সোমবার ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবাদ শিরোনামঃ

উচ্চ দামের সুযোগে অপরিপক্ক টমেটা বিক্রি: লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা

আপডেটঃ ৬:০৯ অপরাহ্ণ | নভেম্বর ২৭, ২০২৪

নিউজ ডেস্কঃ

রাজশাহী:- টমেটোর রাজধানী রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ জেলার বাজার এগুলোতো টমেটার দাম চড়ার কারনে বিক্রি হচ্ছে অপরিপক্ক টমেটা।এতে করে লাভবান হচ্ছে কৃষক। জানাগেছে খেতেই প্রতিমণ কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা মন দরে।আগাম হাইব্রিড জাতের এসব টমেটো চাষে মৌসুমের আগেই পরিপক্ক হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। ফলে এই উপজেলায় প্রতিবছর বাড়ছে হাইব্রীড টমেটোর চাষ। টমেটোর রাজধানী খ্যাত জেলার গোদাগাড়ীতে চাষ হয় উন্নতমানের দেশি-বিদেশি টমেটা। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়  এই অঞ্চলের কৃষকদের টমেটোর চাষে আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় টমেটোর চারা রোপন  চলছে। চারা লাগানোর মৌসুম শেষে  টমেটো চাষের লক্ষমাত্রা জানা যাবে। তবে বর্তমানে জেলায় প্রায় পৌনে ৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গোদাগাড়ীতে টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে। রাজশাহী জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যাানুযায়ী রাজশাহী জেলায় ২০২৩ সালে টমেটোর চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শুধু গোদাগাড়ীতে টমেটোর চাষ হয়েছে ২ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ২০২২ মৌসুমে ৩ হাজার ১৫ হেক্টর ও ২০২১ মৌসুমে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল পুরো জেলাজুড়ে।

গোদাগাড়ীর টমেটো চাষিরা বলছেন, এখন টমেটোর বাজার ভালো।এছাড়া মুখোরোচক নতুন সবজি হিসেবে বাজারে এর চাহিদা প্রচুর। তাই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সরজমিনে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা কাঁচা টমেটো জমি থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষকের বাজারের খরচ নাই। সবেমাত্র বাজারে কাঁচা-আধাপাকা টমেটো বিক্রি শুরু হলেও ২৭ নভেম্বর বুধবার কৃষকের জমিতে প্রকারভেদে ১৯০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা মণ দরে কেনাবেচা হচ্ছে। সেই হিসেবে প্রতি কেজি টমেটোর দাম পড়ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

গোদাগাড়ী সদরের টমেটো ব্যবসায়ী মাসুম বলেন, সবেমাত্র গত সপ্তাহ থেকে কাঁচা টমেটো কেনা বেচা শুরু হয়েছে। এগুলো টমেটো স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এখনও টমেটো পরিপক্ক হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হবে। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, জেলার মধ্যে সবচাইতে বেশি এই উপজেলাই টমেটোর চাষ ও উৎপাদন হয়। তাই স্থানীয়ভাবে গোদাগাড়ীকে ‘টমেটোর রাজ্য’ বলা হয়। জানাগেছে,সাধারণত আউশ ধান কেটে নেওয়ার পরে কৃষকরা জমি প্রস্তুত শেষে টমেটো চাষ শুরু করে।

এই উপজেলায় ১৭ থেকে ২০ জাতের টমেটোর চাষবাদ হয়।যার মধ্যে বেশির ভাগ হাইব্রিড জাতের। তবে অন্য যেকোনো মাঠ ফসলের চেয়ে টমেটো চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বেশি। এই উপজেলায় টমেটো বিক্রির সঙ্গে সরাসরি কৃষকরা জড়িত। ফলে কৃষকদের কাছে দিন দিন অর্থকরী ফসল হিসেবে রূপ নিয়েছে টমেটো। এছাড়া টমেটো কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ীভাবে দুই থেকে আড়াই মাসের জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়।

গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রামের চাষি মকবুল বলেন, গত ৭-৮ বছর ধরে এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর চাষ হচ্ছে। টমেটো চাষের পর বিক্রি করার সুবিধা ভালো। ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই টমেটো কিনে নিয়ে যায়। কৃষককে টমেটো হাটে নিয়ে যেতে হয় না। এতে অনেক টাকা ও সময় বাঁচে কৃষকের। তিনি আরো বলেন, এবছর তুলনামূলক টমেটোর ফলন কম। এবার তেমন ভালো ফলন হয়নি। তবে বাজারে দাম ভালো আছে। সাধারণত প্রতি হেক্টর জমিতে টমেটোর উৎপাদন ধরা হয় প্রায় ২৫ টন।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহ থেকে কাঁচা টমেটো বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ১৯০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন ভালো দাম রয়েছে বাজারে। এবছর গতবছরের তুলনায় ৪৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে টমেটোর চাষ বেড়েছে। এবছর ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর ও গতবছর ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটা অতিক্রম করেছে। এখনও জমিতে কৃষকরা টমেটোর চারা বপণ করছেন। টমেটো চাষের জমি আরও বাড়বে। এই উপজেলায় ২ হাজারের বেশি কৃষক টমেটো চাষের সঙ্গে জড়িত। এবছর পোকামকড়ের উপদ্রব তেমন ছিল না। তাই টমেটোর ভালো ফলন হয়েছে।

IPCS News : Dhaka: আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।