সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

কৃষি প্রনোদনা না পাওয়ায় তলানিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ

আপডেটঃ ৫:২২ অপরাহ্ণ | মার্চ ৩১, ২০২২

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- কৃষি প্রণোদনা না পাওয়া, প্রশিক্ষণের অভাব, কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকিতে গাফিলতি, নিম্নমানের বিজ।সব মিলিয়ে তালগোল সূর্যমুখী ফুল চাষে।তার কারনে এই বছর রাজশাহী জেলায় গত বছরের তুলনায় এবছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ জমিতে।গত বছর (২০২১) থেকে রাজশাহীতে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে।শুরুতে সূূর্যমুখি চাষের জন্য কৃষকদের প্রণোদনা দেয় সরকার।তাতে রাজশাহী জেলায় ১৫৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়।সরকার এবছর (২০২২) কৃষকদের প্রণোদনা দেয়নি।তাই কমেছে সূর্যমুখির চাষ ধারণা কৃষি কর্মকর্তাদের।কৃষকরা বলছেন-সূর্যমুখি চাষের ভালো-মন্দ এখনও বুঝে উঠতে পারেনি তারা।গত বছর বিলম্বে বীজ পেয়েছেন তারা।সেই সঙ্গে তড়িঘড়ি প্রশিক্ষণ, ঠিকঠাক শিখানো হয়নি চাষিদের।

ফলে সূর্যমুখীর চাষের বিষয়টি চাষীদের কাছে তেমন পরিস্কার না।তাই এ বছর কমেছে সূর্যমুখীর চাষ।কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন-গত বছর সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সরকারি প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ দেওয়া হয়।তাই অনেক কৃষক এই ফসলটি চাষ করেছিলেন।এবছর রাজশাহী জেলায় ৩৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়েছে।

বছরের তুলনায় এবছর ১১৫ হেক্টর কম জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।সেই হিসেবে তিন ভাগের একভাগের কম জমিতে চাষ হয়েছে সূর্যমুখীর।এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে-সূর্যমুখি চাষের শুরুর বছরে (২০২১) বাগমারায় ৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়।কিন্তু এবছর (২০২২) চাষ হয়েছে মাত্র ৫ হেক্টর জমিতে।৫৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়নি সূর্যমুখির।

কৃষকরা অন্য ফসল চাষ করেছেন ওইসব জমিতে।এ ব্যাপারে বাগমারা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘সূর্যমুখী থেকে তেল হয়, সরিষা থেকেও তেল হয়।এবছর সরিষার বেশি চাষ হয়েছে বাগমারায়।এই উপজেলায় ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।এছাড়া এবছর সূর্যমুখী চাষে প্রণোদনা না পাওয়ায় চাষিরা সূর্যমুখী কম চাষ হতে পারে এটিও কারণ হতে পারে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে- ২০২০-২১ মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৫৪ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়।জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে বাগমারায় সবচেয়ে বেশি এই ফসলের চাষ হয়।এই উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়।

এছাড়া পবায় ২৪ হেক্টর, তানোরে ১৪ হেক্টর, মোহনপুরে ৫ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৩০ হেক্টর, দুর্গাপুরে ২ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৩ হেক্টর, চারঘাটে ৬ হেক্টর ও বাঘায় ১০ হেক্টর জমিতে এই সূর্যমুখীর চাষ হয়।চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ৩৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়।

এবছর উপজেলার গোদাগাড়ীতে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে।এই উপজেলায় ৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়েছে।এছাড়া উপজেলাগুলোর মধ্যে পবায় ৫ হেক্টর, তানোরে ২ হেক্টর, মোহনপুরে ৫ হেক্টর, বাগমারায় ৫ হেক্টর, দুর্গাপুরে ৫ হেক্টর, পুঠিয়ায় ৩ হেক্টর, চারঘাটে ২ হেক্টর ও বাঘায় ৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

দুর্গাপুরের চাষি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ইচ্ছে ছিল ভুট্টা চাষের।কৃষি অফিসে গেলে-তারা সূর্যমুখী চাষের পরামর্শ দিল।তাদের পরামর্শে চাষ করি। এই সূর্যমুখি ২৫ বছর আগে জমিতে চাষ করেছিলাম।তার পরে বিভিন্ন কারণে আর চাষ করা হয়নি।তিনি বলেন, এবছর তিন বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখির চাষ করেছি।

কৃষি অফিস থেকে অফিসাররা দেখে গেছেন, তারা বলেছেন ফলন ভালো হবে।কিন্তু বাতাসে অনেক গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে।মোহনপুরের এক কৃষক জানান, গত বছর সূর্যমুখির চাষ করেছিলাম।কৃষি অফিস সার, বীজ দিয়েছিল প্রণোদনা হিসেবে।কিন্তু এই বছর দেয়নি।তাই আমিসহ অনেক কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করেনি।

গত বছরের মতো এবছর কৃষকদের সাথে কৃষি অফিসের যোগাযোগ ও প্রণোদনা চালু থাকলে অনেকেই নতুন করে এই ফসলের চাষ করতো।রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা জানান, সূর্যমুখীর তেল ও বীজের উপকারিতা রয়েছে।সূর্যমুখীর ক্ষুদ্র বীজগুলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান।

এছাড়া ভিটামিন ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম এর মত খনিজ উপাদান রয়েছে।তিনি বলেন, সূর্যমুখির তেল খুব ভালো।সূর্যমুখি ফসল জমিতে বেশি দিন থাকে।তবে উৎপাদনের দিক থেকে সরিষার চেয়ে সূর্যমুখিতে বেশি।এক বিঘা জমিতে সরিষা ফলন ভাল হলে ৬ মণ হয়।আর সূর্যমুখি প্রায় ১০ মণ।

সরিষা জমিতে থাকে ৮৫ দিন ও সূর্যমুখি থাকে ১২০ দিন।রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তৌফিকুর রহমান জানায়, এই মৌসুমে সূর্যমুখীর কম চাষ হয়েছে।কারণ চাষীরা প্রণোদনা পায়নি।তবে তুলনামূলক ভালো চাষ হয়েছে।আগামি বছর এর চাষ আরো বাড়তে পারে।

IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।