সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

কলমাকান্দা হানাদার মুক্ত দিবসে উপজেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠান বয়কট গণমাধ্যম কর্মীদের

আপডেটঃ ১২:১২ অপরাহ্ণ | ডিসেম্বর ০৮, ২০২৪

নিউজ ডেস্কঃ

নেত্রকোনা:- ৭ ডিসেম্বর নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত দিবস।১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে কলমাকান্দাকে হানাদার মুক্ত করেছিলেন।এরমধ্যেই পূর্ণ হয়েছে হানাদার মুক্তের ৫৩ বছর।

এই দিবসকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচী বয়কটের করেছে উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যম কর্মীগণ।দিবসটিকে ঘিরে শহীদ বেদীতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হলেও রাষ্ট্র ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষে উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হয়নি শ্রদ্ধাঞ্জলী।এছাড়াও ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ফ্যাসিস্ট দোসররা আত্মগোপনে থাকলেও নবাগত ইউএনও কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থিত লোকজনসহ আত্মীয় স্বজনের যাতায়াত করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়,এই দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ শনিবার ইউএনওর কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভার আয়োজন করে।কিন্তু ৯টার দিকে অনুষ্ঠান শুরুর ১০-১৫ মিনিট আগে উপজেলা প্রেসক্লাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মোবাইল ফোনে আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয়টি জানানো হয়।এদিকে উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের দাবি এ ধরনের অনুষ্ঠান স্থানীয় ও রাষ্ট্রের পক্ষে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ পালিত হয়।  বিগত দিনে অনুষ্ঠান আয়োজনের এক-দুই দিন পূর্বে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান-সূচী সম্পর্কে প্রেসক্লাবকে অবগত করা হতো।কিন্তু এইবার নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলোচনা অনুষ্ঠান শুরুর ১০-১৫ মিনিট পূর্বে মোবাইলের মাধ্যমে অবহিত করায় এতে প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দদেরকে এক প্রকারই অবজ্ঞাই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কলমাকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ শামীম বয়কটের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,আজ (শনিবার) সকালে ৮.৪৭ ঘটিকায় মুঠোফোনে অনুষ্ঠানের কথা আমাকে জানানো হয়।তখন অনুষ্ঠানের সময় জানতে চাইলে ইউএনও বলেন সকাল ৯টায় শুরু হবে।অনুষ্ঠান শুরুর ১০-১৫ মিনিট আগে অবগত করা যা উপজেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে দায়সাড়া ভাবে জানানোর সামিল বলে মনে করছি।প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের জনগণের নিকট জবাবদিহীতা থাকা সত্ত্বেও ইউএনও’র ক্ষেত্রে তা ব্যত্যয় ঘটছে। 

তিনি আরও জানান,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দায়িত্বে আছেন ইউএনও মহোদয়।দুঃখের বিষয় হচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড পক্ষ থেকে মুক্ত দিবসে কোন পুস্পস্তবক অর্পণের মতো শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়নি শহীদ বেদীতে।বিগত বছরগুলোতে হানাদার মুক্ত দিবসে পুস্পস্তবক অর্পণ করতে দেখিছি।

কলমাকান্দা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল পাঠান জানান,নবাগত ইউএনও কলমাকান্দায় যোগদানের পর আওয়ামীলীগের নেতাদের উপজেলার অফিসগুলোতে আনাগোনা বেড়ে গেছে।শুনেছি কলমাকান্দা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন আজাদ ও সাবেক সহ-সভাপতি মরহুম সুলতান গিয়াসউদ্দিন তারা দুজনে ইউএনও ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাতের আত্মীয় হন।

কলমাকান্দা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুইবারের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার দায়িত্বপালনকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.আব্দুল জব্বারের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর ইউএনও’র আয়োজনে মুক্ত দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শ্রদ্ধাঞ্জলী, র‌্যালী ও আলোচনা সভা এসব কর্মসূচী পালন করা হতো এবং হালকা আপ্যায়নের ব্যবস্থা ইউএনও’র পক্ষ থেকেই করা হতো।

এ ব্যাপারে ইউএনও ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত জানান,“দিবসটিকে ঘিরে র‌্যালী ও আলোচনা সভা করা হয়েছে।” রাষ্ট্রের পক্ষে ও পদাধিকার বলে আপনি (ইউএনও) উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আসলে এখানে কিভাবে করা হয় আমার জানা নেই।পুস্পস্তবক অর্পণ করা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছিলাম তারা আলোচনা সভা করতে বলেছে।আমি ফুলের কথা বললে মুক্তিযোদ্ধারা বললেন প্রয়োজন নেই।” আ.লীগের লোকজনসহ আত্মীয় স্বজন আপনার কার্যালয়ে যাতায়াত করেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে ইউএনও বলেন, “আমি তো তাদেরকে চিনিই না।”

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসকে ব্যাপারটি অবগত করা হলে তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিবে এটাই নিয়ম।আত্মীয়-স্বজন বাসায় আসতেই পারে।তবে অফিসে যাতায়াতের বিষয়টি অবগত করে ভালই করেছেন।গণমাধ্যমকর্মীদের অনুষ্ঠান বয়কটের বিষয়ে ডিসি বলেন,অনুষ্ঠান বয়কট করা যাবে না।ইউএনও’র সাথে কথা বলছি।এর কিছুক্ষণ পর ইউএনও’র সাথে কথা বলে জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রতিবেদককে জানান,এরআগে কলমাকান্দাতে এধরনের কোন প্রোগ্রাম হয় নাই্।গতকাল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ইউএনও’র মিটিং করেছে।তারা ইউএনও’কে ফুল দিতে না করেছেন।সবাই আলোচনা করে ফুল দেওয়ার মতামত দিলে সেটা অবশ্যই ইউএনও পালন করতেন।

IPCS News : Dhaka : শহীদুল ইসলাম : নেত্রকোনা।