের উদ্যোগেই উড়োজাহাজে আম পাঠানো হয় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।এই ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা নেই।
বাঘা উপজেলার আমচাষি শফিকুল ইসলাম সানা জানান, গত কয়েকবছর ধরেই তিনি রপ্তানিকারকের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম পাঠাচ্ছেন।এবারও ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে রপ্তানি উপযোগী করে আম চাষ করেছেন।১ জুন থেকে তিনি আম নামাবেন।তিনি বলেন, আমরা রপ্তানি উপযোগী বেশি আম উৎপাদন করতে পারি, কিন্তু রপ্তানি হয় কম।
তবে এবার অন্য বছরের চেয়ে আমাদের আমের চাহিদা বেশি।সেই হিসেবে মনে করছি রপ্তানি বাড়বে।বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চুক্তিবদ্ধ চাষিদের আমরা প্রশিক্ষণ দেই।তাঁদের বাগানের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা শেখানো হয়।ব্যাগিং পদ্ধতিতে ফ্রেশ আম উৎপাদনের বিষয়টিও তাদের শেখানো হয়।এই কাজটি শুধু বাঘা উপজেলায় হয়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চুক্তিবদ্ধ চাষিরা লক্ষণভোগ বা লখনা, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাতি এবং ল্যাংড়া আম বিদেশে রপ্তানির উপযোগী করে উৎপাদন করেন।জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা ও হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো শুরু হয়েছে।৬ জুন থেকে নামবে ল্যাংড়া।কয়েকদিন পর এসব আম বিদেশে পাঠানো শুরু হবে।
রাজশাহী থেকে এ বছর ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হলে তিন কোটি টাকা পাবেন চাষিরা।রপ্তানি করতে হলে রপ্তানিকারকদের আম ঢাকায় সেন্ট্রাল প্যাকেজিং হাউজে নিতে হয়।সেখানে আমের মান যাচাই করে গুণগত প্যাকেটিং হয় যাতে আম বেশি সময় ভাল থাকে।তারপরই তা রপ্তানির জন্য ছাড়পত্র পায়।রাজশাহীতে এ বছর ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে।
এসব বাগানে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে।আর এই আম নিয়ে রাজশাহীর অর্থনীতিতে যোগ হতে পারে ৯০০ কোটি টাকা।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) উত্তম কুমার কবিরাজ বলেন, ‘গতবছর চাষিরা রপ্তানি করা আমে কেজিপ্রতি দাম পেয়েছিলেন ৯০ টাকা।
এবার ফলন একটু কম বলে দাম বেশি।এখনই বাজারে ভাল আম ৬০ টাকা কেজি।সুতরাং, সব চাষির আম যদি রপ্তানি না-ও হয়, সেক্ষেত্রেও তাঁরা ভাল দাম পাবেন।কারণ, ব্যাগিং করা ফ্রেশ আমের দাম এমনিতেই বেশি হয়।তবে এবার কোভিডের সংক্রমণ না থাকায় বেশি পরিমাণে আম রপ্তানি করা যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।