উদ্বোধনের জন্য প্রায় প্রস্তুত যমুনা রেলসেতু চলবে ৮৮ ট্রেনের সাথে মালবাহী ট্রেন
আপডেটঃ ১২:০৪ অপরাহ্ণ | অক্টোবর ৩০, ২০২৪
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- প্রায় শেষ যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ।সম্ভাব্য আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ হলেই সময় নির্ধারন হবে সেতুটি উদ্বোধনের।প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটি প্রস্তুত করে রাখা হবে উদ্বোধনের জন্য।তবে কবে নাগাদ এই সেতুতে ট্রেন চলবে তা সুস্পস্ট করে জানাননি রেল কতৃপক্ষ।বর্তমানে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু।এ সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে।সেতুটিতে যাত্রীবাহী ট্রেন চললেও কোনো পণ্যবাহী ট্রেন চলতে পারে না।বিদ্যমান বহুমুখী সেতুটির উজানে নির্মিত স্বতন্ত্র রেল সেতুটি চালু হলে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮৮টি ট্রেন চলতে পারবে।একই সাথে পণ্যবাহী ট্রেনও চলাচল করতে পারবে।সব মিলিয়ে যমুনা রেল সেতু নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ১২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ রয়েছে।২০১৬ সালের জুনে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে (এক বছর ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ)।অন্যদিকে চলতি বছরের আগস্টে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল শুরুর লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলেও নির্মাণকাজে ধীরগতির জন্য, শেষ হচ্ছে ৫ মাস পর।
২০১৬ সালে প্রকল্পটি অনুমোদিত হলেও মাঠ পর্যায়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ আগস্ট।সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দুটি অংশে।সিরাজগঞ্জ প্রান্তের ১ নম্বর পিলার থেকে মাঝনদীর ২৩ নম্বর পর্যন্ত পশ্চিমাংশের কাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইএইচআই ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিস্টেমস ও সুমিতোমো মিত্সুই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার (আইএইচআই-এসএমসিসি)।
অন্যদিকে মাঝনদীর ২৪ পিলার থেকে টাঙ্গাইল প্রান্তের ৫০ নম্বর পিয়ার পর্যন্ত পূর্বাংশের কাজ বাস্তবায়ন করছে আরেক জাপানি ঠিকাদার ওবায়েশি করপোরেশন, টিওএ করপোরেশন ও জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের জয়েন্ট ভেঞ্চার (ওটিজে)।রেলওয়ের সঙ্গে ঠিকাদারদের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।
তবে এই সময়ের মধ্যে কেবল পূর্বাংশের কাজ সম্পন্ন করতে পারে ওই অংশে নিয়োজিত ঠিকাদার।পশ্চিমাংশের কাজ এখনো বাকি।প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পশ্চিমাংশের কাজের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম শুরুতে মিয়ানমার থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।কিন্তু কাজ শুরুর পর দেশটিতে ‘গৃহযুদ্ধ’ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় তাদের এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হয়।
নির্মাণ সরঞ্জাম পরবর্তী সময়ে অন্য দেশ থেকে সংগ্রহ করায় এ অংশের কাজে কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়।এ কারণে পশ্চিমাংশের ঠিকাদারকে কাজ সম্পন্ন করতে ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রধান কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতু নির্মাণ।
সেতু দুই পাশে দশমিক শূন্য ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ), ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ অ্যামব্যাংকমেন্ট এবং লুপ সাইডিংসহ ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ।এর পাশাপাশি সেতুর দুই পারের স্টেশন ভবন আধুনিকীকরণ ও ইয়ার্ড রিমডেলিং, সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, রেলওয়ে ব্রিজ মিউজিয়াম নির্মাণ, সেতু রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিস ও আবাসন নির্মাণ এবং নদীশাসন কাজ করা হচ্ছে।
প্রকল্প কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানাগেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ।৫০টি পিলারের সবকটি তৈরি হয়েছে।একইভাবে ৪৯টি স্প্যানের সবই স্থাপিত হয়েছে।বসানো হয়েছে রেলপথ।দুই পাশের স্টেশন ভবন, প্লাটফর্ম ও শেড নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৮২ শতাংশ।স্টেশন ইয়ার্ডসহ সেতুর ওপর এবং অ্যামব্যাংকমেন্টে ট্রাক (রেলপথ) নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ।
দুই স্টেশনে সিগন্যালিং কাজের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ।রেলওয়ে সেতুটির প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় সব কাজ শেষ করে এনেছি।শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ চলমান।আগামী ২২ ডিসেম্বরের আগেই টুকিটাকি সব কাজ শেষ হবে।এই সময়ের মধ্যেই আমরা টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিংয়ের কাজগুলো করব।
রেলপথ পরিদর্শন অধিদপ্তরের (জিআইবিআর) অনুমোদন নেব।সবকিছু করে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা সেতুটি ট্রন চলাচলের জন্য প্রস্তুত বা ফিট রাখবো।সরকার ও রেল কতৃপক্ষ চাইলে ২২ ডিসেম্ব বা যখন চাইবে উদ্বোধন করতে পাররবে।
IPCS News : Dhaka: আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।