আপদ জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা এখন সম্পদ
আপডেটঃ ৫:৫১ অপরাহ্ণ | জুন ০১, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী:- কচুরিপানা একটি জলজ উদ্ভিদ।কচুরিপানা মুক্ত ভাবে ভাসমান বহু বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ।এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা।সাতটি প্রজাতি আছে এবং এরা মিলে আয়কর্নিয়া গঠন করেছে।চকচকে এবং ডিম্বাকৃতি পাতা বিশিষ্ট কচুরিপানা উপর পৃষ্ঠের এক মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।একটি পুষ্পবৃন্ত থেকে ৮-১৫ টি আকর্ষণীয় ছয় পাপড়ী বিশিষ্ট ফুল ফোটে।কচুরিপানা দেখতে গারো সবুজ হলেও এর ফুল গুলো সাদা পাপড়ির মধ্যে বেগুনি ছোপযুক্ত এবং মাঝখানে হলুদ ফোটা থাকে।সাদা এবং বেগুনি রঙের মিশেলে এক অন্যরকম আবহাওয়া তৈরি করে সাদা পাথরের স্থলে কোথাও হালকা আকাশী দেখতে পাওয়া যায়।পুরোপুরি ফুল ফোটার আগে একে দেখতে অনেকটা নলাকার দেখায়।পাপড়ি গুলোর মাঝখানে পুংকিশোর দেখতে পাওয়া যায়।প্রায় সারা বছরই কচুরি ফুল দেখতে পাওয়া যায়।প্রকৃতি প্রেম জাগ্রত করে পুকুর ভরা কচুরি ফুল।
যেন প্রদীপ জ্বলছে ময়ূরের পালকের মতো দেখতে কচুরিপানা ফুল।গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত সাধারণ একটি জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানা।বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক এলাকায় নদনদী, পুকুর, জলাশয়, হাওর বা নিম্ন অঞ্চলের সচরাচর কচুরিপানা দেখতে পাওয়া যায়। দক্ষিণ পাকিস্তানের সিদ্ধের প্রাদেশিক ফুল।কোন কোন অঞ্চলে এই উদ্ভিদকে কস্তুরীও বলে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এর ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে জজ মর্গ্যান নামে ব্রাজিলিয়ান এক পাট ব্যবসায়ীর বাংলায় নিয়ে এসেছিলেন আমাজন এলাকার এই উদ্ভিদটি।কচুরিপানার অর্কিড সদৃশ্য ফুল দেখে সবাই মুগ্ধ হয়।কচুরিপানা খুবই দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে।এটি প্রচুর পরিমাণে বীজ তৈরি করে যা তিরিশ বছর পরও অঙ্কুরোদগম ঘটাতে পারে।
কচুরিপানা রাতারাতি বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রায় দুই সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে যায়।ধারণা করা হয় কচুরিপানার অর্কিড সদৃশ্য ফুলের সৌন্দর্য প্রেমিক এক ব্রাজিলীয় পর্যটক ১৮শ শতাব্দীর শেষ ভাগে বাংলায় কচুরিপানা নিয়ে আসেন।তারপর তা এত দ্রুত বাড়তে থাকে যে ১৯২০ সালের মধ্যে বাংলায় প্রায় প্রতিটি জলাশয় কচুরিপানায় ভরে যায়।
নদ নদীতে চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে আর জলাভূমির ফসল আমন ধান ও পাট চাষ অসম্ভব হয়ে পড়ে।ফলে বাংলার অর্থনীতিতে স্থগিত দেখা দেয়। ব্রিটিশ ভারতের কচুরিপানায় একমাত্র উদ্ভিদ যা দমনের জন্য কচুরিপানা নির্মূল আইন ১৯৩৬ প্রণীত হয়।কচুরিপানা আমাদের বেশ কিছু উপকারও করে থাকে।এটি এখন প্রধানত সার হিসেবে অধিক ব্যবহৃত হয়।
বর্ষাকালে বন্যা আক্রান্ত অঞ্চলে গবাদি পশুর খাদ্য যোগায়।হাওড়া অঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় বাঁশ দিয়ে আটকিয়ে রেখে ঢেউয়ের আঘাত থেকে ভিটামাটি রক্ষায় ব্যবহৃত হয়।এছাড়া পানিতে স্তূপীকৃত পচা চুরিপানার উপরে ভাসমান ভাবে নানা রকম শাকসবজিও ফলানোফলে চাষিরা পানিতে ভাসমান কচুরিপানার স্তূপ গুলোকে কৃষিকাজে ব্যবহার করে।
কচুরিপানাকে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে।কচুরিপানা থেকে তৈরি হচ্ছে, টব, ফুলদানি, পাটি, ট্রে, ফুলঝুড়ি, ডিম দেখা পাত্র, ডাইনিং টেবিলের ম্যাটসহ প্রায় বিশ ধরনের পণ্য।কচুরিপানা প্রকৃতি ও মানুষের জীবনে কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও অসাধারণ অনেক কিছু কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।এর ব্যবহার যত বাড়বে দেশের অর্থনীতি তত উন্নত হবে।
IPCS News : Dhaka : আবুল কালাম আজাদ : রাজশাহী।