অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির নানা ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ডে’ উত্তপ্ত রুয়েট ক্যাম্পাস
আপডেটঃ ৯:১২ অপরাহ্ণ | জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
নিউজ ডেস্কঃ
রাজশাহী ব্যুরো:- ভিসি’র ছত্র-ছায়ায় সংগঠিত হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের অনুসারীরা, অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির নানা অনৈতিক কর্ম-কাণ্ডে অস্থির রুয়েট ক্যাম্পাস।বিএনপি-জামায়াতপন্থী’ হিসেবে পরিচিত রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ভাইস-চ্যান্সেলর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেনের নানা অনিয়ম, অনৈতিক ও বিধি বহির্ভুত কর্মকাণ্ড ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই অতিরিক্ত দায়িত্বের এই ভিসির বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক-ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যাম্পাসে সংগঠিত করে প্রগতিশীলদের কোণঠাসা করে রাখার বিস্তর অভিযোগও উঠেছে।শুধু তাই নয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ও আইন-কানুন ভঙ্গ করে অনাধিকার চর্চা, ‘যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড’ করে কয়েক মাসেই পুরো ক্যাম্পাসে এক ‘অরাজক পরিস্থিতির’ সৃষ্টি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ আগস্ট ডীনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রুয়েটে ভিসির (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পদ পাওয়ার পর পরই ১৬ আগস্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনৈতিকভাবে (যা তিনি পারেন না) বাসা বরাদ্দের নোটিশ জারি করান।ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে অধ্যাপক সাজ্জাদ এখানেই থেমে থাকেননি।
বিধি অনুযায়ী প্রফেসর কোয়ার্টার (এ-২/এ বিল্ডিং) অধ্যাপকের (গ্রেড ১ থেকে ৩) নিচের পদের (সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক) কোনো শিক্ষককে বরাদ্দ দেয়ার সুযোগ নেই।কিন্তু রুয়েটের আইন ভেঙ্গে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনৈতিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান এন্ড রিজিওনাল প্লানিং (ইউআরপি) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রফেসর কোয়ার্টার (এ-২/এ বিল্ডিং) বরাদ্দ দেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন দায়িত্ব পেয়েই পূর্ণাঙ্গ ভিসির সার্বক্ষণিক গাড়ি, ভিসির নির্ধারিত মোবাইল, ভিসির দপ্তর ব্যবহার, ভিসির নেমপ্লেট ও অনার বোর্ডে পূর্ণাঙ্গ ভিসি হিসেবে নাম ব্যবহার করছেন।
এছাড়া ভিসির মতই রেখেছেন পার্সোনাল গার্ড ও অন্যান্য সুবিধা।অথচ বিধি মোতাবেক অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির এমন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার নিয়ম নেই।শুধু তাই নয়; রুয়েটের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যানারেও পূর্ণাঙ্গ ভিসির পদবী ব্যবহার করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. সাজ্জাদের বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও ক্যাম্পাসে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক-ছাত্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠিত করার প্রচেষ্টা : রুয়েট ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন যে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক তা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলেই অবগত।
এমনকি ২০১৮-১৯ সেশনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী (পরিবর্তনের লক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী) প্যানেল থেকে রুয়েটে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন সদস্য পদে ভোট করেন।শুধু তাই নয়; জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনের সময় নগরীর মোন্নাফের মোড়ে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদের নিজ বাসায় বিএনপি-জামায়াতের সভা কিংবা মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার একাধিক অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়া দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের শক্তিশালী করারও অভিযোগ রয়েছে।দায়িত্ব নেয়ার পর রুয়েটের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ক্যাম্পাসে জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যতম সংগঠক, ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সাবেক শিবির নেতা আহসান হাবীব এবং বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠক কামাল হোসেন ইতিকে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বানিয়েছেন ডান-বাম হাত।
ক্যাম্পাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে ‘ভিসি’ অধ্যাপক সাজ্জাদ এই দুই কর্মকর্তাকেই পাঠান ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- ইতোপূর্বে কখনো ‘বুদ্ধিজীবী’ কিংবা ‘বিজয় দিবসে’ বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শহীদ মিনারে ফুল দিতো না।কিন্তু তাঁর (ভিসি) মদদে তারা এবার এসব কর্মসূচিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক ‘ভিসি’র দায়িত্ব পাওয়ার সুযোগে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোও ক্যাম্পাসে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে।২০১৯ সালের ৯ মে হিজবুত তাহরীরের পোস্টার লাগাতে গিয়ে রাজশাহী মহিলা কলেজের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রুয়েটের সিএসই বিভাগের ১২ সিরিজের শিক্ষার্থী তানভীর হোসাইন।
অথচ গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে হিজবুত তাহরীরের এই সদস্যসহ রুয়েট শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আহমেদ হোসেন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হকসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে প্রকাশ্যে মিটিং করে।সেখানে রুয়েটের সেকশন অফিসার সোহেল রানাকেও তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোহাম্মদ ইসফাক ইয়াসশির ইপু বলেন, ‘নাশকতা ও ক্যাম্পাাসকে অস্থিতিশীল করতেই সেদিন হিজবুত তাহরীর, ছাত্রদল ও শিবির সম্মিলিতভাবে প্রকাশ্যে মিটিং করেছে।
ক্যাম্পাস পরিচালনার দায়িত্বে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক থাকায় ছাত্রদল ও শিবিরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে সংগঠিত হচ্ছে।তবে তাদেরকে প্রতিহত করতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের করনীয় নির্ধারণ করবো।
ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি : অনুসন্ধানে জানা গেছে- শুদ্ধাচার কৌশল পরিকল্পনা ২০২২-২০২৩ বাস্তবায়নে গঠিত ৬ সদস্যের কমিটি গত ৬ ডিসেম্বর রুয়েটের বিভিন্ন দপ্তর/বিভাগ/শাখায় আকষ্মিক পরিদর্শন করেন।এক পর্যায়ে কমিটির সদস্যরা রেজিস্ট্রারের আওতাধীন পারিষদ শাখায় গেলে সেখানকার ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহ মো. আল বেরুনী ফারুককে অনুপস্থিত পান।
তাৎক্ষণিকভাবে ওই দপ্তরের এক কর্মকর্তা ফারুককে পরিদর্শন কমিটির উপস্থিতির বিষয়টি জানান।কিছুক্ষণ পরেই পরিদর্শন কমিটি প্রধান প্রকৌশলীর অফিসকক্ষে প্রবেশকালে আল বেরুনী ফারুক কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে করে কটূক্তি, ঔদ্ধত্য ও অশালীন আচরণসহ কমিটির কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন।
তার এমন আচরণে পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসিসহ কমিটির অন্যরা তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।কিন্তু ‘ভিসি’ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।এতে শিক্ষক সমিতিসহ প্রশাসনের অন্য কর্তা ব্যক্তিরা ‘ভিসি’র ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন।
ড. সাজ্জাদ অতিরিক্ত দায়িত্বে থেকেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেন।বিধি অনুযায়ী বিভিন্ন দিবস উদযাপন কমিটিতে কর্মচারী সমিতির প্রতিনিধি রাখার কথা থাকলেও তিনি রাখেননি।এছাড়া প্রতি বছর কর্মচারীদের নির্ধারিত পোশাকের নিয়ম মেনে টাকা দেয়ার নিয়ম থাকলেও তার নির্দেশেই এই খাতের বরাদ্দকৃত প্রায় ১২-১৪ লাখ আটকিয়ে দেয়া হয়েছে।
রুয়েট কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শুভ বলেন, বর্তমান রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন এই ঝামালা করছে।যার কারণে অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসি পোশাকের বরাদ্দকৃত টাকা দিচ্ছেন না।ড. সাজ্জাদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দৈনন্দিন ফাইল আটকিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তাঁর কারণে রুয়েটে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের চলমান প্রকল্পের অর্থছাড়ে চরম জটিলতা দেখা দিয়েছে।একারণে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ স্বাচ্ছন্দ্যে করার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্টদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
শুধু তাই নয়; সম্প্রতি অজ্ঞাতনাম ব্যক্তি/ব্যক্তিরা ‘কাফনের কাপড়’ পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে হুমকির ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা (জিডি) গ্রহণের ক্ষেত্রে ড. সাজ্জাদের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ ওঠেছে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও করা হয়নি।এই নিয়েও ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রুয়েটের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা বলেন, এই কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি দেয়ার পিছনে ড. সাজ্জাদের পরোক্ষ মদদ বা প্রশ্রয় রয়েছে।
আইনগতভাবে অযোগ্য ড. সাজ্জাদ: গত ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় রুয়েটের ফলিত বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন এই অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন প্রশাসনিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্বার্থে সাময়িকভাবে ডীনের দায়িত্বের অতিরিক্ত ভিসির দায়িত্ব প্রদান করে।
কিন্তু অধ্যাপক সাজ্জাদ প্রকৌশল শিক্ষাবিদ না হওয়ায় বিদ্যালয়য় শিক্ষক সমিতির নেতারা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।কেননা, রুয়েটের আইন-২০০৩ এর ধারা ১০ (১) মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব যিনি পাবেন তাকে অবশ্যই ‘প্রকৌশল শিক্ষা ও গবেষণায় সম্পৃক্ত একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশল শিক্ষাবিদ হতে হবে।
কিন্তু অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির এই যোগ্যতা না থাকায় গত ৭ আগস্ট রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. রবিউল আওয়াল লিখিত আকারে প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েট শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।এর আগে বিএনপি প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তাছাড়া আইনগত ভাবেও তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।যার কারণে বিএনপি-জামায়াতপন্থী যোগ্যতাহীন একজন ব্যক্তির পিছনে আমরা নেই।সঙ্গক কারণেই বিভিন্ন কর্মসূচি শুধু ড. সাজ্জাদকে বাদ দিয়ে আলাদাভাবে পালন করেছি।
অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: রুয়েট কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসি বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে উঠে-পড়ে লেগেছেন।তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের উত্থানের পদ সৃষ্টি করেছেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কর্মসূচিতে বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল বলে মনে করি।৯ শিক্ষক-কর্মকর্তা ‘কাফনের কাপড়’ পাঠিয়ে হুমকির মত ঘটনা তার কারণেই ঘটেছে।আমরা দ্রুত তার অপসারণ চাই।
রুয়েটের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান রিপন বলেন, অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়তো ওইভাবে চিন্তা করে দেখেননি।ডিনের অতিরিক্ত হিসেবে তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন এই মর্মেই তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতন্থী একজন শিক্ষককে এতোদিন (৫ মাস) ধরে রুটিন উপাচার্যের দায়িত্বে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।ভিন্ন মতাদর্শের একজনকে ৪-৫ মাস ধরে যদি এই পদে রাখা হয়, স্বাভাবিকভাবেই তার এমন ‘ইনফ্লুয়েন্স’ আসবেই।এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
এজন্য দ্রুত আওয়ামীপন্থী যোগ্য কাউকে পূর্ণকালীন ভিসি হিসেবে পদায়ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।রাজশাহী-০২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রুয়েটে প্রশাসনিক ও শিক্ষার শৃক্সক্ষলা ফিরিয়ে আনা জরুরি।সাবেক ভিসির দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিয়মিত একজন ভিসিকে রুয়েটে জরুরি ভিত্তিতে পদায়ন করা অপরিহার্য।বতর্মান সরকারবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রুয়েটে সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি।এই ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের কালবেলাকে বলেন, “রুটিন দায়িত্বের ভিসি তার দায়িত্বের বাইরে যাওয়ার কথা না।যদি রুটিন দায়িত্বের বাইরে কাজ করা প্রয়োজন হয় তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে।মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে অর্ডার হয়েছে তাকে সেভাবেই থাকতে হবে।
অনারবোর্ড, নেমপ্লেট কিংবা বিভিন্ন প্রেগামে ‘ভাইস-চ্যান্সেলর (অতিরিক্ত দায়িত্ব)’ কথা অবশ্যই লিখতে হবে।এটি অবশ্যই ভায়োলেশন। মিনিস্ট্রি জানলে তাকে শো-কোজ করার কথা।এছাড়া প্রফেসর’র কোয়ার্টার সহকারী অধ্যাপককে বরাদ্দ দেওয়াটাও অবশ্যই ‘ভায়লেশন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোছা. রোখছানা বেগম বলেন, ‘রুয়েটে শিক্ষকদের মধ্যে ইন্টারনাল কী বিষয় তা আমরা জানি না।আমরা জাস্ট অর্ডার করে দিই।নরমালি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ইন্টারফেয়ার’ করি না।যদি অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে শিক্ষকরা আমাদেরকে লিখিতভাবে জানাতে পারতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি তো অতিরিক্ত দায়িত্বের ভিসি।কোনভাবেই তিনি তার নামের পাশে পূর্ণাঙ্গ ভিসির টাইটেল লাগাতে পারেন না।জানতে চাইলে রুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটাস ফলো করতে আমাকে ভিসির গাড়ি ব্যবহার, ভিসির নামের পাশে স্বাক্ষর কিংবা দপ্তর ব্যবহার বা চেয়ারে বসতে হচ্ছে।
ভিসি হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। দায়িত্ব পালনে ব্যক্তিগতভাবে আমার সমস্যাও হচ্ছে।এক প্রশ্নের জবাবে ড. সাজ্জাদ বলেন, বাসা বরাদ্দ কমিটি আছে।কমিটি সাজেস্ট করেছে অমুক-অমুককে এই-এই বাসা বরাদ্দ দেয়া হোক।আমি সাইন করে দিয়েছি।একটি ইউনিট সংস্কারহীন অবস্থায় ছিলো।
সরকারকে সাশ্রয় করার জন্যই ওই সহকারী অধ্যাপকের নাম সেখানে ঢুকিয়ে দেয়ায় সেখানে সে উঠেছে।২০১৮ সালে বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আপনারা সেটি খোঁজ-খবর নিলেই পাবেন।আমাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ কী? আমি প্যাচ বুঝি না।
কারা কোন বিবেচনায় আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন তা উনারাই ভালো জানবেন।আমি এই দায়িত্ব কারও কাছে গিয়ে নিয়ে আসি নাই।আমার কোনো অযোগ্যতা থেকে থাকলে যারা আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে।আমি চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
IPCS News : Dhaka : আমজাদ হোসেন শিমূল : রাজশাহী।