“আলোচিত রাবি শিক্ষক ড. তাহের হত্যা” শিক্ষক মহিউদ্দিনসহ ২ জনের ফাঁসির প্রক্রিয়া শুরু
আপডেটঃ ১২:৩৭ অপরাহ্ণ | জুলাই ০৯, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামির প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এসে পৌঁছেছে।জেল কোড অনুযায়ী, চিঠি হাতে পাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের দিনের মধ্যে যে কোনো দিন ফাঁসি কার্যকর করা হবে।মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামিকেই কনডেম সেলে রাখা হয়েছে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে।রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন জানান, প্রাণভিক্ষা নাকচের চিঠি গত বুধবার ডাকযোগে এসে পৌঁছায়।কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।প্রায় ছয় মাস আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন আসামিরা।সে আবেদন গত মাসে রাষ্ট্রপতি নাকচ করেন।এর মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে চলমান সব দাপ্তরিক ও আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়।
এখন জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।রাজশাহীর ডিআইজি (প্রিজন্স) কামাল হোসেন বলেন, জেল কোড অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করার পর আত্মীয়-স্বজনকে শেষ দেখা করার জন্য খবর দেওয়া হয়।নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে আছেন তারা।
নিহত অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে ও এই মামলার আইনজীবী সেগুফতা আহমেদ বলেন, আমার বাবাকে হত্যার পর খুনিরা ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রেখেছিল।বাবার লাশটাও সেদিন দেখতে পারিনি।হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিতে নিজেই আইনি লড়াইয়ে ছিলাম।এখন আর আইনি কোনো বাধা নেই।আমরা রায় বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মার্চ এই আসামির ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করেন সুপ্রিমকোর্ট।নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় দেওয়া হয়েছিল তাই বহাল থাকে আপিলে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও।এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা ছিল না তাদের।
এরপরও দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা।যদিও উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরবর্তী সময়ে সে আবেদনও খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির শিক্ষকদের পশ্চিমপাড়া আবাসিক কোয়ার্টার থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক তাহের।বাসাটিতে তিনি একাই থাকতেন।
কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম তার দেখাশোনা করতেন।পরদিন বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের গলিত মরদেহ।৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
এদিকে অধ্যাপক তাহেরের করা একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মহিউদ্দিন ও রাবির ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তারা বলেন, অধ্যাপক তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন।একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন।কিন্তু বাস্তব কারণে অধ্যাপক তাহের তা দিতে অস্বীকার করেন।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মহিউদ্দিন হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।
বালিশ চাপায় খুনের পর বাড়ির ভেতরে থাকা চটের বস্তায় ভরে অধ্যাপক তাহেরের লাশ বাসার পেছনে নেওয়া হয়।লাশ গুমের জন্য জাহাঙ্গীররের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুলের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালামকে ডেকে আনা হয়।তাদের সহায়তায় বাসার পেছনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে অধ্যাপক তাহেরের লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ১৭ মার্চ শিবির নেতা মাহবুব আলম সালেহীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসি ও দুজনকে খালাস দেন।দণ্ডিত অন্যরা হলেন জাহাঙ্গীরের ভাই নাজমুল ও তার স্ত্রীর ভাই সালাম।তবে বিচারে খালাস পান ছাত্রশিবিরের নেতা সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সি।
পরবর্তীতে দণ্ডপ্রাপ্তরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন।আপিল বিভাগ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের রায় বহাল রাখলেও নাজমুল ও সালামের রায় কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন।কিন্তু তাদের দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ই বহাল রাখেন।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।