সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

গত দশ বছর ধরে মিথ্যা’ মামলার ঘানি টানছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

আপডেটঃ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- রাজশাহীর বীর মুক্তিযোদ্ধা গত ১০ বছর ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের এক মামলার ঘানি টানছেন।মামলার হাজিরা দিতে দিতে তিনি এখন ক্লান্ত।এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দাবি, মামলাটি মিথ্যা।জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় শত্রুতা করে একই গ্রামের মাদক কারবারি তাঁকে ফাঁসিয়েছেন।তিনি এ মামলা থেকে মুক্তি চান।এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মো. মনজুর রহমান (৭০)।রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি।তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গোদাগাড়ী উপজেলা শাখার সাবেক সহকারী কমান্ডার (ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক)।মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তির আকুতি জানিয়ে গত শনিবার (১৭ ফ্রেরুয়ারী) দুপুরে তিনি রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।লিখিত বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর রহমান জানান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যাবার জন্য ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বাসে চড়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন।

বাসে তার পেছন দিকে বসেছিলেন একই গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম।তার কাছে একটি বড় ট্রাভেল ব্যাগ ছিল।বাসটি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে সাদাপোশাকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাঁচজন সদস্য গাড়িটির গতিরোধ করেন।এরপর একজন লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তি গাড়ির ভেতরে ঢোকেন।এই ব্যক্তিটি ছিলেন দালাল।

তিনি সরাসরি মনজুর রহমানের সামনে এগিয়ে দাঁড়ান এবং ট্রাভেল ব্যাগ খুলে তন্ন তন্ন করে খোঁজেন।কিন্তুব্যাগে কাগজপত্র ছাড়া কিছুই পাননি।এরপর বাসের পেছন দিকে বসে থাকা রবিউলের ব্যাগ তল্লাশি করলে ফেনসিডিল পাওয়া যায়।এ সময় রবিউলকে গাড়ির ভেতর থেকে নিচে নামানো হয়।পরে ওই দালাল বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর রহমানকেও বাস থেকে নামিয়ে আনেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুর রহমান বলেন, এই ফেনসিডিলের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না।কিন্তু রবিউলের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকার কারণে সে আমাকেও ফাঁসিয়ে দেয় বলে, ওই ফেনসিডিলের সঙ্গে নাকি আমারও মালিকানা আছে।আমি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকদের বলি- আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।দেশকে ভালবেসে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি।

সেই দেশের ক্ষতি করতে আমি এই অবৈধ ব্যবসা করতে পারি না।আমি তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত সনদপত্রের ফটোকপি দেখাই।একজন উপ-পরিদর্শক পদের লোক সনদপত্রটি পড়ে তাৎক্ষণিকভাবে টুকরো টুকরো ছিঁড়ে ফেলে দেন।আর রেগে গিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার নাম শুনলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়।

মনজুর রহমান জানান, সেদিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক পদের একজন কর্মকর্তা তার প্যান্টের পকেট থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেন।আমাকে মামলায় না জড়ানোর অনুরোধ করলে তারা আমার কাছে ৪ লাখ টাকা দাবি করেন।টাকা না দিতে পারার কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন উৎসাহী হয়ে আমাকে মামলায় জড়ান।

তিনি বলেন, রবিউলের ব্যাগে মোট ৬০ বোতল ফেনসিডিল ছিল।আমাকে মামলায় জড়াতে অধিদপ্তরের লোকেরাই তাদের কাভার্ড ভ্যান থেকে দুটি ব্যাগ আনে।দুই ব্যাগেই ২৫টি করে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে আমার আর রবিউলের কাছে ব্যাগ দুটি পাওয়া গেছে দেখিয়ে মামলা করে।আর ১০টি ফেনসিডিল দেয়া হয় ওই দালালকে।

ওই সময় আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া টাকা আমি ফেরত পাইনি।২০২০ সালে আসামি রবিউল ইসলাম মারা গেছেন।তিনি আরও জানান, সেদিন মনজুর ও রবিউলকে দুপুরে নগরীর মতিহার থানায় সোপর্দ করেন মাদকদ্রব্যের কর্মকর্তারা।পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।তিনমাস হাজতে থাকার পর জামিনে বের হন।

তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাটি রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে চলমান।মামলা নম্বর-৪৯৯।২০১৪ থেকে ২০২৪-এই দশ বছরে হাজিরা দিতে দিতে তিনি নিঃশ্ব-সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন।এই মামলার কারণে বৃদ্ধ বয়সে তিনি সামাজিক ভাবে প্রতিনিয়ত হেয়-প্রতিপন্ন হন।তিনি এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান।

মনজুর রহমান বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য অস্ত্র তুলে নিয়ে আমি ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান ও ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর অধীনে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করি।সেই দেশে ১০ বছর ধরে আমাকেই মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এই মিথ্যা মামলা থাকার কারণে লজ্জায় আমার আত্মহত্যা করার ইচ্ছে করে।কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে তা পারি না।মনজুর রহমান সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার কষ্টের কথা পৌঁছালে আমি ন্যায় বিচার পাব।

তিনি তাঁর নির্বাহী আদেশের বলে এই মামলা থেকে আমাকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন।তাহলে আমি আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারব।তা না হলে কষ্ট নিয়েই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে।

IPCS News : Dhaka : বাবুল : রাজশাহী।